Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Russia Ukraine War

Russia Ukraine War: বিমানে নীলিমার সঙ্গেই উঠল পোষ্য রাশিয়ান বিড়াল ছানা! অনুমতি দিল ভারতীয় বায়ুসেনা

সব ধকলের কষ্ট একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেন নীলিমা ও ওরিও। পোল্যান্ডে নেমে জানা যায়, দিল্লিমুখী বিমানে প্রাণীদের নিয়ে সফরের অনুমতি নেই। কিন্তু ওরিওকে কাছছাড়া করতে নারাজ নীলিমা।

বায়ুসেনার বিমানে নীলিমা ও ওরিও। নিজস্ব চিত্র।

বায়ুসেনার বিমানে নীলিমা ও ওরিও। নিজস্ব চিত্র।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২২ ১৮:৩৪
Share: Save:

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে যে সঙ্গী তাঁকে দিবারাত্র আদরের উষ্ণতায় ভরিয়ে রেখেছে, কখনও একাকীত্ব বোধ করতে দেয়নি, এমনকী মৃত্যুভয়ে বাঙ্কারে লুকিয়ে থাকার সময়ও প্রাণচঞ্চল খুনসুটিতে ভুলিয়ে রেখেছে খালি পেটের জ্বালা- তাকে ফেলে আসার আশঙ্কায় এক সময় নিজে বেঁচে ফেরার আশাও পানসে হয়ে বসেছিল নীলিমা হুসেনের। কিন্তু ভারত সরকার এককালীন ব্যতিক্রম হিসেবে পোষ্য নিয়ে বিদেশ থেকে ফেরার অনুমতি দেওয়ায় ধড়ে প্রাণ আসে। ওরিওর রোমশ শরীরটাকে জাপটে ধরে, পোল্যান্ড থেকে দেশে ফেরার বিমান ধরেছিলেন নীলিমা। আজ দেশের মাটিতে পা রেখে দু’জনই নিশ্চিন্ত।

গুয়াহাটির মেয়ে নীলিমা ২০১৭ সাল থেকে ইউক্রেনের সুমিতে এমবিবিএস পড়ছেন। রাশিয়া যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে সুমিতে থাকা ছাত্রছাত্রীদের অবস্থা ছিল সবচেয়ে শোচনীয়। রাশিয়া সীমান্তের কাছে হওয়ায় বোমা ও গোলাবর্ষণ যেমন সেখানে বেশি হয়েছে, তেমনই পশ্চিম প্রান্তের ছাত্রছাত্রীদের মতো চট করে পড়শি দেশে পালিয়ে দেশে ফেরাও সম্ভব হয়নি। দিনের পর দিন বাঙ্কারে কাটাতে হয়েছে নীলিমাদের। খাবারে টান পড়েছিল। জল, ওষুধ কিছুই মিলছিল না। বন্ধ এটিএমও। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে সুমি থেকে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের বের করে আনার কাজ শুরু হয়।

নীলিমা জানান, এতদিনের সর্বক্ষণের সঙ্গী রাশিয়ান বিড়াল ওরিওকে রেখে আসার কথা ভাবতেই পারেননি। তাই তাঁকে সঙ্গে নিয়েই তাঁর লম্বা যাত্রা শুরু হয়। ৮ মার্চ তাঁদের সুমি থেকে বের করা হয়। সেফ জ়োন হয়ে বাসে ১২ ঘণ্টা যাত্রার পরে পোল্টাভা আসেন তাঁরা। সেখান থেকে ট্রেনে ফের ১৮ ঘণ্টা সফর করে হাজির হন লভিভে। লভিভের ট্রেনে ওঠার সময় কিছু খাবার মিলেছিল। কিন্তু সেখান থেকে পোল্যান্ডের ট্রেনে ওঠার পরে গোটা যাত্রাই অভুক্ত থাকতে হয়।

সব ধকলের কষ্ট একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেন নীলিমা ও ওরিও। পোল্যান্ডে নেমে জানা যায়, দিল্লিমুখী বিমানে প্রাণীদের নিয়ে সফরের অনুমতি নেই। কিন্তু ওরিওকে কাছছাড়া করতে নারাজ নীলিমা। পরে একবারের জন্য পোষ্যদের নিয়ে যাওয়ার বিশেষ অনুমতি মেলে ভারত সরকারের তরফে। ওরিওর জন্য আলাদা করে পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরি করা হয়। দেওয়া হয় প্রতিষেধক। শরীরে ঢোকানো হয় মাইক্রোচিপ। নীলিমা দেশে ফিরে ফোনে বলেন, “দিল্লিমুখী প্রথম দুটি বিমানে পোষ্য নেওয়ার অনুমতি মেলেনি। তাই আমাদের ফের হয়নি। শেষ পর্যন্ত বায়ুসেনার বিমানে পোষ্য নেওয়ার অনুমতি মেলে। বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির উদ্দেশ্যে উড়ান শুরু হয়। পোল্যান্ডে পোষ্যর জন্য গিফ্ট প্যাক দেওয়া হয়েছিল। ৮ ঘণ্টার যাত্রাপথেও কোনও সমস্যা করেনি ওরিও।”

আজ দিল্লি পৌঁছান তাঁরা। আপাতত অসম ভবনে আছেন। পোষ্য থাকা ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিমানে বিশেষ ব্যবস্থা করে দেবে সরকার। তখনই গুয়াহাটি ফেরা। নীলিমা বলেন, “এত কাছ থেকে যুদ্ধ, বোমা পড়া, মৃত্যুকে দেখার বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতায় আমার একমাত্র সঙ্গী ও ভরসা ছিল ওরিও। ওকে আনতে না দিলে হয়ত আমিও ইউক্রেনে থেকে যেতাম।”

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Ukraine War poland guwahati cat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE