ভারভারা রাও। ছবি: সংগৃহীত।
ভীমা কোরেগাঁও মামলায় গ্রেফতার কবি ভারভারা রাওয়ের জামিনের শুনানি শুরু করতে বম্বে হাইকোর্টকে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। এ দিন ওই নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালতের ৩ সদস্যের এক ডিভিশন বেঞ্চ।
শীর্ষ আদালতের বিচারপতি ইউ ইউ ললিত, বিচারপতি বিনীত সরন এবং বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভট্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ভারভারার জামিনের আবেদন নিয়ে কোনও শুনানি হয়নি। সেই সঙ্গে আদালতের পর্যবেক্ষণ, ভারভারার শারীরিক অবস্থাও এই শুনানি শুরুর দাবির জন্য যথেষ্ট। পাশাপাশি, গোটা বিষয়টি যে বন্দি ভারভারার মানবাধিকারের নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে, তা মনে করিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
৮১ বছরের ভারভারার জামিনের আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁর স্ত্রী পি হেমলতা। এ দিন সেই শুনানিতে শীর্ষ আদালত স্পষ্ট করেছে বিষয়টি বম্বে হাইকোর্টের বিচারাধীন হওয়ায় সেই আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত। তবে শীর্ষ আদালতের প্রশ্নের উত্তরে হেমলতার হয়ে আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ জানিয়েছেন, গত জুলাইতে ভারভারার শারীরিক অবস্থা নিয়ে মেডিক্যাল রিপোর্ট বম্বে হাইকোর্টে জমা দিয়ে জামিনের আবেদন করলে সে ব্যাপারে কোনও অগ্রগতি হয়নি। গত অগস্টে এ নিয়ে শুনানির পর ১৭ সেপ্টেম্বর শেষ বার শুনানি হয়েছিল। তবে এর পর বিষয়টি আর এগোয়নি বলে জানিয়েছেন ইন্দিরা জয়সিংহ। সেই সঙ্গে তিনি আরও জানিয়েছেন, ভারভারার শারীরিক অবস্থার ক্রমশই অবনতি হচ্ছে। জেলবন্দি থাকাকালীন তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। পাশাপাশি, তাঁর কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা রয়েছে। তা সত্ত্বেও চিকিৎসকদের মতের বিরুদ্ধে তাঁকে মুম্বইয়ের নানাবতী হাসপাতাল থেকে তালোজা জেলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। প্রবীণ কবির শারীরিক অবস্থার এতটাই অবনতি হয়েছে যে তা তাঁর মানসিক বোধগম্যতায় আঘাত হেনেছে বলেও দাবি করেছেন ইন্দিরা জয়সিংহ। ভারভারার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইন্দিয়া জয়সিংহের আরও দাবি, জেলেই মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে কবির।
আরও পড়ুন: কমল নাথ আর ‘তারকা প্রচারক’ নন, জানিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন
আরও পড়ুন: প্রবীণদের করোনা প্রতিরোধে ভাল কাজ করছে যক্ষার টিকা, দাবি আইসিএমআর-এর
তিনি আরও জানিয়েছেন, বার বার আবেদন সত্ত্বেও জামিনের শুনানি শুরু হয়নি। সে কারণেই সংবিধানের ৩২ ধারা-র আওতায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁর স্ত্রী। এই উত্তরে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, শুনানির বিষয়টি ইতিমধ্যেই বম্বে হাইকোর্টের আওতায় থাকায় তা সংশ্লিষ্ট কোর্টেই শুনানি হবে। তবে একই সঙ্গে বেঞ্চের মন্তব্য, “জেলে কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটুক, আমরা এমনটার পরিপন্থী।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকা এবং মাওবাদীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে প্রবীণ অধ্যাপক এবং কবি ভারাভারা রাওকে ২০১৮ সালের ২৮ অগস্ট গ্রেফতার করে পুণে পুলিশ। বছরখানেক পরে ২০১৯-এ ওই মামলার চার্জশিটের দাবি, সে বছরের ১ জানুয়ারি ভীমা কোরেগাঁওতে দলিত বিজয়দিবস অনুষ্ঠানে ব্যাপক গন্ডগোলের পিছনে ভারভারা ছাড়াও আরও ৪ জন সমাজকর্মী জড়িত ছিলেন। এঁরা হলেন ট্রেড ইউনিয়ন নেত্রী তথা আইনজীবী সুধা ভরদ্বাজ, অরুণ ফেরেরা, ভার্নন গঞ্জালভেস এবং গৌতম নওলাখা। ভারভারা ছাড়াও তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই মামলার তদন্তে নেমে মাওবাদীদের একটি চিঠি পাওয়ার দাবি করে পুলিশ জানায়, তাতে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ছকের উল্লেখ ছিল। ওই চিঠিতে ভারাভারার নাম ছিলে বলেও দাবি করেছিল পুলিশ। এই ঘটনায় দেশ জুড়ে নাগরিক সমাজের একাংশের সমালোচনার মুখে পড়ে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তবে বার বার আবেদন সত্ত্বেও মুক্তি পাননি ভারভারা রাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy