সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পুলিশ ও আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষের ভূমিকা। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর মামলার প্রথম দিনের শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্টে বার বার প্রশ্নের মুখে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা এবং আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কেন প্রথমে এফআইআর করেননি, সে নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। শুধু তা-ই নয়, কী ভাবে হাসপাতালে ভাঙচুর হল, তা নিয়েও বিস্ময়প্রকাশ করেন তিনি। মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, “ঘটনাটি যে খুন, তা স্পষ্ট।” সে ক্ষেত্রে প্রথম এফআইআরে খুনের কথা উল্লেখ ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন করেন তিনি। আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ কী করছিলেন, তা-ও জানতে চান প্রধান বিচারপতি।
আরজি করের ঘটনায় রবিবারই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা গ্রহণ করে সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের মামলাটি ওঠে শুনানির জন্য। বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা রাজ্যের কাছে জানতে চান, কার অভিযোগের ভিত্তিতে এবং কখন প্রথম এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। তখন রাজ্যের আইনজীবী জানান, ঘটনার দিন (শুক্রবার) রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে মৃতার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথম এফআইআর করা হয়েছিল। পরে অধ্যক্ষ অভিযোগ জানান। এ কথা শুনেই প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, সে ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ কেন প্রথমে অভিযোগ জানাননি? তাঁর মন্তব্য, যে হেতু ঘটনার সময় মৃতার মা-বাবা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না, তাই এফআইআর দায়ের করার দায়িত্ব আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের উপরেই বর্তায়। প্রধান বিচারপতি বলেন, “বিকালে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয় খুন। এফআইআর দায়ের হয়েছিল রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে। তার আগে কী করছিলেন অধ্যক্ষ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ?”
আরজি করের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মাঝে যখন প্রতিবাদ চলছিল হাসপাতালে, সেই সময়েই ইস্তফা দিয়েছিলেন তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। কিন্তু বিকেলেই তাঁকে আবার অন্য একটি হাসপাতালে সমপদে বসানো হয়েছিল। অধ্যক্ষ পদে ইস্তফা দেওয়ার পর কী ভাবে সন্দীপকে আবার অন্য কোথাও বদলির নির্দেশ দেওয়া হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি জানতে চান, তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে কি না। জবাবে রাজ্য জানায়, সন্দীপকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
শুধু সন্দীপের বা আরজি কর কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় নয়, কলকাতা পুলিশের ভূমিকাতেও একই ভাবে উষ্মাপ্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রথমে কেন সঠিক ভাবে এফআইআর করা হয়নি? প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। পুলিশ সেই সময় কী করছিল, জানতে চান তিনি। রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে এফআইআর হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে মৃতার দেহ সৎকারের জন্য কখন পরিবারকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, সে নিয়েও প্রশ্ন করেন তিনি। আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনাতেও উদ্বিগ্ন আদালত। প্রধান বিচারপতি বলেন, “৯ অগস্ট থেকে পুরো বিষয়টি আমরা মনের মধ্যে কল্পনা করছি। কী কী হচ্ছে সেখানে? আমরা কিছুতেই বুঝতে পারছি না স্বাধীনতা দিবসের দিন রাজ্য কী ভাবে হাসপাতাল ভাঙচুর করতে দিল?” তিনি আরও বলেন, “পুলিশ কী করছিল? একটা হাসপাতালের মধ্যে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল। পুলিশ কি হাসপাতাল ভাঙচুর করার অনুমতি দিচ্ছিল?”
বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি সুপ্রিম কোর্টে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে সিবিআইকে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। ওই একই দিনে আরজি করে ভাঙচুরের ঘটনায় রাজ্যকেও রিপোর্ট জমা দিতে হবে। ভাঙচুরের ঘটনায় কী পদক্ষেপ করেছে রাজ্য, তা বৃহস্পতিবারের মধ্যে জানাতে হবে শীর্ষ আদালতে।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এটিকে বিজ্ঞানসম্মত ও ইতিবাচক নির্দেশ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্য়ান্ডলে তিনি লিখেছেন, “সারা দেশে এই ধরনের অপরাধের কথা বলা হয়েছে ও তার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশ আছে। রায় সারা দেশের জন্যই স্বাগত। এই প্রথম ধর্ষণ করে খুনকে মানসিক বিকারের রোগ বলা হয়েছে। রায়ে বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ আছে।”
আরজি কর-কাণ্ড ঘিরে দেশ জুড়ে উত্তাল আবহের মাঝে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে মঙ্গলবার প্রথম শুনানির জন্য ওঠে আরজি করের মামলা। উল্লেখ্য, গত ৯ অগস্ট ভোরে আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলায় সেমিনার কক্ষ থেকে উদ্ধার হয়েছিল মহিলা চিকিৎসকের দেহ। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রাথমিক ভাবে ওই মামলার তদন্ত চালাচ্ছিল কলকাতা পুলিশ। এক জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। এর পর কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। আপাতত অভিযুক্ত সিবিআই হেফাজতে।
এক সপ্তাহ হল, সিবিআই তদন্তভার হাতে পেয়েছে। এর মধ্যেই আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। মঙ্গলবারও কলকাতায় সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআইয়ের অফিসে তলব করা হয়েছে তাঁকে। এই নিয়ে পর পর পাঁচ দিন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে ডাকা হল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy