Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
National News

কর্মসংস্থানের তথ্য প্রকাশ করতে দিল না কেন্দ্র, তোপ দেগে ইস্তফা এনএসসি কর্তার

মোহননের সঙ্গেই ইস্তফা দিয়েছেন আরও এনএসসি-র আরও এক সদস্য জে ভি মীনাক্ষী। তিনি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিসের প্রাক্তন সদস্য এবং দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্স-এর অধ্যাপক।দু’জনেরই মেয়াদ ছিল ২০২০ সাল পর্যন্ত।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:২৭
Share: Save:

জিডিপি তথ্যে কারচুপির অভিযোগ ছিলই। লোকসভা ভোটের মুখে এবার চাকরি ক্ষেত্রেও প্রায় একই অভিযোগ উঠল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। নোটবন্দি পরবর্তী সময়ে কর্মসংস্থানের তথ্য প্রকাশ করতেই দিচ্ছে না কেন্দ্র— এই অভিযোগ তুলে ইস্তফা দিলেন ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল কমিশন (এনএসসি) বা জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান-সহ দুই সদস্য। আর এর পরই সিবিআই, আরবিআই-এর মতো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার যে অভিযোগ বিরোধীরা করে আসছিল, তা আরও জোরদার হল।

২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে প্রতি বছর দেশে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। প্রায় পাঁচ বছর পর সেই প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান সামনে এলে চিত্রটা আরও পরিষ্কার হত। কিন্তু অভিযোগ, তাতে জল ঢেলে দিয়েছে কেন্দ্র। এনএসসি-র ভারপ্রাপ্ত প্রধান পি সি মোহনন ইস্তফা দিয়ে অভিযোগ তুলেছেন, কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান প্রকাশ করার অনুমোদন দিলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। আটকে দেওয়া হয়েছে। পি সি মোহনন জানান, ‘ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস’ বা এনএসএসও-র ২০১৭-১৮ সালের রিপোর্ট(যা আসলে কর্মসংস্থানের তথ্য ও পরিসংখ্যান) খুঁটিয়ে পরীক্ষার পর ডিসেম্বর মাসেই প্রকাশ করার অনুমোদন দিয়ে দিয়েছিল এনএসসি। কিন্তু তা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। তাঁর ইঙ্গিত অবশ্যই কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের দিকে।

মোহননের সঙ্গেই ইস্তফা দিয়েছেন আরও এনএসসি-র আরও এক সদস্য জে ভি মীনাক্ষী। তিনি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিসের প্রাক্তন সদস্য এবং দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্স-এর অধ্যাপক।দু’জনেরই মেয়াদ ছিল ২০২০ সাল পর্যন্ত। কিন্তু তার আগেই তাঁরা ইস্তফা দেওয়ায় বর্তমানে কমিশনের সদস্য থাকলেন মাত্র দু’জন, প্রধান পরিসংখ্যানবিদ প্রবীণ শ্রীবাস্তব এবং নীতি আয়োগের সদস্য অমিতাভ কান্ত।

ইস্তফা দেওয়ার পর মোহনন বলেছেন, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরেই আমরা বুঝতে পারছিলাম, কমিশনকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যে রিপোর্ট প্রকাশ করতে চাইছে, তা আটকে দেওয়া হচ্ছে। আর সম্প্রতি মনে হয়েছে, আমাদের গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না। কোণঠাসা করে দেওয়া হয়েছে। অথচ যে কোনও পরিসংখ্যান প্রকাশের ক্ষেত্রে এটাই দেশের সর্বোচ্চ স্বশাসিত সংস্থা। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য সফল হচ্ছিল না বলে আমাদের মনে হয়েছে। তাই ইস্তফার সিদ্ধান্ত।’’

আরও পড়ুন: অমিত শাহের সভা শেষ হতেই রণক্ষেত্র কাঁথি, মমতাকে ফোন উদ্বিগ্ন রাজনাথের

সাত সদস্যের কমিশনে আগে থেকেই তিনটি পদ ফাঁকা ছিল। পি সি মোহনন এবং জে ভি মীনাক্ষী ইস্থফা দেওয়ায় এখন সদস্য সংখ্যা মাত্র দুই। ফলে এই দুই সদস্যের আর কোনও কার্যকারিতা থাকল কিনা, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। সেই প্রশ্নেই সরব হয়েছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বেশ কয়েকটি টুইটে কটাক্ষ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘পুনর্জীবন না পাওয়া পর্যন্ত এনএসসি-র আত্মার শান্তি কামনা করি। জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশনের মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত। সেই সঙ্গেই ‘সংশোধনহীন’ জিডিপি প্রকাশের বিরুদ্ধে এই এনএসসি-র লড়াইকে কুর্নিশ করি। দূষিত সরকারের অবহেলায় ২৯ জানুয়ারি আরও একটি স্বশাসিত সংস্থার মৃত্যু হল।’’

গত বছরের নভেম্বরে নীতি আয়োগ জিডিপি-র একটি ‘সংশোধিত’ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। কিন্তু তাতে অভিযোগ ওঠে, সংশোধনের নামে আসলে দ্বিতীয় ইউপিএ জমানায় বৃদ্ধির হার কমিয়ে দেখানো হয়েছে এবং মোদী জমানার চার বছরের জিডিপি ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। বিরোধীরাও এই অভিযোগে সরব হয়। সেই সময় এনএসসি এই পরিসংখ্যান প্রকাশের বিরোধিতা করলেও তাতে কর্ণপাত করা হয়নি বলে অভিযোগ। চিদম্বরমও টুইট করে সেই বিষয়টি ফের সামনে নিয়ে এসেছেন।

রঙ্গরাজন কমিশনের সুপারিশে ২০০৫ সালে গঠিত হয় জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশন। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের অধীনে স্বশাসিত এই সংস্থার হাতে পরিসংখ্যান প্রকাশের একমাত্র অধিকার দেওয়া হয়। আগেআলাদা ভাবে এই কাজ করত সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস (সিএসও), এনএসএসও-র মতো সংস্থা। কিন্তু তথ্য পরিসংখ্যান সংগ্রহ করতে গিয়ে ওই সংস্থাগুলি নানা সমস্যার সম্মুখীন হত। এনএসসি গঠিত হওয়ার পর এই কমিশন পক্ষপাতহীন পরিসংখ্যান প্রকাশের উপর জোর দেয়। তাতে কমিশনের উপর সাধারণ মানুষের আস্থাও বাড়ে। কিন্তু সেই কমিশনও এবার কার্যত পঙ্গু হয়ে পড়ল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

আরও পড়ুন: মন্দির নিয়ে মরিয়া চাল কেন্দ্রের

উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক সিনেমা থেকে ‘‘হাউ ইজ দ্য জোশ’! হাই স্যার’’— এই সংলাপ নিয়ে জাতীয়তাবাদের প্রচার জোরদার করতে চাইছে বিজেপি। তার পাল্টা হিসেবে কংগ্রেসও ‘‘হাউ ইজ দ্য জব’! নো স্যার’’— এই স্লোগান তুলেছে। এ বার কেন্দ্র তথা বিজেপির বিরুদ্ধে কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান প্রকাশ আটকে দেওয়ার মতো মারাত্মক অভিযোগ ওঠায় কংগ্রেসের সেই প্রচার আরও জোরদার হবে বলেও মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi P Chidambaram Job NSC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy