হিমাচল প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত বীরভদ্র সিংহের স্ত্রী প্রতিভা সিংহের সঙ্গে রাহুল (বাঁ দিকে)। মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখুর মায়ের সঙ্গে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা (ডান দিকে)। রবিবার। পিটিআই।
সকাল ছ’টা থেকে ১৩ কিলোমিটার ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় হেঁটেছিলেন। তার পরে সন্ধ্যায় ফের ৯ কিলোমিটার হাঁটলেন। এর মাঝেই রাজস্থান থেকে শিমলা গিয়ে হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সুখবিন্দর সিংহ সুখুর শপথগ্রহ অনুষ্ঠানে হাজির হলেন রাহুল গান্ধী।
যেতেই হত। কারণ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি হিসেবে রাহুল যে সব নেতাদের বিভিন্ন রাজ্যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নিয়োগের পিছনে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে সুখবিন্দর সিংহ সুখু অন্যতম। শুধু তা-ই নয়। ওই সব নেতাদের মধ্যে সুখবিন্দরই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হলেন।
হিমাচল রোডওয়েজের বাস চালকের পুত্র, আইনের ডিগ্রি নিয়েও ছোটা শিমলায় দুধের দোকান চালানো সুখবিন্দর সিংহ সুখু আজ হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। গত চার দশকে হিমাচলে কংগ্রেস থেকে পাঁচ বারই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন ‘রাজাসাহেব’ প্রয়াত বীরভদ্র সিংহ। এ বারও বীরভদ্রের স্ত্রী, প্রদেশ কংগ্রেস সভানেত্রী প্রতিভা সিংহ মুখ্যমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবিদার ছিলেন। তাঁর বদলে বীরভদ্রের বিরুদ্ধ শিবিরের নেতা সুখবিন্দরকে মুখ্যমন্ত্রী করায় যে ভবিষ্যতে দলের মধ্যে ফাটলের সম্ভাবনা তৈরি হল, তা কংগ্রেস নেতৃত্বের অজানা নয়। রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা, দু’জনেই আজ শপথগ্রহণের মঞ্চে প্রতিভাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করেছেন। প্রতিভার অনুগামীদের বার্তা দিয়েছেন। প্রয়াত বীরভদ্রের অনুগামী মুকেশ অগ্নিহোত্রীকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে। বীরভদ্রের ছেলে বিক্রমাদিত্যকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করা না হলেও সুখবিন্দর বার্তা দিয়েছেন, তাঁকে ক্যাবিনেট মন্ত্রী করা হবে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, হিমাচলের প্রদেশ কংগ্রেস সভানেত্রী হিসেবে প্রতিভার নেতৃত্বে কংগ্রেস ভোটে জিতলেও তাঁর নিজের জেলা ও লোকসভা কেন্দ্র মণ্ডীতে কংগ্রেস খারাপ ফল করেছে। অধিকাংশ আসনেই কংগ্রেস হেরেছে। ফলে সাংসদ প্রতিভাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে মণ্ডী লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কংগ্রেসের কাউকে জিতিয়ে আনা কঠিন হত। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে পিছিয়ে গিয়েছেন প্রতিভা। উল্টো দিকে সুখবিন্দরের জেলা হামিরপুর বিজেপির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রেমকুমার ধুমলের জেলা ও তাঁর ছেলে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের লোকসভা কেন্দ্র হলেও বিজেপি সেখানে একটি আসনও জিততে পারেনি।
২০১৮-য় মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেসের সরকার গঠনের পরে এই প্রথম কোনও রাজ্যে কংগ্রেসের একার সরকার তৈরি হল। হিমাচলের মতো মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানেও মুখ্যমন্ত্রী পদের একাধিক দাবিদার ছিলেন। রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রীর গদি নিয়ে অশোক গহলৌত বনাম সচিন পাইলটের বিবাদ এখনও চলছে। গহলৌতের দায়িত্বে গুজরাতে কংগ্রেসের ভরাডুবির পরে তাঁর উপর নতুন করে চাপ তৈরি হয়েছে। গহলৌত আজ কিছুটা বিবাদ মেটানোর সুরে কথা হলেছেন। মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ বনাম জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার এই বিবাদের জেরেই কংগ্রেসের সরকার টেকেনি।
হিমাচলে সরকার গঠন হলেও কংগ্রেস নেতৃত্বের আশঙ্কা, প্রতিভা সিংহকে মুখ্যমন্ত্রী না করায় তাঁর ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে বিজেপি ভবিষ্যতে সরকার ফেলার চেষ্টা করতে পারে। আজ শপথ নেওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর বলেছেন, তাঁর প্রথম কাজ হবে পুরনো পেনশন প্রকল্প ফেরানোর মতো প্রতিশ্রুতি পালন করা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হিমাচলের কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কেন্দ্রের দিক থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য কংগ্রেসের মধ্যে ফাটল খুঁচিয়ে দিতে বলেছেন, ‘‘বীরভদ্র সিংহের পরিবারকে কোণঠাসা করাটা মোটেই আশ্চর্যের বিষয় নয়। গান্ধী পরিবার কোনও দিনই তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে স্বচ্ছন্দ নয়। এটা সেই উত্তরাধিকার মুছে দেওয়ারই চেষ্টা।’’ কংগ্রেসের কাছে একমাত্র স্বস্তির হল, ৬৮ আসনের বিধানসভায় ৪০টি আসন জেতার পরে তিন জন নির্দল বিধায়কও কংগ্রেস সরকারকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে সরকারের সমর্থক বিধায়কের সংখ্যা ৪৩-এ পৌঁছেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy