—প্রতীকী ছবি।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পরে বেশ কিছু দিন কেটে গেলেও এখনও বিজেপির অন্দরে ক্ষোভ থামছে না। দিলীপ ঘোষ, সৌমিত্র খাঁ, জগন্নাথ সরকারের মতো নেতারা দলেরই একাংশকে এই হারের জন্য দায়ী করেছিলেন। এ বার এই নিয়ে মুখ খোলার প্রবণতা শুরু হয়েছে আরও গভীরে। বিভিন্ন সময়ে দলের দায়িত্বভার সামলানো সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ নেতাদের নিশানায় এ বার দিল্লির মনোনীত পর্যবেক্ষকেরা।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে সুনীল বনসলকে বাংলা, ওড়িশা ও তেলঙ্গানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বাংলার পর্যবেক্ষক নিযুক্ত করা হয়েছিল বিহারের বিজেপি-জোট সরকারের মন্ত্রী মঙ্গল পাণ্ডেকে। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন অমিত মালবীয়। পরে একই পদে যুক্ত করা হয় রাঁচীর প্রাক্তন মেয়র আশা লকড়াকে। এ ছাড়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদে আনা হয় সতীশ ধন্ডকে। অভিযোগ, বাংলার মাটিকে তাঁরা চিনতে অক্ষম হয়েছেন বলেই দিল্লিতে যে রিপোর্ট গিয়েছে, তার সঙ্গে বাংলার ‘বাস্তবতা’র কোনও সম্পর্ক নেই। ভোটে দলের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার সেটাই অন্যতম বড় কারণ।
এক বিজেপি নেতার কথায়, “পাঁচ তারা হোটেলে থেকে দল চালালে কোনও দিনই বাংলার মাটি সম্পর্কে ধারণা তৈরি হবে না! ওঁরা এসেছেন। পাঁচ তারা হোটেলে বৈঠক করেছেন। চলে গিয়েছেন। কোনও দিন কোনও কর্মীর সঙ্গে কথা বলেননি।” অপর এক নেতার অভিযোগ, “কল সেন্টার দিয়ে দল চলে নাকি? বাংলায় কী ভাবে রাজনীতি হয়, সেটাই এখনও ওঁরা বোঝেন না।’’ আবার অন্য আর এক নেতার ক্ষোভ, “রাজ্যে বিজেপি বলতে মানুষ যাঁদের বোঝেন, গত কয়েক বছরে তাঁদেরই দলে জায়গা হয়নি। বিজেপি কর্মীরা বেরিয়ে যাঁদের দেখেছেন, তাঁদের তাঁরা দলের নেতা হিসেবে মানতেই পারেননি। তাই ভরসাও তৈরি হয়নি। কর্মীরা বসে গিয়েছেন।”
এক নেতার কথায়, “আমার বাড়িতে অতিথি এলে তিনি তাঁদের সঙ্গে পরিচয় করবেন, যাঁদের সঙ্গে আমি পরিচয় করাতে চাইব। অতিথির পক্ষে তো আর জানা সম্ভব নয়, তাঁরা ছাড়া আমার অন্য কোনও আত্মীয় আছে কি না বা তাঁদের সঙ্গে আমার কী রকম সম্পর্ক! রাজ্য বিজেপির ক্ষেত্রে বিষয়টা তেমনই হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের যতটুকু দেখানো হয়েছে, ততটুকুই জেনেছেন। এর বাইরে আর কিছু জানেনও না। জানার চেষ্টাও করেননি।”
বিজেপি নেতা রাজকমল পাঠকের বক্তব্য, “যাঁরা দিল্লির প্রতিনিধি হিসেবে পর্যবেক্ষক হয়ে এসেছিলেন, তাঁরা এক বারও পুরনো কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন? বসে যাওয়া কর্মীদের থেকে জানতে চেয়েছেন? জেলায়, মণ্ডলে যে রিপোর্ট তাঁরা তৈরি করেছিলেন, সব ভুল! তাঁরা তো কে বিজেপি করে, কে করে না, তা-ই জানেন না। তা হলে ওই এলাকার কী অবস্থা জানবেন, কী করে? তাই বাস্তব রিপোর্ট না নিজেরা পেয়েছেন, না দিল্লিতে দিয়েছেন।’’
রাজ্য বিজেপির এক পোড় খাওয়া নেতার মতে, “কোন জেলার কোন বুথের কোন এজেন্ট খাবার পায়নি, সেই খবরও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেখেছেন। অথচ আমাদের দলের এক জনও নেই, যে বলতে পারবেন কোথায় কোন বুথে কত জন এজেন্ট হয়ে বসেছেন। এখানেই পার্থক্য থেকে যাচ্ছে।” যদিও রাজ্য বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “কে কোথায় এই সব অভিযোগ করেছে, আমার জানা নেই! জানা থাকলে প্রতিক্রিয়া দিতে পারতাম।”
ফলপ্রকাশের পরে ইতিমধ্যে দলীয় স্তরে দু’টি বৈঠক হয়েছে। কিন্তু ফলাফলের কাটাছেঁড়া খুব বেশি হয়নি বলেই সূত্রের খবর। একটি বৈঠকেও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত ছিলেন না। দলের এক রাজ্য নেতা এতটাই ‘বিরক্ত ও হতাশ’ যে, বৈঠক শেষের আগেই তিনি বেরিয়ে যান। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর বক্তব্য, “নেতাদের আচরণ দেখে মনেই হচ্ছে না, আদৌ কিছু হয়েছে বলে!’’ অন্য এক নেতার বক্তব্য, ‘‘যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এখন কাটাছেঁড়া করে লাভ নেই। তাতে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy