ললিত মোদী বিতর্কে তাঁর নাম জড়ানোয় মুখ পুড়েছে দলের। আঁচ পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তিতে। কুর্সিও টলমল সুষমা স্বরাজের। তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে, এখনও তা নিশ্চিত নয়। এই পরিস্থিতিতে কাল রাষ্টপুঞ্জে বিশ্ব যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে আজ সকালে নিউ ইয়র্ক গেলেন বিদেশমন্ত্রী। এরই মধ্যে সুষমার স্বামী ও কন্যাকে সুপ্রিম কোর্টে সরকারি কৌঁসুলি হওয়ার সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে।
সব মিলিয়ে সুষমা-বসুন্ধরা কাণ্ডে কিছুতেই অস্বস্তি কাটছে না দলের। যদিও আজও বিজেপি দাবি করেছে, দল সুষমার পাশে রয়েছে। দলের বক্তব্য, সুষমা কেবল মানবিকতার খাতিরে ললিত মোদীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তা-ও তিনি ব্রিটিশ সরকারের প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন মাত্র। এ ছাড়া, সুষমার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির কোনও অভিযোগ নেই। ফলে তাঁকে সরানোর কোনও প্রশ্ন নেই। আগামী সপ্তাহে ভূমিকম্প-বিধস্ত নেপালের জন্য ত্রাণ সংগ্রহের লক্ষ্যে যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন হতে চলেছে, সেখানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার কথা সুষমার। সেই প্রসঙ্গে তুলেই বিজেপি সূত্রে আজ দাবি করা হয়, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে সুষমার উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
ললিত বিতর্ক নিয়ে অন্য আঞ্চলিক দলগুলি সে ভাবে মুখ না খুললেও, কংগ্রেস-বাম ও আপ শিবির ইতিমধ্যেই যে ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে, তাতেই সংসদের বাদল অধিবেশনে চালানো বড় চ্যলেঞ্জ হতে চলেছে সরকারের কাছে। এবং এটা বুঝে শুরু থেকেই সুষমা ও বসুন্ধরার হয়ে দল সওয়াল করতে নেমেছে। বিজেপি নেতারা বুঝতে পারছেন বাদল অধিবেশনের আগে সুষমা বা বসুন্ধরাকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিলে রক্তের স্বাদ পাবেন বিরোধীরা। তাতে বিরোধীদের আক্রমণের নিশানায় সরাসরি চলে আসবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। এবং এই তাগিদেও দুই নেত্রীর পাশে রয়েছে দল।
কিন্তু অস্বস্তির কাঁটা নির্মূল হচ্ছে না কিছুতেই। আজ নতুন অভিযোগ উঠেছে, মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার সুষমার স্বামী ও কন্যাকে বাড়তি সুবিধে পাইয়ে দিয়েছে। তথ্যের অধিকার আইনের মাধ্যমে জানা গিয়েছে, সুষমার স্বামী স্বরাজ কৌশল, মেয়ে বাঁশুরিকে সুপ্রিম কোর্টে সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ করতে বিশেষ ভাবে তদ্বির করেছিল শিবরাজ সিংহ চৌহানের সরকার। বিষয়টি নিয়ে আপাতত মুখ বন্ধ রেখেছে বিজেপি।
নতুন অস্ত্র হাতে পেয়ে উৎসাহিত আপ শিবির। বিদেশমন্ত্রী নিউ ইয়র্ক গেলেও ললিত কাণ্ডে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আজ সুষমার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান আপের শতাধিক কর্মী। আপ নেতা আশুতোষ বলেন, ‘‘সুষমা প্রধানমন্ত্রীকে না জানিয়ে কিছু করেছেন, এ কথা মেনে নেওয়া কঠিন। সুষমা ইস্তফা দিলেই বিতর্ক থামবে না। এর দায় প্রধানমন্ত্রীকেও নিতে হবে।’’ এ দিন বসুন্ধরা রাজেরও পদত্যাগ দাবি করেন আপের বিক্ষোভকারীরা।
বিজেপি ও সঙ্ঘের কাছে বসুন্ধরার বিষয়টা কিছুটা আলাদা হলেও সুষমার মতো তাঁকেও আপাতত ক্লিনচিট দিয়েছে দল। যুক্তি, বসুন্ধরা দলের নেতৃত্বের কাছে দাবি করেছেন, যে নথির ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাতে তাঁর স্বাক্ষরই নেই। বিজেপি নেতৃত্ব তাই মনে করছেন, আগামী দিনে বসুন্ধরার বিরুদ্ধে কোনও অকাট্য প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত তাঁকে সরানো ঠিক হবে না। তবে এ কথা ঠিক, বসুন্ধরাকে সরানোর জন্য দীর্ঘ সময় ধরে সক্রিয় রয়েছে আরএসএস। কিন্তু রাজস্থানে বসু্ন্ধরাকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হলে তিনি অনুগামীদের নিয়ে বিদ্রোহী হবেন এমন আশঙ্কাও রয়েছে দলে। তাঁকে সমর্থনের প্রশ্নে দল ও সঙ্ঘের মধ্যে যে দ্বিমত রয়েছে তা জানেন বসুন্ধরা নিজেও। তাই আজ রাজ্যের সব দলীয় বিধায়ক ও সাংসদকে নিয়ে বৈঠকে বসেন তিনি। ওই বৈঠকের মাধ্যমে কার্যত দলকে নিজের শক্তি বোঝালেন বসুন্ধরা। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, পুর নির্বাচন সামনে। সে কথা মাথায় রেখেই ওই বৈঠক ডা়কা হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy