সুব্রহ্মণ্যন স্বামী। ফাইল চিত্র।
টানা শুনানি, পক্ষে বিপক্ষে তীক্ষ্ণ যুক্তির পালোয়ানি প্যাঁচ— অবশেষে দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি এন পটেল এবং বিচারপতি জ্যোতি সিংহের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বললেন, “ডঃ সুব্রহ্মণ্যন স্বামী স্যর, আপনার আবেদন আমরা খারিজ করে দিচ্ছি।”
খারিজ করে দেওয়া হল এয়ার ইন্ডিয়া ও তার সহযোগী কোম্পানিগুলিকে টাটাদের বিক্রি করে দেওয়ার বিরুদ্ধে বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যন স্বামীর আবেদন। নরেন্দ্র মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বামী ‘বেআইনি, অসাংবিধানিক এবং জনস্বার্থবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগ করেছিলেন, কার্যত একতরফা ভাবে জাতীয় উড়ান সংস্থাটিকে টাটাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টির পিছনে অনৈতিক লেনদেন থাকতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে সিবিআই তদন্তের আর্জিও জানিয়েছিলেন শাসক দলের মোদী-বিরোধী বলে পরিচিত নেতা স্বামী। আবেদন খারিজ করে দুই বিচারপতি জানিয়েছেন, রায়ের বিস্তারিত খুঁটিনাটি হাই কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এয়ার ইন্ডিয়া বিলগ্নিকরণ নিয়ে আর কোনও বিরোধিতা করা বা এ বিষয়ে আরও এগোতে বারণ করা হয়েছে সুব্রহ্মণ্যন স্বামীকে।
আবেদনকারী নিজে এক জন দুঁদে আইনজীবী। মঙ্গলবার সওয়াল করে নিজের দলের সরকারকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যুক্তিতে ফালাফালা করে ফেলেন ৮৩ বছরের স্বামী। বলেন, বিলগ্নিকরণের নামে জাতীয় সম্পদ এয়ার ইন্ডিয়াকে এক তরফা ভাবে টাটাদের হাতে তুলে দিয়েছে সরকার। যে দরপত্র ডাকা হয়েছে, তা নেহাতই নাটক।
টাটা সন্স-এর সদস্য টালাস প্রাইভেট লিমিটেড ছাড়া অন্য যে কনসর্টিয়ামটি দরপত্র দেয়, তার প্রধান মাদ্রাজ হাই কোর্টের কাছে দেউলিয়া হতে চেয়ে আবেদন করা স্পাইসজেট-এর কর্ণধার অজয় সিংহ। টাটাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামার কোনও যোগ্যতাই এদের না থাকায়, বলা যায় টাটাদের হাতে এয়ার ইন্ডিয়া ও তার সহযোগী কোম্পানিগুলিকে তুলে দিল সরকার, যা জনস্বার্থ বিরোধী তে বটেই, অসাংবিধানিক ও বেআইনি। সরকারের কোন কোন লোক কীসের অনুপ্রেরণায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার তদন্তের জন্য সিবিআইকে দায়িত্ব দিক হাই কোর্ট।
স্বামীর আবেদনের মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সওয়াল করেন সলিসিটির জেনারেল তুষার মেহতা। টালাসের প্রতিনিধিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র কৌঁসুলি হরিশ সালভে। মেহতার বক্তব্য— প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লোকসান করে চলেছে এয়ার ইন্ডিয়া। এত বোঝা সরকারের পক্ষে বওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমন একটি বিশাল বিমান সংস্থা চালাতে যে পেশাদারি দক্ষতা প্রয়োজন, দেখা যাচ্ছে সরকারের তা নেই। এই পরিস্থিতিতে লোকসানের দায় নিয়ে কোনও সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়াকে কিনে চালাতে চাইলে সব পক্ষেরই উপকার হয়। মেহতা বলেন, বিলগ্নিকরণ সরকারের একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত। আদালত যেমন তা খারিজ করে দিতে পারে না, আদালতের কাছে কারও সেই আবদারও করা উচিত নয়।
সলিসিটর জেনারেল বলেন, “টাটাদের প্রতিযোগী হিসেবে যে কনসর্টিয়াম দরপত্র দিয়েছিল, স্পাইসজেট কোনও ভাবেই তার অংশ ছিল না। যিনি এই কনসর্টিয়ামের প্রধান ছিলেন, তিনি ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মাত্র। তাতে প্রমাণ হয় না যে দরপত্র ডাকার পদ্ধতিটি
সাজানো ছিল।” টালাসের পক্ষে হরিশ সালভেও জানান, টাটারা তো আর প্রতিযোগী ঠিক করে দেয়নি। প্রতিযোগীরা যে ১৫,১০০ কোটি টাকার দর দিয়েছিল, তার চেয়ে টালাসের দর ১৮,০০০ কোটি টাকা বেশি ছিল বলেই সরকার সেটা গ্রহণ করেছে। আবেদনকারী একে কেন টাটাদের সুবিধা দেওয়া বলছেন, তা একেবারেই স্পষ্ট নয়।
অক্টোবরের ২৫ তারিখে টাটাদের সঙ্গে সরকারের যে বোঝাপড়া হয়েছে, তাতে টালাস এয়ার ইন্ডিয়ার ১৩,৫০০ কোটি টাকা বকেয়া ঋণ মেটাবে। আর সরকারকে নগদে দেবে ২,৭০০ কোটি টাকা। বিনিময়ে এয়ার ইন্ডিয়া এবং তার দুই শাখা সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস এবং এয়ার ইন্ডিয়া এয়ার ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসেস-এর ১০০ শতাংশ অংশীদারিত্বের মালিক হবে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সংস্থা এআইএসএটিএস-কে ২০ বছর আগে প্রথম বিলগ্নিকরণ করে সরকার ৫০ শতাংশ অংশীদারি বেসরকারি হাতে তুলে দেয়। দেশের প্রথম বিলগ্নিকরণ ছিল সেটি। সেই সংস্থায় সরকারের হাতে থাকা ৫০ শতাংশ শেয়ারও যাচ্ছে টালাসের হাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy