Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Sheikh Hasina-Narendra Modi Meet

চিনের সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক থাকলেও রক্তের বন্ধু ভারত, মোদীর বাসভবনে বৈঠক সেরে বার্তা হাসিনার

বাড়ির দরজায় এসে হাসিমুখে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর-সহ দু’দেশের কর্তারা।

শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:১৭
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে তাঁর সঙ্গে দেড় ঘণ্টা বৈঠক করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার হস্তক্ষেপ ও চাপের কথা যেমন তুললেন হাসিনা, মোদীকে আশ্বস্ত করলেন— চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিতান্তই বাণিজ্যিক ও আর্থিক। রক্তের সম্পর্ক মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গী ভারতের সঙ্গেই। নির্বাচন নিয়ে দুই নেতার কী কথা হয়েছে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছেন, “নির্বাচন নিয়ে আমাদের সামনে তাঁদের কোনও কথা হয়নি।” বাংলাদেশে ভোটের আগে এ’টিই তাঁর শেষ নয়াদিল্লি সফর, এবং এই সফরের গুরুত্ব যথেষ্ট বলেই মনে করা হচ্ছে।

বাড়ির দরজায় এসে এ দিন বিকেলে হাসিমুখে হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান মোদী। গোটা বৈঠকটিই হয়েছে ইতিবাচক উষ্ণ আবহে। উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর-সহ দু’দেশের কর্তারা। ছিলেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী মোমেন। দু’দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে গবেষণায় সহযোগিতার জন্য ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব রিসার্চ এবং বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিল মউ স্বাক্ষর করেছে। এ ছাড়া দু’দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে ‘রুপে কার্ড’ সংক্রান্ত চুক্তিপত্রে সই হয়েছে।

জি২০ শীর্ষ বৈঠকে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে সংক্ষিপ্ত সফরে দিল্লি এসেছেন হাসিনা। আজ তাঁর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে নিজের এক্স হ্যান্ডলে মোদী বাংলায় লিখেছেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। গত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক।’’ তিনি আরও জানান, ‘‘আমাদের আলোচনায় বাণিজ্যিক সংযোগ, সার্বিক সংযুক্তি এবং আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।” বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, কথাবার্তা হয়েছে ‘আন্তরিক এবং খোলামেলা পরিবেশে’। ‘পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস এবং মৈত্রীর’ প্রতিফলন ঘটেছে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের আলোচনায়।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কিছু ক্ষণ পরেই আজ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন মোদী। বাইডেনের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে আন্তর্জাতিক ভূকৌশলগত পরিস্থিতির পাশাপাশি আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন দক্ষিণ এশিয়ার ভূকৌশলগত রণনীতিতে নিঃসন্দেহে একটি বড় ঘটনা। আজ বৈঠকের পরে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, মোদী-হাসিনা বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়টি উঠেছে কি না। মেমেন জানিয়েছেন, তাঁদের সামনে এ নিয়ে আলোচনা হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তির উত্থানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের জন্য এবং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য মঙ্গলকর। এ ব্যাপারে ভারতও একমত।” মোমেন হাসিনার গত সাড়ে চোদ্দো বছরের শাসনকালে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন যজ্ঞের কথা বলেন। জানিয়েছেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত‌-এ ইসলামি-র জমনায় জঙ্গি-সন্ত্রাস ও গ্রেনেড হামলার বিস্তারিত তথ্য। ভোটে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপি-র নির্বাচনী অন্তর্বর্তী সরকারের দাবিটি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মোমেন তা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “বিষয়টির আইনি বৈধতা নেই। নির্বাচন পরিচালনা করবে ক্ষমতাসীন সরকারই।”

বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে এ বিষয়ে মুখ না খুললেও সূত্রের খবর, আজ বৈঠকে হাসিনা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমের তৈরি করা প্রবল চাপের কথা উল্লেখ করেছেন মোদীর কাছে। জানিয়েছেন, এর ফলে আঞ্চলিক অসাম্য এবং সন্ত্রাসবাদ উৎসাহ পাবে। সূত্রের খবর, একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ কথাও মোদীকে জানিয়েছেন যে, চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক একান্তই বাণিজ্যিক। ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই যে বাংলাদেশ চিনের দিকে চলে গিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গী হিসাবে বাংলাদেশের রক্তের বন্ধন ভারতের সঙ্গে। তা অটুট থাকবে।

অন্য বিষয়গুলি:

sheikh hasina Narendra Modi G20 Summit 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE