Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Param Vir Chakra

Savitri Khanolkar: মনেপ্রাণে ভারতীয় এই ‘মেমবউ’ সর্বোচ্চ সেনা-সম্মান পরমবীর চক্রের নকশা বানিয়েছিলেন

১৯১৩ সালে সুইৎজারল্যান্ডের ন্যুশাতেলে ইভের জন্ম। খুব অল্প বয়সে ব্রিটিশ ভারতের এক সেনার প্রেমে পড়েই এ দেশে এসেছিলেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:৪০
Share: Save:
০১ ১৩
ভারতের সর্বোচ্চ সেনা-সম্মান পরমবীর চক্র। ব্রোঞ্জ ধাতু দিয়ে তৈরি গোলাকার একটি পদক। দেড় ইঞ্চিরও ছোট ব্যাসের এই গোলাকার ধাতু ছুঁয়ে দেখার অধিকার অর্জন করা মুখের কথা নয়। প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের জীবনের দায়িত্ব নিয়ে প্রতিনিয়ত নিজেদের জীবন বাজি রেখে চলেছেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে থেকেই হাতে গোনা কয়েক জন সেই অধিকার লাভ করেন।

ভারতের সর্বোচ্চ সেনা-সম্মান পরমবীর চক্র। ব্রোঞ্জ ধাতু দিয়ে তৈরি গোলাকার একটি পদক। দেড় ইঞ্চিরও ছোট ব্যাসের এই গোলাকার ধাতু ছুঁয়ে দেখার অধিকার অর্জন করা মুখের কথা নয়। প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের জীবনের দায়িত্ব নিয়ে প্রতিনিয়ত নিজেদের জীবন বাজি রেখে চলেছেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে থেকেই হাতে গোনা কয়েক জন সেই অধিকার লাভ করেন।

০২ ১৩
পরমবীর চক্রের ভিতরের নকশা লক্ষ করলে দেখা যায়, তার এক পিঠের মাঝে রয়েছে অশোক চক্র এবং তাকে ঘিরে চারদিকে চারটি বজ্র। পুরাণ অনুসারে, ঋষি দধীচির আত্মত্যাগের পর তাঁর পাঁজরের হাড় দিয়ে তৈরি হয়েছিল দেবরাজ ইন্দ্রের অস্ত্র বজ্র। পরমবীর চক্রের এই বজ্র তাই আত্মত্যাগের পরিচয় বহন করে। চক্রের অন্য পিঠের মাঝখান ফাঁকা রাখা হয়েছে। চারপাশে ইংরাজি এবং হিন্দি অক্ষরে লেখা ‘পরম বীর চক্র’।

পরমবীর চক্রের ভিতরের নকশা লক্ষ করলে দেখা যায়, তার এক পিঠের মাঝে রয়েছে অশোক চক্র এবং তাকে ঘিরে চারদিকে চারটি বজ্র। পুরাণ অনুসারে, ঋষি দধীচির আত্মত্যাগের পর তাঁর পাঁজরের হাড় দিয়ে তৈরি হয়েছিল দেবরাজ ইন্দ্রের অস্ত্র বজ্র। পরমবীর চক্রের এই বজ্র তাই আত্মত্যাগের পরিচয় বহন করে। চক্রের অন্য পিঠের মাঝখান ফাঁকা রাখা হয়েছে। চারপাশে ইংরাজি এবং হিন্দি অক্ষরে লেখা ‘পরম বীর চক্র’।

০৩ ১৩
স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৫০ সাল থেকেই সেনাদের সম্মান জানাতে এই পরমবীর চক্র চালু করেছিল ভারত। আজও সেই একই নকশা-খচিত চক্র সর্বোচ্চ সম্মান হিসাবে সেনাদের দেওয়া হয়ে থাকে। দেশপ্রেমের প্রতীক এই চক্রের নকশা কিন্তু কোনও ভারতীয়ের হাতে হয়নি। এর নকশা বানিয়েছিলেন সুইৎজারল্যান্ডের এক মহিলা।

স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৫০ সাল থেকেই সেনাদের সম্মান জানাতে এই পরমবীর চক্র চালু করেছিল ভারত। আজও সেই একই নকশা-খচিত চক্র সর্বোচ্চ সম্মান হিসাবে সেনাদের দেওয়া হয়ে থাকে। দেশপ্রেমের প্রতীক এই চক্রের নকশা কিন্তু কোনও ভারতীয়ের হাতে হয়নি। এর নকশা বানিয়েছিলেন সুইৎজারল্যান্ডের এক মহিলা।

০৪ ১৩
তাঁর নাম ইভ ইভোনে। ১৯১৩ সালে সুইৎজারল্যান্ডের ন্যুশাতেলে ইভের জন্ম। খুব অল্প বয়সে ব্রিটিশ ভারতের এক সেনার প্রেমে পড়েই এ দেশে এসেছিলেন তিনি।

তাঁর নাম ইভ ইভোনে। ১৯১৩ সালে সুইৎজারল্যান্ডের ন্যুশাতেলে ইভের জন্ম। খুব অল্প বয়সে ব্রিটিশ ভারতের এক সেনার প্রেমে পড়েই এ দেশে এসেছিলেন তিনি।

০৫ ১৩
ভারতের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ধর্ম- সমস্ত কিছু গভীর ভাবে জানতে আগ্রহী ছিলেন ইভ। ব্রিটেনে রয়্যাল মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে ব্রিটিশ ভারতের এক সেনা অফিসার বিক্রম খানোলকর তখন প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন। ছুটিতে সুইৎজারল্যান্ড বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। তখনই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল ইভের। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই সেনা অফিসারের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন ইভ।

ভারতের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ধর্ম- সমস্ত কিছু গভীর ভাবে জানতে আগ্রহী ছিলেন ইভ। ব্রিটেনে রয়্যাল মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে ব্রিটিশ ভারতের এক সেনা অফিসার বিক্রম খানোলকর তখন প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন। ছুটিতে সুইৎজারল্যান্ড বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। তখনই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল ইভের। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই সেনা অফিসারের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন ইভ।

০৬ ১৩
বিক্রম খানোলকর ছিলেন মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। বিক্রমের সঙ্গে ইভের সম্পর্ক মেনে নেয়নি তাঁর পরিবার। পরিবারের অমতেই ১৯৩২ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিক্রমকে বিয়ে করতে ভারতে চলে আসেন ইভ। বিয়ের পর নিজের নাম বদলে রাখেন সাবিত্রী বাই খানোলকর। তত দিনে মেজর জেনারেল হিসাবে পদোন্নতি হয়ে গিয়েছিল বিক্রমের।

বিক্রম খানোলকর ছিলেন মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। বিক্রমের সঙ্গে ইভের সম্পর্ক মেনে নেয়নি তাঁর পরিবার। পরিবারের অমতেই ১৯৩২ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিক্রমকে বিয়ে করতে ভারতে চলে আসেন ইভ। বিয়ের পর নিজের নাম বদলে রাখেন সাবিত্রী বাই খানোলকর। তত দিনে মেজর জেনারেল হিসাবে পদোন্নতি হয়ে গিয়েছিল বিক্রমের।

০৭ ১৩
ভারতীয় সংস্কৃতিকে গভীরে জানার সুযোগ পেয়ে আপ্লুত হয়ে উঠেছিলেন সাবিত্রী। নিজেকে মন থেকে পুরোদস্তুর ভারতীয় হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন তিনি। চোখে-মুখে বিদেশি ছাপ ছাড়া আরও কিছুই বিদেশিদের মতো ছিল না তাঁর। সব সময় ভারতীয় পোশাকও পরতেন। মরাঠি, সংস্কৃত এবং হিন্দিতেও পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন।

ভারতীয় সংস্কৃতিকে গভীরে জানার সুযোগ পেয়ে আপ্লুত হয়ে উঠেছিলেন সাবিত্রী। নিজেকে মন থেকে পুরোদস্তুর ভারতীয় হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন তিনি। চোখে-মুখে বিদেশি ছাপ ছাড়া আরও কিছুই বিদেশিদের মতো ছিল না তাঁর। সব সময় ভারতীয় পোশাকও পরতেন। মরাঠি, সংস্কৃত এবং হিন্দিতেও পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন।

০৮ ১৩
১৮৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ভারতে সেনাদের ‘ভিক্টোরিয়া ক্রস’ দিয়ে সম্মানিত করা হত। ভারতীয় এবং ব্রিটিশ সেনা মিলিয়ে মোট ১৫৩ জন এই সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর ভারতীয় সেনাদের এই সম্মান দেওয়ার কোনও অর্থ খুঁজে পাননি প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু।

১৮৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ভারতে সেনাদের ‘ভিক্টোরিয়া ক্রস’ দিয়ে সম্মানিত করা হত। ভারতীয় এবং ব্রিটিশ সেনা মিলিয়ে মোট ১৫৩ জন এই সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর ভারতীয় সেনাদের এই সম্মান দেওয়ার কোনও অর্থ খুঁজে পাননি প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু।

০৯ ১৩
ভারতীয় সেনাদের সম্মানিত করতে নতুন করে পদকের নাম ভাবতে শুরু করে ভারত। ১৯৪৮ সালে পরমবীর চক্র, মহাবীর চক্র এবং বীর চক্র-- এই তিনটি সম্মানের কথা ঘোষণা করে ভারত। সর্বোচ্চ সেনা-সম্মান পরমবীর চক্র, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মহাবীর এবং বীর চক্র।

ভারতীয় সেনাদের সম্মানিত করতে নতুন করে পদকের নাম ভাবতে শুরু করে ভারত। ১৯৪৮ সালে পরমবীর চক্র, মহাবীর চক্র এবং বীর চক্র-- এই তিনটি সম্মানের কথা ঘোষণা করে ভারত। সর্বোচ্চ সেনা-সম্মান পরমবীর চক্র, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মহাবীর এবং বীর চক্র।

১০ ১৩
পরমবীর চক্রের নকশা তৈরির ভার নেহরু দিয়েছিলেন ভারতীয় সেনার মেজর জেনারেল হীরালাল অটলকে। হীরালাল আবার নকশা তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিলেন সাবিত্রীকে। মেজর জেনারেলের বিশ্বাস ছিল, ভারত নিয়ে যে গভীর অনুভব ও জ্ঞান তাঁর রয়েছে, তা দিয়েই শ্রেষ্ঠ নকশা তৈরি করা সম্ভব।

পরমবীর চক্রের নকশা তৈরির ভার নেহরু দিয়েছিলেন ভারতীয় সেনার মেজর জেনারেল হীরালাল অটলকে। হীরালাল আবার নকশা তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিলেন সাবিত্রীকে। মেজর জেনারেলের বিশ্বাস ছিল, ভারত নিয়ে যে গভীর অনুভব ও জ্ঞান তাঁর রয়েছে, তা দিয়েই শ্রেষ্ঠ নকশা তৈরি করা সম্ভব।

১১ ১৩
১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে এই সেনা-সম্মানের কথা ঘোষণা করা হয়। প্রথম সর্বোচ্চ সেনা-সম্মান পেয়েছিলেন মেজর সোমনাথ শর্মা। তিনি সাবিত্রীরই আত্মীয় ছিলেন।

১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে এই সেনা-সম্মানের কথা ঘোষণা করা হয়। প্রথম সর্বোচ্চ সেনা-সম্মান পেয়েছিলেন মেজর সোমনাথ শর্মা। তিনি সাবিত্রীরই আত্মীয় ছিলেন।

১২ ১৩
এখনও পর্যন্ত মোট ২১ জন এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র এক জন ভারতীয় বায়ু সেনার আধিকারিক এই সম্মান পেয়েছেন। তিনি ফ্লাইং অফিসার নির্মলজিৎ সিংহ। এই সর্বোচ্চ সেনা-সম্মানের অধিকারী ২১ জনের মধ্যে মাত্র তিন জন জীবিত রয়েছেন। সুবেদার মনোজ বানা সিংহ, সুবেদার সঞ্জয় কুমার এবং সুবেদার যোগেন্দ্র সিংহ যাদব।

এখনও পর্যন্ত মোট ২১ জন এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র এক জন ভারতীয় বায়ু সেনার আধিকারিক এই সম্মান পেয়েছেন। তিনি ফ্লাইং অফিসার নির্মলজিৎ সিংহ। এই সর্বোচ্চ সেনা-সম্মানের অধিকারী ২১ জনের মধ্যে মাত্র তিন জন জীবিত রয়েছেন। সুবেদার মনোজ বানা সিংহ, সুবেদার সঞ্জয় কুমার এবং সুবেদার যোগেন্দ্র সিংহ যাদব।

১৩ ১৩
পরমবীর চক্র ছাড়াও মহাবীর চক্র, বীর চক্রের নকশাও তিনিই করেছিলেন। ১৯৯০ সালের ২৬ নভেম্বর মৃত্যু হয় তাঁর। ইভ বিশ্বাস করতেন, তিনি নাকি আসলে ভারতীয়ই, ভুল করে জন্মেছিলেন সুইৎজারল্যান্ডে।

পরমবীর চক্র ছাড়াও মহাবীর চক্র, বীর চক্রের নকশাও তিনিই করেছিলেন। ১৯৯০ সালের ২৬ নভেম্বর মৃত্যু হয় তাঁর। ইভ বিশ্বাস করতেন, তিনি নাকি আসলে ভারতীয়ই, ভুল করে জন্মেছিলেন সুইৎজারল্যান্ডে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy