ফাইল চিত্র।
সরকারের ভরসায় না থেকে কোভিডে মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ বণ্টনের বিষয়টি তদারকি করার ভার নিজেই নিল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার বিচারপতি এম আর শাহ এবং বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ বলে, বহু পরিবারই অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল। তদুপরি কোভিড তাঁদের রোজগেরে সদস্যকে কেড়ে নিয়েছে। এমতাবস্থাতেও ক্ষতিপূরণ বণ্টনে ঢিলেমি দেখাচ্ছে একাধিক রাজ্য।
আজ বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যসচিবকে তলবও করে শীর্ষ আদালত। বিচারপতিরা তার পরেই নিজেদের মধ্যে কথা বলে জানান, ‘‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, টাকা যাতে সকলের কাছে পৌঁছয়, তার ব্যবস্থাপনায় আমরা নিজেরাই এগিয়ে আসব।’’
কোভিডের একের পর এক ঢেউয়ে, বিশেষত দ্বিতীয় ঢেউয়ে যে মৃত্যুমিছিল প্রত্যক্ষ করেছে দেশ, তার সঙ্গে অর্থনীতির বেহাল অবস্থা, পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্কট, অনাথ শিশুদের ভবিষ্যৎ— নানা বিষয়েই বারংবার উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছে শীর্ষ আদালত। কোভিডে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টই দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার সু্প্রিম কোর্টেই হলফনামা দিয়ে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করার কথা জানায় এবং আদালত তা গ্রহণ করে। তার পরেও মানুষের হাতে ক্ষতিপূরণ ঠিক মতো পৌঁছচ্ছে না বলে রাজ্য সরকারগুলিকে বারবার সতর্ক করে তারা।
অবশেষে আজ সু্প্রিম কোর্ট সরাসরি এ কাজে অংশ গ্রহণ করবে বলে জানাল। সরকারি ব্যবস্থাপনার উপরে আস্থার অভাবের ইঙ্গিতই এর মধ্যে রয়েছে বলে প্রশাসন মহলে একাংশের ধারণা। শুধু নির্দিষ্ট কয়েকটি রাজ্যকে ভর্ৎসনা করা নয়, সামগ্রিক ভাবে দেশে অধিকাংশ রাজ্যেই কোভিড ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় ঢিলেঢালা প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন তাঁরা।
কী ভাবে সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি তদারকি করবে, তা ব্যাখ্যা করে বিচারপতি শাহ বলেন, রাজ্য এবং জেলা স্তরে আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষই (লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি) এ ব্যাপারে ন্যায়পালের ভূমিকা পালন করবে। বিচারপতি মনে করিয়ে দেন, ২০০১-এর গুজরাতে ভূমিকম্পের পরে দুর্গতদের ক্ষতিপূরণ বণ্টনের ক্ষেত্রে হাই কোর্ট এ ভাবেই লিগাল সার্ভিসেস অথরিটিকে ন্যায়পাল হিসাবে নিযুক্ত করেছিল। এ ক্ষেত্রেও কয়েক দিনের মধ্যেই শীর্ষ আদালত সে ব্যাপারে নির্দেশিকা জারি করবে।
কোভিড ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে প্রতিটি রাজ্যে ঘোষিত মৃত্যুর সংখ্যা আর ক্ষতিপূরণ প্রাপকের সংখ্যায় হেরফের দেখলেই হস্তক্ষেপ করবে আদালত। ঠিক যে ভাবে শুনানির সময়ে গুজরাত সরকারের কাছে বিচারপতিরা প্রশ্ন তুলেছেন, ক্ষতিপূরণের ৪০০০ আবেদন কেন বাতিল হল। কেরলের ক্ষেত্রে আদালত লক্ষ করে, ৪৯ হাজার মৃত্যুর পরে ক্ষতিপূরণের আবেদন মাত্র ২৭ হাজার! আদালতের কথায়, কোভিড ক্ষতিপূরণের বিষয়টি রাষ্ট্রের কল্যাণকর ভূমিকার অঙ্গ। শুধুমাত্র টেকনিকাল কারণ দেখিয়ে ক্ষতিপূরণের আবেদন নাকচ করা ঠিক নয়, আবেদন বাতিল করার নির্দিষ্ট কারণ নথিভুক্ত করতে হবে।
আজ শুনানির প্রথম পর্বে বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে শীর্ষ আদালত। বিচারপতিরা মন্তব্য করেন, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যের যে একের পর এক রাজ্যের সরকারকে আমাদের এ ভাবে চেপে ধরতে হচ্ছে...সব সরকারই মনে করে, মানুষ তাদের দয়ার উপরে বেঁচে আছে।’’ আদালত ভর্ৎসনার সুরে বলে, ‘‘আপনারা আইনের ঊর্ধ্বে নন। যোগ্য প্রার্থীদের ক্ষতিপূরণ না দেওয়া মানে আদালতের নির্দেশ অমান্য করা। মুখ্যসচিবরা হাজির হয়ে কারণ দর্শান, কেন সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠবে না!’’ বিহার ১২ হাজার মৃত্যুর সংখ্যা জানিয়েছে আদালতে। সেটা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করে বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আপনারা তো পরিসংখ্যানও আপডেট করেন না!’’
দুপুর দু’টোর সময় অনলাইন হাজিরা দিতে বিহার ও অন্ধ্রের মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেয় আদালত। সেই মোতাবেক শুনানির দ্বিতীয় পর্বে বিহার এবং অন্ধ্রের মুখ্যসচিব যোগ দেন। বিহার জানায়, তারা ১০ হাজার আবেদন পেয়েছে। অন্ধ্র পেয়েছে ৪৯ হাজারের বেশি আবেদন, যার মধ্যে ৩১ হাজার ক্ষতিপূরণের জন্য বিবেচিত হয়েছে।
কিন্তু সামগ্রিক ভাবে ক্ষতিপূরণ বণ্টনের ক্ষেত্রে সরকারের ভরসায় যে থাকতে রাজি নয় আদালত, আজ সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিগত শুনানিগুলিতেও ক্ষতিপূরণের সংখ্যা নিয়ে বারবারই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল আদালত। রাজ্যগুলির জন্য প্রশ্নাবলি তৈরি করে জানতে চেয়েছিল, কত জনের মৃত্যু হয়েছে আর কত জন ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তার নির্দিষ্ট তথ্য। অনলাইন পোর্টাল করা হয়েছে কি না, জেলাভিত্তিক গ্রিভান্স রিড্রেসাল সেল বা অভিযোগ নিষ্পত্তি কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে কি না, খোঁজ করেছে তা-ও। গুজরাত সরকার যে তুলনামূলক ভাবে ক্ষতিপূরণ বণ্টনের সহজ মডেল নিয়েছে, সেটা অনুসরণ করার পরামর্শও দেয়। এ দিনও বাল স্বূরাজ পোর্টালের সাহায্য নিয়ে অনাথ শিশুদের ক্ষতিপূরণ দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাজ্যগুলিকে
বলেছে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy