দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বদলির বিরুদ্ধে আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চিঠি লিখলেন দেশের ছয় রাজ্যের বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান। তাঁরা জানিয়েছেন, বিচারপতি বর্মাকে বদলি করা ঠিক হবে না। বরং তাঁকে সমস্ত রকম কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত। এই মর্মে আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নাকে চিঠি লিখেছেন বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধানেরা। চিঠি পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে বিচারপতি খন্না তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁদের আশ্বস্ত করেন।
বিচারপতি বর্মার বদলির বিরোধিতা করে দেশের প্রধান বিচারপতিকে যাঁরা চিঠি লিখেছেন, তাঁদের মধ্যে গুজরাত হাই কোর্ট, ইলাহাবাদ হাই কোর্ট, কর্নাটক হাই কোর্ট, কর্নাটক হাই কোর্ট এবং লখনউয়ের বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান রয়েছেন। দিল্লিতে বিচারপতি বর্মার সরকারি বাংলো থেকে প্রচুর পরিমাণে নগদ টাকা পাওয়া গিয়েছে। দোলের ছুটি চলাকালীন তাঁর বাংলোতে আগুন লেগে গিয়েছিল। সেই আগুন নেভাতে গিয়ে নগদ টাকা দেখতে পায় দমকল বাহিনী। ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি খন্নার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম বিচারপতি বর্মাকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর আগে ওই হাই কোর্টেই ছিলেন বিচারপতি বর্মা। যদিও পরে সুপ্রিম কোর্টের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, বিচারপতি বর্মাকে বদলির সিদ্ধান্তের সঙ্গে নগদ উদ্ধারের ঘটনার কোনও যোগ নেই।
আরও পড়ুন:
ছয় বার অ্যাসোয়িসেশনের প্রধান দেশের প্রধান বিচারপতিকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন, নগদ উদ্ধারের ঘটনায় বিচারপতি বর্মাকে জবাবদিহি করতে হবে। তাঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত তদন্ত করা প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামকে বার প্রধানেরা বিচারপতি বর্মার বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন। তাঁদের অনুরোধ, বিচারপতি বর্মাকে সমস্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকেই অব্যাহতি দেওয়া হোক। ইতিমধ্যে তাঁকে বিচারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে দিল্লি হাই কোর্ট।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, বার অ্যাসোসিয়েশনের দাবি বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি খন্না। এই বৈঠকে সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়ামের অন্য সদস্যেরাও ছিলেন।
নগদ উদ্ধারকাণ্ডের পর বিচারপতি বর্মার বদলির সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবাদ করেছিল ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন। তাদের বক্তব্য ছিল, ‘ইলাহাবাদ হাই কোর্ট কোনও আবর্জনা ফেলার পাত্র নয়’। ২৫ মার্চ থেকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন কর্মবিরতিও পালন করছে। তাদের পাশেই দাঁড়িয়েছে বাকি পাঁচ বার অ্যাসোসিয়েশনও। একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘সকল বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ইলাহাবাদে দেখা করবেন এবং বিচারপতি বর্মার বদলির বিরোধিতায় ইলাহাবাদ বার অ্যাসোসিয়েশনের দাবির প্রতি সমর্থন জানাবেন।’’
বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্তের জন্য ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট একটি কমিটি গঠন করেছে। তিন সদস্যের সেই কমিটিতে আছেন হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং কেরল হাই কোর্টের এক বিচারপতি। এ বিষয়ে দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিকে উপাধ্যায় একটি রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে জমা দিয়েছেন। গোটা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য সেই রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আপলোডও করা হয়েছে।