সংস্কৃত পরীক্ষার খাতা দেখছিলেন শিক্ষিকা। একটা খাতায় এসে আটকে গেল চোখ। দশম শ্রেণির ছাত্র লিখছে, ‘‘দু’মাস ধরে নীল তিমি খেলছি। একেবারে ফেঁসে গিয়েছি। এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি। ওরা আমাকে আত্মহত্যা করতে বলেছে। না হলে বাবা-মাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছে।’’ শিক্ষিকা দ্রুত যোগাযোগ করেন ছাত্রের বাবা-মা, স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। আর তাতেই এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচেছে মধ্যপ্রদেশের রায়গড় জেলার ওই স্কুল-পড়ুয়া। ‘ব্লু হোয়েল’-এর ৪৯তম ধাপে পৌঁছে গিয়েছিল সে। তার পরেই ছিল শেষ চ্যালেঞ্জ, আত্মহত্যা।
খিলচিপুরের উৎকর্ষ স্কুলের শিক্ষিকা হেমলতা শ্রিঙ্গি জানালেন, পরীক্ষার খাতায় লেখাটি পড়ে শিউরে উঠেছিলেন। তিনি খবর দিলে তড়িঘড়ি কাউন্সেলিং শুরু হয় তার। ওই ছাত্রের পরিবার জানিয়েছে, শেষের আগের ধাপে হাত কেটে সেই ছবি আপলোডও করে ফেলেছিল সে। কিন্তু শেষ পর্যায়ে গিয়ে আটকে যায়। মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট প্রবীণ প্রজাপতি জানিয়েছেন, কয়েক জন শিক্ষিকা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে একটি দল তৈরি করে ওই কিশোরের কাউন্সেলিং করা হয়েছে। তবে এখনও আতঙ্ক কাটেনি তার। আর ওই মারণখেলা খেলবে না বলে কথা দিয়েছে সে।
দেশ-বিদেশের বহু ছেলেমেয়েই এই অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। গত দু’সপ্তাহে এর খপ্পরে পড়ে ১২ থেকে ১৯ বছর বয়সি ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতেও এর নেশায় পড়েছে এমন কিশোর-কিশোরীর খবর মিলেছে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ-সহ বহু রাজ্যে। এদের অনেককেই বাঁচানো গিয়েছে। অনলাইন গেমটি রুখতে গুগল, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইয়াহু থেকে ওই গেমের লিঙ্ক সরিয়ে দিতেও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। তাতেও এই খেলার ছোবল যে রোখা যাচ্ছে না, মধ্যপ্রদেশের ঘটনাই তার প্রমাণ।
কিছু দিন রাজস্থানের এক কিশোরী জলাশয়ে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল এই খেলায় জড়িয়ে। স্থানীয়দের তৎপরতায় উদ্ধার করা গিয়েছে তাকে। ভোপালের এক ম্যানেজমেন্ট ছাত্রও ব্লু হোয়েল খেলছিলেন। প্রথম চ্যালেঞ্জ শেষ করে বন্ধুদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানিয়ে দেন তিনি। বন্ধুরা তা কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানোয় মরণফাঁদ থেকে বাঁচানো গিয়েছে তাঁকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy