দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাসভবনে অগ্নিকাণ্ডের প্রায় আট ঘণ্টা পরে নগদ উদ্ধারের বিষয়টি জানতে পারে দিল্লি পুলিশের সদর দফতর! ‘নগদকাণ্ডে’ এ বার প্রকাশ্যে এল এমনই তথ্য। এর পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, দমকলকর্মীরা রাশি রাশি আধপোড়া নোট দেখার পরেও দীর্ঘ আট ঘণ্টা ধরে কোনও পদক্ষেপ কেন করল না পুলিশ? এমনই আরও নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তিন বিচারপতির কমিটি।
যদিও দিল্লি পুলিশের কয়েক জন ঊর্ধ্বতন কর্তা এই দাবি অস্বীকার করেছেন। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে তাঁরা জানিয়েছেন, যখন তাঁরা ঘটনাটি জানতে পারেন, তত ক্ষণে প্রায় আট ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৪ মার্চ রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আগুন লাগার খবর জানান বিচারপতি বর্মার ব্যক্তিগত সহকারী। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকল। মধ্যরাত নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। পুলিশের দাবি, আগুন নেভার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছোন পাঁচ পুলিশকর্মী। তবে বিচারপতি বা তাঁর স্ত্রী কেউই না থাকায় তাঁর সহকারী পুলিশকে ফিরে যেতে বলেন। সূত্রের খবর, এর পর ১৫ তারিখ ভোরেও ঘটনাস্থলে পৌঁছোন তদন্তকারীরা। অভিযোগ, তখনও তাঁদের ফিরতে হয় খালি হাতেই। শেষে সকাল ৮টা নাগাদ অতিরিক্ত ডিসিপি (নয়াদিল্লি) সকালের ডায়েরিতে আগুনের বিস্তারিত বিবরণ নথিভুক্ত করেন। পুলিশ কমিশনারকে বিষয়টি জানানো হয়। দেখানো হয় অগ্নিকাণ্ডের পর তোলা ভিডিয়োগুলিও। সূত্রের খবর, শেষমেশ বিকেল ৪টে ৫০ মিনিট নাগাদ পুলিশের তরফে দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিকে উপাধ্যায়কে ঘটনাটি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
আরও পড়ুন:
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, গত ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বিচারপতি বর্মার নিরাপত্তার দায়িত্বে ৪০ জন সিআরপিএফ কর্মী এবং দিল্লি পুলিশের তিন জন কর্মীকে পালাক্রমে তাঁর বাড়ির বাইরে মোতায়েন করা হয়েছিল। এর পরেই প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ প্রহরা থাকা সত্ত্বেও কেন ঘটনার রাতে বিচারপতির বাড়ি তল্লাশি করে দেখা হল না? কেন উপস্থিত পুলিশকর্মীরা বিষয়টি নথিবদ্ধ করলেন না, সে প্রশ্নও উঠেছে। যদিও এ বিষয়ে কোনও উত্তর দেননি দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র এবং ডিসিপি (নয়াদিল্লি)। তবে সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের সময় প্রথম উপস্থিত থাকা পাঁচ জন পুলিশকর্মী তাঁদের ফোন দিল্লি পুলিশের সদর দফতরে জমা দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার গঠিত তিন বিচারপতির কমিটির তদন্তে এই ফোনগুলি ব্যবহার করা হবে।
গত ১৫ মার্চ, অর্থাৎ হোলির দিন বিচারপতি বর্মার বাংলোয় আগুন লেগে গিয়েছিল। দমকলকর্মীরা আগুন নেভাতে গিয়ে বাংলোয় রাশি রাশি নগদ টাকা দেখতে পান বলে অভিযোগ। তাঁদের কাছ থেকেই খবর পায় পুলিশ। পরে পুলিশ গিয়ে টাকা উদ্ধার করে। বিচারপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত শনিবার তিন বিচারপতির কমিটি গঠন করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। এই কমিটিতে রয়েছেন পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি শীল নাগু, হিমাচল প্রদেশ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি জিএস সান্ধাওয়ালিয়া এবং কর্নাটক হাই কোর্টের বিচারপতি অনু শিবরমন। সূত্রের খবর, শীঘ্রই তাঁরা দিল্লিতে অনুসন্ধান শুরু করবেন। জানা যাচ্ছে, ওই কমিটি বিচারপতি বর্মার কাছ থেকে ব্যাখ্যাও চাইতে পারে। সেই সঙ্গে দমকলবাহিনীর কর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন কমিটির সদস্যেরা। পাশাপাশি, বিচারপতি বর্মার কল রেকর্ড ফরেন্সিক বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হবে। অন্য দিকে, বুধবার সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। বিচারপতি বর্মার বাসভবন থেকে উদ্ধার হওয়া নগদের বিষয়ে আলোচনা হবে সেই বৈঠকে।