গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
চার দিনে লোকসভা এবং রাজ্যসভা মিলিয়ে সাসপেন্ড সাংসদের সংখ্যা ১৪৩! ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস বলছে, দ্বিতীয় নরেন্দ্র মোদীর সরকারের আমলের সংসদের শেষ শীতকালীন অধিবেশন নতুন নজির গড়েছে সাংসদ সাসপেনশনে। ভেঙে দিয়েছে, ১৯৮৯ সালে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর জমানার শেষ বাজেট অধিবেশনের ‘রেকর্ড’।
১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার তদন্তে গঠিত ঠক্কর কমিশনের রিপোর্ট পেশের দাবিতে রাজীবের জমানায় দাবি উঠেছিল সংসদে। ১৯৮৯ সালের মার্চে বাজেট অধিবেশনের সময় সংসদে রিপোর্ট পেশের আগেই তা ফাঁস হয়ে যায় সংবাদপত্রে। তাতে দেখা যায়, ইন্দিরা হত্যার ষড়যন্ত্রে কমিশনের সন্দেহের তালিকায় থাকা কংগ্রেস নেতা আরকে ধওয়ান রাজীবের ‘টিমে’ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন।
বিরোধী সাংসদেরা এই বিষয় দু’টিকে হাতিয়ার করে সংসদে বিক্ষোভ জানাতে থাকেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে দু’কক্ষের মোট ৬৩ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল সে সময়। ওই ঘটনার কয়েক মাস পরেই লোকসভা ভোটে জনতা দল, বিজেপি, বামেদের বিরোধী জোট ‘ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (জাতীয় মোর্চা)-এর কাছে হেরে গিয়েছিল কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছিলেন রাজীব।
মোদী জমানায় বিতর্কের কেন্দ্রে নতুন সংসদ ভবনের নিরাপত্তা। গত ২৮ মে বিপুল সমারোহে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেপ্টেম্বরে গণেশ চতুর্থী তিথিতে অধিবেশন শুরু হয়েছিল নতুন ভবনে। কিন্তু তার তিন মাসের মধ্যেই সুরক্ষার গুরুতর গাফিলতি দেখা গেল। গত ১৩ ডিসেম্বর তিন স্তরের সুরক্ষা বলয় টপকে কী ভাবে চার বিক্ষোভকারী গ্যাস-ক্যানিস্টার নিয়ে ভবনের সংরক্ষিত এলাকায় পৌঁছে গেলেন, এমনকি তাঁদের মধ্যে দু’জন লোকসভার অধিবেশনে ঢুকে দর্শক আসন থেকে ফ্লোরে ঝাঁপ মারার সুযোগ পেলেন, তা নিয়ে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় সরব হয়েছেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সাংসদেরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিবৃতির দাবিতে ওয়েলে নেমে স্লোগান তুলছেন তাঁরা।
আর তার পর থেকেই চলছে ধারাবাহিক সাসপেনশনের পালা। যাকে বিরোধীরা বলছেন, ‘গণতন্ত্রের সাসপেনশন’। গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ সামাল দিতে না-পেরে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় শীতকালীন অধিবেশনের বাকি দিনগুলির জন্য সাসপেন্ড করেন তৃণমূলের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনকে। লোকসভায় সাসপেন্ড করা হয় প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী-সহ ১৪ বিরোধী সাংসদকে। পরে দেখা যায় তাঁদের মধ্যে এক জন সভাতে হাজির না থাকা সত্ত্বেও শাস্তির কবলে পড়েছেন!
এর পর শুক্রবারও বিরোধীদের প্রবল প্রতিবাদের জেরে সোমবার পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে গিয়েছিল দুই কক্ষের অধিবেশন। সোমবার দুই কক্ষ মিলিয়ে মোট ৭৮ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়। মঙ্গলবার আবার প্রায় ৫০ জনের বেশি সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়। বুধবার কেরল থেকে নির্বাচিত দুই বিরোধী সাংসদ সাসপেন্ড হয়েছেন। অর্থাৎ, গত চার দিনের অধিবেশন-পর্বে লোকসভা এবং রাজ্যসভা থেকে মোট ১৪৩ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে লোকসভার সাংসদ ৯৭ জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy