ঠিক ছিল, দিল্লি নির্বাচনের পরেই ঘোষণা হবে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির নাম। সে ভোট পর্ব শেষ হয়েছে এক মাস আগে। পরবর্তী ধাপে দোল উৎসবের আগে নাম চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছিল দল। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে দোল উৎসব কেন, আগামী এক মাসেও সর্বভারতীয় সভাপতির নাম ঘোষণা হবে কি না, তা নিয়ে বিজেপির মধ্যেই সংশয় দেখা দিয়েছে। সামনেই চৈত্র মাস। দলের একটি অংশের দাবি, সম্ভবত বৈশাখ পড়লে নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা করা হতে পারে।
নতুন সভাপতি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা যত বাড়ছে, তত দলের অভ্যন্তরে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, এর পিছনে মূলত দু’টি কারণ। প্রথমত, সভাপতি নাম নিয়ে আরএসএস ও বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের মতানৈক্য। বিজেপি শিবিরের প্রতিষ্ঠিত সত্য হল, পরবর্তী সভাপতি কে হবেন, তা চূড়ান্ত করবেন একমাত্র দলের দুই শীর্ষ নেতা— নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। দলের অন্য কারও বক্তব্য বা মতামত এ ক্ষেত্রে অর্থহীন। স্বভাবতই তাঁরা এমন কাউকে ওই পদে চাইছেন, যিনি বর্তমান সভাপতি জে পি নড্ডার মতো আনুগত্য প্রকাশে দ্বিধাহীন থাকবেন। দল পরিচালনার ক্ষেত্রে সেই নেতা পরবর্তী সময়ে এমন কোনও বেয়াড়া প্রশ্ন বা সাহসী পদক্ষেপ নেবেন না, যাতে দলের শীর্ষ দুই নেতার ভুরুতে ভাঁজ পড়ে। এখানেই আপত্তি রয়েছে আরএসএসের। সূত্রের মতে, নড্ডার সামগ্রিক ভাবে দল পরিচালনা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে সঙ্ঘ নেতৃত্বের একাংশের। বিশেষ করে বিজেপির সাংগঠনিক বিস্তারের প্রশ্নে নড্ডার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সঙ্ঘের মনে।
আগামী দিনে যিনি সভাপতি হবেন, তাঁর নেতৃত্বেই ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচন লড়বে বিজেপি। এ বারের লোকসভা ভোট যদি নরেন্দ্র মোদীর শেষ নির্বাচন হয়, সে ক্ষেত্রে সেটিই মোদী-পরবর্তী প্রথম লোকসভা নির্বাচন। ফলে আরএসএস নেতৃত্ব এমন কোনও ব্যক্তিকে সভাপতি পদে দেখতে চাইছেন, যাঁর নেতৃত্ব দেওয়া, দলকে পথ দেখানোর প্রশ্নে দক্ষতা প্রশ্নাতীত। যাতে মোদীর উপরে ভরসা না করে জিততে পারে দল। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘এমন একজনকে তাই বসাতে হবে, যার উপরে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও আরএসএস— উভয়েরই ভরসা রয়েছে। কিন্তু সেই ব্যক্তি কে, সে প্রশ্নে এখনও রফাসূত্র পাওয়া যায়নি।’’
আগামী ২১-২৩ মার্চ বেঙ্গালুরুতে আরএসএসের অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভার বৈঠক হতে চলেছে। ওই বৈঠকে বিজেপির প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন নড্ডা। সূত্রের মতে, বেঙ্গালুরুতে মোহন ভাগবতের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করবেন নড্ডা। সম্ভবত সেই বৈঠকেই রফাসূত্র বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন রাজনীতিকেরা।
দ্বিতীয়ত, বিজেপির দলীয় সংবিধান বলছে, জাতীয় সভাপতি বেছে নেওয়ার আগে রাজ্য ও কেন্দ্র মিলিয়ে অন্তত ১৮ জন রাজ্য সভাপতির নির্বাচন সেরে ফেলতে হবে দলকে। তা যতক্ষণ না হচ্ছে, তত দিন জাতীয় সভাপতির নির্বাচন বা তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে বেছে নেওয়া সম্ভব নয়। বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে ১২ জন রাজ্য সভাপতির নির্বাচন হয়েছে। আরও অন্তত ছ’জন রাজ্য সভাপতির নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত নতুন বিজেপি সভাপতিকে বেছে নেওয়া সম্ভব নয়।
পশ্চিমবঙ্গেও এখনও রাজ্য সভাপতি নির্বাচন সারতে পারেনি দল। মাঝে তড়িঘড়ি তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনের কাজ
সেরে ফেলার পরে হঠাৎ করে সাংগঠনিক নির্বাচন সেরে ফেলার তৎপরতায় ভাটা পড়ে। এ দিকে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হতে আর মোটে এক বছর। দলের একটি অংশ তাই, ভোটের ঠিক এক বছর আগে নতুন সভাপতির পরিবর্তে বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের হাতেই দায়িত্ব রা
খার পক্ষপাতী। ওই অংশের মতে, নতুন সভাপতি দায়িত্ব নিয়ে নিজের নতুন দল গঠন করে ভাল করে গুছিয়ে বসার আগেই নির্বাচন এসে যাবে। চলতি মাসেই সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে পশ্চিমবঙ্গে যাচ্ছেন অমিত শাহ।
সূত্রের মতে, শাহের বঙ্গ সফরেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে যে, সুকান্ত নিজের পদেই থেকে যাবেন, না কি তাঁর পরিবর্তে অন্য কাউকে বেছে নেবে দল। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আজ সুকান্ত বলেন, ‘‘এই বিষয়টি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই মেনে নিতে হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)