Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

সাধ্বীর কুকথায় কি ভোটের অঙ্ক

একে গেরুয়াবসনা সাধ্বী! তায় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী! তাঁর মুখে এমন কথা! সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি। ‘রামজাদা’-র উল্টোটা বোঝাতে কাল যে শব্দ তিনি বলেছেন, তা প্রকাশ্যে বলার নয়। অথচ খাস রাজধানীতে জনসভায় দাঁড়িয়ে সেটাই করেছেন সাধ্বী। এ নিয়ে ঢিঢি পড়ে গিয়েছে বললে কম বলা হবে। কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি ও বামেরা-সহ তামাম বিরোধীরা মুণ্ডপাত করতে শুরু করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

একে গেরুয়াবসনা সাধ্বী! তায় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী! তাঁর মুখে এমন কথা! সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি। ‘রামজাদা’-র উল্টোটা বোঝাতে কাল যে শব্দ তিনি বলেছেন, তা প্রকাশ্যে বলার নয়। অথচ খাস রাজধানীতে জনসভায় দাঁড়িয়ে সেটাই করেছেন সাধ্বী। এ নিয়ে ঢিঢি পড়ে গিয়েছে বললে কম বলা হবে। কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি ও বামেরা-সহ তামাম বিরোধীরা মুণ্ডপাত করতে শুরু করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের। অভিযোগ, মোটেই আলটপকা নয়, ভোটের অঙ্ক কষেই এই মন্তব্য।

ক’দিন আগে বেফাঁস মন্তব্য করে জোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারদা-কাণ্ডে সিবিআই ধরপাকড়ে রুষ্ট মমতার মুখ থেকে ফস্ করে সে দিন যে বাজে শব্দটি বেরিয়ে পড়েছিল, সাধ্বী নিরঞ্জনের মন্তব্য অবশ্য তারও কয়েক দাগ ওপরে। এর লক্ষ্য সমাজে বিভাজন তৈরি করা, বলছেন বিরোধীরা।

কী বলেছেন নিরঞ্জন?

দিল্লিতে বিধানসভা ভোট সামনে। পশ্চিম দিল্লিতে কাল এক জনসভায় সাধ্বী বলেন, “মোদী বলেছেন, নিজে খাব না, খেতেও দেব না। দিল্লির মানুষই ঠিক করুন রামজাদার সরকার চাই, নাকি ....-র সরকার!” এর জেরে আজ প্রধানমন্ত্রীর বকুনি খেয়েছেন সাধ্বী। সংসদের দুই কক্ষে ক্ষমাও চেয়েছেন। কিন্তু বিতর্ক মিটছে না তাতে। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার অভিযোগ, “লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে এই বিভাজনের বিষ ছড়িয়েছিল বিজেপি। তাতে ফায়দা পেয়ে এখন দিল্লিতে তা ছড়াচ্ছে। পরের টার্গেট পশ্চিমবঙ্গ, অসম।”

দু’দিন আগেই কলকাতায় গিয়ে তৃণমূলকে মূল সমেত উপড়ে ফেলার হুমকি দিয়ে এসেছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। কালো ছাতা থেকে কালো চাদর, মেটে হাঁড়ি থেকে লাল ডায়েরি গত ক’দিন ধরে নানান কেতায় সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের চমকদারি দেখানোর পরই বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণের এমন সুযোগ কার্যত লুফে নেয় তৃণমূল। দলের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “বিজেপির থেকে এর বেশি প্রত্যাশা করাই বৃথা। এমন এক জনকে দলের সভাপতি করেছে যাঁর বিরুদ্ধে সোহরাবুদ্দিনকে খুন করার অভিযোগ ঝুলছে। এখন একে-একে মন্ত্রীদেরও মুখোশ খুলে যাচ্ছে।” প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে ডেরেক এ-ও বলেন, “উনি ইদানীং বিদেশেই থাকছেন। ওঁকে ভিসা দিয়ে রাজ্যসভায় আনা হোক।”

বিরোধীদের মূল দাবি তিনটি। এক, মন্ত্রিসভা থেকে নিরঞ্জনকে সরাতে হবে। দুই, ফৌজদারি আইনে মামলা করতে হবে তাঁর বিরুদ্ধে। তিন, সংসদে ক্ষমা চাইতে হবে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে।

ক্ষমতায় এসে ইস্তক কোন ২৫টি ক্ষেত্রে মোদী ‘ডিগবাজি’ খেয়েছেন তা নিয়ে বই ছেপে কাল থেকেই প্রচারে নেমেছে কংগ্রেস। সেই বই হাতে কংগ্রেসের সাংসদরা আজ রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে সংসদের বাইরে গাঁধী মূর্তির সামনে বিক্ষোভ দেখান। মুখর হন সংসদেও। বাকি বিরোধীরাও সরব হওয়ায় বারবার সভা মুলতবি রাখতে হয় দুই কক্ষেই।

পরিস্থিতি এমন ঘোরালো হতে পারে আশঙ্কা করে আজ সকালেই সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সাংসদদের বকুনি দেন, কেউ যেন আলটপকা মন্তব্য না করেন। সংসদের দুই সভায় পরিস্থিতি শান্ত করতে পরে আলোচনাতেও বসেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু ও অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এবং একটি বিবৃতির খসড়া তৈরি করে তা সাধ্বীর হাতে ধরিয়ে বলেন, যান দুই সভায় ক্ষমা চান। নিরঞ্জন লোকসভা ও রাজ্যসভায় গিয়ে বলেন, “মুখ থেকে যা বেরিয়েছে, তা ঠিক হয়নি। মন থেকে ক্ষমা চাইছি।” বিরোধীদের অসন্তোষ তাতে মেটেনি। এরই মধ্যে আর এক মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহও আলটপকা মন্তব্য করে বসেন, দৈত্য আখ্যা দেন অরবিন্দ কেজরীবালকে।

এই পরিস্থিতিতে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের উপনেতা আনন্দ শর্মা বলেন, “মন্ত্রী নিরঞ্জন ক্ষমা চাইলেন কি না, তা আর প্রাসঙ্গিক নয়। তাঁকে অবিলম্বে মন্ত্রিসভা থেকে সরাতে হবে। আসল প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী নীরব কেন? নাকি তাঁর নির্দেশেই এই সব কথা বলে সমাজে বিভাজন তৈরির খেলায় নেমেছে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা!” রাজ্যসভায় জেটলি বলেন, মন্ত্রী ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার পরে এ বার বিতর্কে ইতি টানা হোক। কিন্তু সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির দাবি, ক্ষমা চেয়ে মন্ত্রী আসলে তাঁর দায় স্বীকার করেছেন। প্রকাশ্যে ওই মন্তব্য করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনের ১৫৩(এ) ধারায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টার অভিযোগে মামলা হওয়া উচিত। ক্ষমা চাইলেই সেই দোষ মুছে যায় না। তাঁর কথায়, “তাপস পালও গালমন্দ করে পরে ক্ষমা চেয়েছিলেন। কিন্তু আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, ক্ষমা চাইলেই দায় লঘু হয় না।” বসপা নেত্রী মায়াবতী ঘটনাটি নিয়ে তদন্তের দাবি করেন।

সন্দেহ নেই, সাধ্বী নিরঞ্জনকে আড়াল করতে গিয়ে বিজেপিকে বেশ বেগ পেতে হয় এ দিন।

প্রশ্ন হল, কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে নিরঞ্জনের ইস্তফার দাবিতে বিরোধীরা কি অনড় থাকবে? ডেরেক বলেন, রাজ্যসভার দেড়শোরও বেশি সাংসদ ইস্তফা চাইছেন। পার পাওয়ার পথ নেই মন্ত্রীর। তবে কংগ্রেসে দ্বিধা রয়েছে এ ব্যাপারে। একটি মত হল, বেশি খোঁচালে বিজেপিই ভোট মেরুকরণের ফায়দা লুটবে। দ্বিতীয় মত হল, দিল্লিতে এমনিতেই হারবে কংগ্রেস। সাধ্বীর মন্তব্য নিয়ে তোলপাড় হলে গোটা দেশে মোদী সরকারের মুখ পুড়বে। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, “ঘৃণার রাজনীতি ছড়াতেই কিছু নেতা নেত্রীকে মন্ত্রী করে রাজনৈতিক উচ্চতা দেওয়া হচ্ছে। ভোটের প্রচারে গিরিরাজ সিংহ বলেছিলেন, পাকিস্তানে পাঠানো উচিত মোদী-বিরোধীদের। মোদী তাঁকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করেছেন।”

বিজেপি বলছে, মন্ত্রিসভা থেকে সাধ্বীকে সরানোর প্রশ্ন নেই। তা হলে কি সব দোষ মাফ! ক্ষমা চাওয়ার পরে সবাই ভুলে যাবে! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কিন্তু বাজে কথাটি বলেই, পরক্ষণে ‘সরি’ বলেছিলেন! রাজ্য রাজনীতিতে সেই বাজে কথাটির সমালোচনা কিন্তু থামেনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy