Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

একরাশ প্রশ্নের মুখে শিবরাজ, ঠান্ডা মাথায় খুন বলছে বিরোধীরা

আবার ভুয়ো সংঘর্ষের ভূত বিজেপি-রাজ্যে! ভোপালের জেল থেকে বিচারাধীন বন্দি, ৮ সিমি সদস্যের পালানো ও ৭ ঘণ্টার মধ্যেই তাদের সকলকে নিকেশ করার ঘটনা খুলে দিল একরাশ বিতর্কের ঝাঁপি! যার সূত্রে ফের উঠে আসছে ইশরাত জহান ভূয়ো সংঘর্ষের প্রসঙ্গ।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৫৬
Share: Save:

আবার ভুয়ো সংঘর্ষের ভূত বিজেপি-রাজ্যে! ভোপালের জেল থেকে বিচারাধীন বন্দি, ৮ সিমি সদস্যের পালানো ও ৭ ঘণ্টার মধ্যেই তাদের সকলকে নিকেশ করার ঘটনা খুলে দিল একরাশ বিতর্কের ঝাঁপি! যার সূত্রে ফের উঠে আসছে ইশরাত জহান ভূয়ো সংঘর্ষের প্রসঙ্গ। দু’টি ঘটনাই ঘটেছে রাজ্যে বিজেপির সরকার থাকা কালে। ২০০৪ সালের ১৫ জুন গুজরাতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ইশরাত জহান-সহ চার জনের মৃত্যুতে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল রাজ্যের. তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকে। এ বার অভিযোগের আঙুল মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিংহ চৌহানের সরকারের দিকে।

গত কাল ৮ বন্দির মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসতেই শুরু হয়ে গিয়েছিল রাজনৈতিক চাপানউতোর। যে বিতর্কে ইন্ধন জুগিয়েছে ৩টি ভিডিও। যার একটিতে দেখা গিয়েছে, এক পুলিশকর্মী ঠান্ডা মাথায় বুলেট বৃষ্টি করছে এক জেলছুট বন্দির দিকে। দ্বিতীয়টিতে এক ব্যক্তি সিমি সদস্যের পকেটে থেকে একটি ছুরি জাতীয় বস্তু বার করে দেখিয়ে আবার সেখানেই রেখে দিচ্ছে। আর তৃতীয়টিতে, পাঁচ জন সিমি সদস্য টিলার উপরে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলছে। তার পরেই শোনা গিয়েছে গুলির শব্দ। ভিডিওগুলি সামনে আসার পরেই গোটা ঘটনাটি ‘সাজানো সংঘর্ষ’ নয়তো— এই প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের দ্বিগ্বিজয় সিংহ, আরজেডির লালুপ্রসাদ বা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের মতো ঘোষিত বিজেপি-বিরোধীরা। অভিযোগ উঠেছে, ছক কষে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে ওই ৮ জনকে। গোটা ঘটনাটিকে সংঘর্ষ বলে দাবি করে গেলেও হিসেবের কড়ি মেলাতে পারছে না শিবরাজ সরকার। সংঘর্ষটি ভূয়ো কি না তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘‘যে নিরাপত্তারক্ষীদের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়তে হয়, কেবল ভিডিও-র ভিত্তিতে তাদের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়।’’

কেন্দ্র পাশে দাঁড়ালেও শিবরাজ সরকার কিছুতেই অস্বস্তি এড়াতে পারছে না। ঘটনার পরে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা কেটে গেলেও ঘটনার টুকরো টুকরো অংশ জুড়ে নিখুঁত একটা চিত্রনাট্য তুলে ধরতে কার্যত ব্যর্থ মধ্যপ্রদেশ সরকার। উল্টে প্রশাসন ও রাজ্যের মন্ত্রীদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব হাওয়া জুগিয়েছে ভুয়ো সংঘর্ষের তত্ত্বেই। এরই মধ্যে শিবরাজের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ওই বন্দিদের মৃত্যু নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে তারা। চাপের মুখে শিবরাজ সরকার এর তদন্তভার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা তথা এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশ্ন শুধু ৮ জেলছুটের মৃত্যু নিয়ে নয়। একসঙ্গে এত জনের পালিয়ে যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন কম নয়। বিশেষ করে ভোপালের কেন্দ্রীয় কারগারটি যেখানে নিরাপত্তা ও পরিষেবার দিক দিয়ে দেশের সেরা জেল হিসেবে আইএসও শংসাপত্র পেয়েছিল বারো বছর আগেই।

প্রথম প্রশ্ন: কুখ্যাত বন্দিরা থাকা সত্ত্বেও গোটা জেল চত্বরের সিসিটিভি কেন খারাপ ছিল? প্রশ্ন দুই: বলা হচ্ছে, জেলের ৭০ জন রক্ষীর মধ্যে ৩০ জন দীপাবলির ছুটিতে ছিল। বন্দিদের পালিয়ে যাওয়ার জন্যই নিরাপত্তায় ঢিল দেওয়া হয়েছিল? প্রশ্ন তিন: সিমি সদস্যদের উপরে নজর রাখার ভার ছিল যাঁদের, তাঁরা নাকি সে রাতে ঘুমাচ্ছিলেন। এটা কি ইচ্ছাকৃত? গাফিলতি যে হয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের জেলমন্ত্রী কুসুম মেহদালে। তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘এটা সত্যি সিসিটিভি খারাপ ছিল। এটা নিরাপত্তার বড় খামতি। জওয়ানরা কেন ঘুমোচ্ছিলেন, তদন্ত হবে।’’

প্রশ্ন চার: বন্দিরা চাবি পেল কী করে? প্রাথমিক তদন্তে বলা হচ্ছে, জঙ্গিরা টুথব্রাশে পেরেক লাগিয়ে চাবি বানিয়ে ফেলেছিল। আজ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ স্বীকার করেছেন, জঙ্গিরা, বাসন, জিভ-ছোলা, টুথব্রাশ দিয়ে মাস্টার চাবি ও অনান্য চাবির নকল বানিয়ে ফেলেছিল।

কিন্তু যেটা কারও হজম হচ্ছে না, তা হল, জেলের সব থেকে সুরক্ষিত এলাকা অ্যান্টি টেরর সেলের চাবি জোগাড় হল আর কারারক্ষীরা কিছু জানতে পারল না! রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহের স্বীকারোক্তি, ‘‘জেল ভাঙার বিষয়ে কোনও আগাম গোয়েন্দা তথ্য ছিল না।’’

প্রশ্ন পাঁচ: বলা হচ্ছে জেলছুটদের কাছ থেকে ৭টি বন্দুক ও গুলি পাওয়া গিয়েছে। এগুলি তারা পেল কী ভাবে? জেলের ভিতরেই কি অস্ত্র পেয়েছিল জঙ্গিরা? নাকি বাইরে আসার পরে কারও কাছ থেকে তারা এগুলি পেয়েছিল? পুলিশের দাবি, পালানোর সময়ে একা বা একাধিক ব্যক্তি তাদের জন্য রাস্তায় বন্দুক নিয়ে অপেক্ষা করেছিল। তারাই হাতিয়ার জুগিয়েছে। পুলিশ ঘিরে ফেললে আত্মসমর্পণের বদলে তারা ৬ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পুলিশকে বাধ্য হয়ে গুলি ছুড়তে হয়।

প্রশ্ন ছয়: পুলিশের এই বক্তব্যও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। সাহায্যকারীরা কেন শুধু অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করল? বন্দুক যারা জোগাল, তারা কেন গাড়িতে করে আরও দূরে পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করল না? প্রশ্ন সাত: জঙ্গিরা অস্ত্র পাওয়ার পরেও কেন গাড়ি বা ট্রাক ছিনতাই করে দূরে পালানোর চেষ্টা করল না? কেন জেল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে নির্জন প্রান্তরে গিয়ে পৌঁছল? প্রশ্ন আট: আট জনকেই একসঙ্গে পাওয়া গেল কেন? প্রশিক্ষণের সময়েই জঙ্গিদের শেখানো হয় রক্ষীদের নজর এড়াতে কী ভাবে দু’-তিন জনের দল বানিয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়তে হয়। যাতে পিছু ধাওয়াকারীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। প্রশ্ন নয়: মৃতদের পরনে ছিল টি-শার্ট, জিন্স ও পায়ে স্নিকার্স। বিচারধীন বন্দিরা সাধারণত জেলের পোশাকে থাকে। ওই জামাকাপড় তবে এল কোথা থেকে? এই প্রশ্নে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহের দাবি, ‘‘বিচারাধীন বন্দি হিসেবে তাদের সাধারণ পোশাক পরার অধিকার ছিল।’’ প্রশ্ন দশ: এনকাউন্টারের দরকার ছিল কি? বিশেষ করে যখন জঙ্গিদের চার দিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছিল বলেই ভিডিওতে শোনা গিয়েছে। মধ্যপ্রদেশ পুলিশের আইজি যোগেশ চৌধুরির দাবি, ‘‘ওই সিমি সদস্যরা পুলিশের দিকে গুলি ছোড়ায় বাধ্য হয়ে পুলিশকে গুলি ছুড়তে হয়।’’

প্রশ্ন এগারো: নিহতদের কপালে ও বুকে গুলির ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। অথচ ওরা ছিল পাহাড়ের উপরে। সুবিধেজনক অবস্থানে। ফলে নিচ থেকে তাদের কপাল ও বুক লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে কী ভাবে নিরাপত্তারক্ষীরা হত্যা করল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

শিবরাজ এখন এই এক রাশ প্রশ্নের মুখে দিশাহারা। এর মধ্যেই বিতর্ক বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর আর্জি, ‘‘দোহাই সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করবেন না এ নিয়ে।’’ বিরোধীরা অবশ্য মেরুকরণেরই মেঘ দেখছেন এতে।

অন্য বিষয়গুলি:

SIMI terrorists Encounter opposition questioning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy