ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরে সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাতেই কি সিবিআই ডিরেক্টর পদে সুবোধকুমার জয়সওয়ালকে বসানো হল!
বুধবার দুপুরে নতুন সিবিআই ডিরেক্টর পদে দায়িত্ব নেওয়ার পরে সিবিআইয়ের অন্দরমহল থেকেই এই প্রশ্ন উঠে গেল। সিবিআইয়ের উচ্চপদস্থ অফিসার টি রাজা বালাজি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, উদ্ধব ঠাকরে সরকারে অস্থিরতা তৈরি করে মহারাষ্ট্র থেকে উৎখাত করতেই জয়সওয়ালকে সিবিআই ডিরেক্টর পদে নিয়োগ করা হয়েছে। একে সিবিআই ডিরেক্টর পদের অপব্যবহার বলেও বালাজির অভিযোগ।
উদ্ধব-সরকারের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-তোলাবাজির অভিযোগের মামলা এখন সিবিআই ডিরেক্টরের টেবিলে। দেশমুখ তথা উদ্ধব-সরকারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়াতেই মহারাষ্ট্র পুলিশের ডিজি-র পদ ছেড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ডেপুটেশনে চলে এসেছিলেন জয়সওয়াল। এ বার তিনি তাঁর পুরনো ‘বস’-এর বিরুদ্ধেই তদন্তে নেতৃত্ব দেবেন। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বালাজি অভিযোগ তুলেছেন, ডিরেক্টর পদে বসে জয়সওয়াল দেশমুখের বিরুদ্ধে তদন্তকারী সিবিআই অফিসারদের এমন ভাবে কাজে লাগাবেন, যাতে উদ্ধব ঠাকরে সরকারে অস্থিরতা তৈরি হয়। সবটাই মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের ইশারায় হবে বলেও বালাজির অভিযোগ।
মঙ্গলবার বেশি রাতে জয়সওয়ালকে সিবিআই ডিরেক্টর পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে মন্ত্রিসভার নিয়োগ কমিটি। ওই কমিটিতে মাত্র দু’জন সদস্য। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে সংবাদমাধ্যমে জানা গিয়েছিল, জয়সওয়ালই এগিয়ে। তার ভিত্তিতেই বালাজি প্রধানমন্ত্রীকে মঙ্গলবার বিকেলে চিঠি পাঠান। পাঁচ পৃষ্ঠার সেই চিঠিতে বালাজি আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর দাবি, বিশ্বস্ত সূত্রে তিনি জানতে পেরেছেন, পরিকল্পিত ভাবেই সিবিআই ডিরেক্টর পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া এমন ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যাতে জয়সওয়াল সিবিআই ডিরেক্টর পদের দৌড়ে এগিয়ে থাকেন।
কী ভাবে? সিবিআই সূত্রের ব্যাখ্যা, ডিরেক্টর পদের দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন রাকেশ আস্থানা ও যোগেশচন্দ্র মোদী। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় বাছাই কমিটির বৈঠকে প্রধান বিচারপতি এন বি রমণা আদালতের রায় দেখিয়ে বলেন, তাঁদের চাকরির মেয়াদ ছয় মাসও বাকি নেই। তাই তাঁদের দু’বছরের জন্য সিবিআই শীর্ষপদে নিয়োগ করা ঠিক হবে না। সঠিক প্রক্রিয়া মানলে এই কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা জানুয়ারিতে। ফেব্রুয়ারিতে ঋষিকুমার শুক্ল অবসর নেওয়ার আগে। আস্থানা ৩১ অগস্ট অবসর নেবেন। জানুয়ারিতে বৈঠক হলে ছয় মাসের নিয়ম তাঁর ক্ষেত্রে খাটত না। কিন্তু বাছাই কমিটির বৈঠক চার মাস পরে ডাকা হয়। ফলে আস্থানা ছিটকে গিয়েছেন।
সিবিআইয়ের অন্দরের প্রশ্ন, তা হলে কি কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষস্তর থেকে আগেভাগেই জয়সওয়ালকে বাছাই করে রাখা হয়েছিল! উদ্ধব-সরকারকে প্যাঁচে ফেলাই তাঁকে নিয়োগের উদ্দেশ্য?
দেবেন্দ্র ফডণবীসের বিজেপি সরকারের আমলে জয়সওয়াল মহারাষ্ট্র পুলিশের ডিজি হয়েছিলেন। ভীমা কোরেগাঁও কাণ্ডে শিক্ষাবিদ-সমাজকর্মীদের গ্রেফতার, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চক্রান্তের পরিকল্পনার অভিযোগ ওঠার পরে পুলিশের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শরদ পওয়ার। কিন্তু ডিজি-র পদে বসে পুণে পুলিশের তদন্তে সমর্থন জানিয়েছিলেন তিনি। পরে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট ক্ষমতায় এলে সরকারের তরফেই সেই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেখান থেকেই উদ্ধব-সরকারের সঙ্গে জয়সওয়ালের মতপার্থক্য শুরু।
নতুন সিবিআই ডিরেক্টর পদে নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ফলের পরেই সিবিআই নারদ-কাণ্ডে তৃণমূলের মন্ত্রী-নেতাদের গ্রেফতার করায় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ফের সিবিআইকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। এর পরে সারদা-রোজ ভ্যালি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার মামলাও রয়েছে। সিবিআই কর্তারা বলছেন, তাঁদের দফতরে ধর্নায় বসার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা যায় বলে সুপ্রিম কোর্টই মন্তব্য করেছে। এর পাশাপাশি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার মামলাতেও সিবিআই কতটা এগোবে, তা রাজনৈতিক স্তর থেকে সবুজ সঙ্কেতের উপরে নির্ভর করছে। তাই প্রশ্ন উঠছে, শুধুই কি মহারাষ্ট্র? না কি পশ্চিমবঙ্গ সরকারেও অস্থিরতা তৈরিতে জয়সওয়ালকে কাজে লাগাবেন মোদী-শাহ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy