প্রমাণ খুঁজে হন্যে ধীরাজবাবুর পরিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা অসমে। তিনি কাঁচরাপাড়ায়। এই মুহূর্তে তাঁদের কারও দেশ নেই। শুধুমাত্র মা ঠাঁই পেয়েছেন এনআরসি তালিকায়।
দীর্ঘদিন অসমের সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন দিলীপ চন্দ। ছেলে ধীরাজ সেনা বাহিনীর চাকরি থেকে অবসরের পর এখন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দমকল বিভাগে কর্মরত। ১৯৫৪ সালের পারিবারিক সরকারি নথি জমা দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু চূড়ান্ত এনআরসি তালিকায় নাম নেই বাবা-ছেলের। ধীরাজের মা সীমা চন্দ দাসের নাম তালিকায় উঠেছে তাঁর বাপের বাড়ির নথির দৌলতে। এই অবস্থায় এখন কে কী করবেন, কোথায় যাবেন, সেই ভাবনায় রাতের ঘুম উবে গিয়েছে গোটা পরিবারের।
কাঁচরাপাড়ায় বসে ধীরাজ মঙ্গলবার বলেন, ‘‘বাবা প্রায় শয্যাশায়ী, মায়ের অবস্থাও একই রকম। গত এক বছর ধরে অনেক দৌড়ঝাঁপ করে নথি জমা দিয়েছি, শুনানিতে হাজির হয়েছি। তার পরেও ফল শূন্য।’’ এর পরে এত দৌড়ঝাঁপ কে করবে, কী করেই বা করবে তা বুঝে উঠতে পারছে না ধীরাজ। তিনি বলেন, ‘‘দেশ না থাকলে চাকরিই বা থাকবে কি করে! জানি না কী হবে!’’
ধীরাজরা কয়েক পুরুষ অসমের মোরিগাঁও জেলার বাসিন্দা। তিনি ১৯৬৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৭০ সালে স্নাতক হন মোরিগাঁও কলেজ থেকে। ১৯৭৫ সালে চড়াইবারি জিএ স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান তিনি। ধীরাজ জানান, নথি হিসেবে তাঁর ঠাকুরদা প্রফুল্ল চন্দের ১৯৫৪ সালের জমির দলিল জমা দেওয়া হয়েছিল। তাঁর বাবার স্কুল-কলেজের নথি থেকে শুরু করে সব কাগজও জমা দেওয়া হয়। ১৯৬৫ সালের তাঁদের পরিবারের সকলের নাম যে ভোটার তালিকায় ছিল, তার নথিও জমা পড়ে। কিন্তু তার পরেও এনআরসি-র খসড়া তালিকায় তাঁদের নাম ওঠেনি।
ধীরাজ নিজের সমস্ত নথিও জমা করেন। সেনায় চাকরি পাওয়া, পরে বাংলার দমকল দফতরের চাকরির নথিও জমা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে তাঁরা ফের এনআরসি কেন্দ্রে সব নথি দিয়ে আবেদন করেছিলেন। তাঁদের পরিবারের সকলেই শুনানিতে হাজির হন। ধীরাজের দাবি, তখন তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়, চূড়ান্ত তালিকায় তাঁদের নাম থাকবে। কিন্তু তালিকা দেখে হতাশ তাঁরা। ধীরাজ বলেন, ‘‘বাবা নিজ দেশে পরবাসী হয়েছেন জানার পরে পুরো শয্যা নিয়েছেন।’’
এনআরসি-র তালিকায় নাম নেই দুর্গাপুরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে অপরূপা মুখোপাধ্যায় বর্মণেরও। অপূর্ববাবুর স্ত্রী তথা দুর্গাপুরের ডেপুটি মেয়র অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় জানান, মেয়ে অপরূপার বিয়ে হয়েছে গুয়াহাটির বাসিন্দা হিমাংশু বর্মণের সঙ্গে। কর্মসূত্রে এখন স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে হিমাংশু গুজরাতে থাকেন। অনিন্দিতাদেবী জানান, এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকায় জামাই ও নাতনির নাম থাকলেও মেয়ে ও নাতির নাম নেই। অপূর্ববাবুর বাবা, প্রয়াত আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায় ছিলেন কংগ্রেসের সাংসদ। মঙ্গলবার ফোনে অপরূপা জানান, তিনি দাদুর পাসপোর্ট, বাড়ির পুরনো দলিল-সহ নানা নথিপত্র জমা দিয়েছিলেন। তার পরেও তালিকায় নাম ওঠেনি কেন, তা এখনও জানতে পারেননি। দিন দশেকের মধ্যে তা জানা যাবে বলে প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে। অপরূপা বলেন, ‘‘আমি গুজরাতে। এখন সব কাগজ দিয়ে আবেদন করতে হলে বারবার যাতায়াত করতে হয়, সেটা তো বড় হয়রানি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy