তফসিলি জাতি-উপজাতির উপর অত্যাচার প্রতিরোধ আইনের প্রয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে যে রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত, তা পুনর্বিবেচনা করতে বিচারপতিরা রাজি হয়েছেন। কিন্তু ওই রায়ে আপাতত কোনও স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে না। —ফাইল চিত্র।
দেশজোড়া সমালোচনার মুখে পিছু হঠল কেন্দ্র। কোনও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ‘ভুয়ো খবর’ পরিবেশনের অভিযোগ উঠলে তাঁর সরকারি অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড তৎক্ষণাৎ সাময়িক ভাবে বাতিল করা হবে— সোমবার এমনই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। সংবাদমাধ্যমে এই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া তো হলই, সংসদেও বিরোধীদের প্রবল আক্রমণের মুখে পড়তে হল সরকারকে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে (পিএমও) নির্দেশিকা জারি করে বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করতে বলা হল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রককে। নির্দেশ মেনে মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি তুলে নিল স্মৃতি ইরানির মন্ত্রক।
ভুয়ো খবরের উপর নজরদারি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতা প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া-কে (পিসিআই) দেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার স্বার্থেই সরকারের হাতে সরাসরি এই নজরদারির দায়িত্ব না রেখে পিসিআই-এর মতো স্বশাসিত সংস্থার উপর তা ন্যস্ত হয়েছে। কিন্তু সোমবার স্মৃতি ইরানির মন্ত্রক যে বিবৃতি জারি করেছিল, তা প্রেস কাউন্সিলের কর্তৃত্বকে খর্ব তো করছিলই, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিচ্ছিল।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, কোনও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যদি ভুয়ো খবর লেখার অভিযোগ ওঠে, তা হলে তৎক্ষণাৎ তাঁর অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ‘সাসপেন্ড’ করা হবে। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তার সত্যতা খতিয়ে দেখার জন্য প্রিন্ট ও ব্রডকাস্ট মিডিয়ার শীর্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ১৫ দিন সময় পাবে। যদি প্রমাণিত হয় যে, সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তা হলে তাঁর অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড স্থায়ী ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: তফসিলি আইন প্রয়োগে বিধিনিষেধ বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট
সোমবার রাতের এই বিজ্ঞপ্তি অসন্তোষ তৈরি করে সংবাদমাধ্যমে। বিভিন্ন মিডিয়ার সম্পাদকরা অসন্তোষ ব্যক্ত করেন। মঙ্গলবার সকালে সংসদে সরব হয় বিরোধী দলগুলি। নির্বাচন এগিয়ে আসছে বলে কি সরকার সরাসরি সংবাদমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চাইছে? সাংবাদিকদের কি সন্ত্রস্ত করে রাখার চেষ্টা হচ্ছে? বিরোধীদের তরফ থেকে এই প্রশ্ন তোলা হয়। কংগ্রেস এবং বামেরা সংসদেই সরব হয়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের এই বিজ্ঞপ্তির সমালোচনা করেন।
I appreciate the attempt to control fake news but few questions for my understanding:
— Ahmed Patel (@ahmedpatel) April 2, 2018
1.What is guarantee that these rules will not be misused to harass honest reporters?
2.Who is going to decide what constitutes fake news ?
1/2
কংগ্রেস সাংসদ তথা সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলও টুইট করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ দায়ের হবে এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অ্যাক্রেডিটেশন সাসপেন্ড করে রাখা হবে, এমনটা হওয়া কি সম্ভব নয়?’’ আহমেদ পটেলের আরও প্রশ্ন, ‘‘কী নিশ্চয়তা রয়েছে যে, এতে ভুয়ো খবর রোখা যাবে? নাকি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অস্বস্তিকর খবর প্রকাশ করা থেকে সৎ সাংবাদিকদের নিরস্ত করার চেষ্টা এটি?’’
আহমেদ পটেলের এই টুইটের জবাব দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি নিজেই। তীব্র কটাক্ষে ঠাসা টুইটে স্মৃতি লেখেন, ‘‘আপনি জেগে আছেন দেখে আনন্দিত হলাম আহমেদ পটেলজি।’’ আহেমদ পটেল নিজের টুইটে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কোন খবর ভুয়ো, কোনটা নয়, সেটা স্থির করবে কে? স্মৃতি জবাবে লেখেন, পিসিআই এবং এনবিএ (নিউজ ব্রডকাস্টার অ্যাসোসিয়েশন) খতিয়ে দেখবে, কোন খবর ভুয়ো।
Glad to see you awake @ahmedpatel ji whether a News article / broadcast is fake or not will be determined by PCI & NBA; both of whom I’m sure you know are not controlled/ operated by GOI.
— Smriti Z Irani (@smritiirani) April 2, 2018
সমালোচকদের দিকে তিনি যতই শ্লেষ ছুড়ে দিন, চাপ যে ক্রমশ বাড়ছে, স্মৃতি নিজেও তা সম্ভবত বুঝতে পারছিলেন। তাই টুইটারে তিনি লিখেছিলেন, ভুয়ো খবর সংক্রান্ত বিষয়ে যে নির্দেশিকা তাঁর মন্ত্রক জারি করেছে, তার পরিমার্জন বা সংশোধন সংক্রান্ত প্রস্তাব তিনি খতিয়ে দেখতেই পারেন। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাইলে, তিনি প্রস্তুত। এমনও জানান স্মৃতি।
আরও পড়ুন: দলিত ইস্যুতে উত্তাল সংসদ, ধর্নায় তৃণমূলও
প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত আর এই ‘অতিসক্রিয়তা’ মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই স্মৃতি ইরানির টুইটের কিছুক্ষণের মধ্যেই পিএমও-র তরফ থেকে নির্দেশিকা জারি করা হয়। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রককে বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করতে বলা হলা। শুধু তাই নয়, পিএমও-র নির্দেশিকায় ফের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া-ই (পিসিআই) নজর রাখবে ভুয়ো খবরের উপরে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন যে প্রধানমন্ত্রী দেখছেন না, তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
পিএমও-র নির্দেশ পেয়েই অবস্থান বদলাতে বাধ্য হন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। তাঁর মন্ত্রকের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সোমবার রাতে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy