(বাঁ দিকে) মোহন ভাগবত এবং নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
কার্যত বিরোধীদের সুরেই আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত মুখ খোলায় প্রবল অস্বস্তি বিজেপির অন্দরমহলে। প্রকাশ্যে এ নিয়ে মন্তব্য না করলেও পদ্মশিবিরে ঘরোয়া ভাবে বলা হচ্ছে, ভাগবত ভুল কিছু বলেননি। তিনি প্রকৃত রাষ্ট্রনায়কের মতো পথ প্রদর্শন করেছেন। এ নিয়ে কংগ্রেসের কটাক্ষ, যাঁকে (নরেন্দ্র মোদী) উদ্দেশ করে ওই বার্তা, তিনি কি আদৌ শুনবেন? নিজেকে সংশোধন করবেন?
রাজনীতির অনেকের মতে, এত দিন বিজেপি শক্তিশালী থাকায় সে ভাবে মুখ খোলেননি সঙ্ঘ নেতৃত্ব। এ বারের ভোটের পরে স্পষ্ট যে, বিজেপির সেই সংখ্যার জোর আর নেই। তারা শরিক নির্ভর। যে কারণে প্রকাশ্যে মুখ খোলা শুরু করেছেন শীর্ষ সঙ্ঘ নেতৃত্ব। বিশেষ করে ভোটের পরেই প্রকাশ্যে নাম না করে মোদী সরকারের সমালোচনা করে সঙ্ঘ কর্মীদের যে ক্ষোভ তা-ও সামনে এনে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিলেন সরসঙ্ঘচালক।
নাগপুরে গত কাল সঙ্ঘের শিক্ষানবিশদের সভায় বোমাটি ফাটিয়েছিলেন ভাগবত। তাঁর পরামর্শ ছিল, বিরোধী নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখতে হবে বিরোধীদের। তাঁর মতে, বিরোধীরা অন্য ভাবনাকে তুলে ধরেন। তাই রাজনীতিতে বিরোধীদের গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। মোদী সরকারের প্রথম দু’টি পর্বে সংখ্যাধিক্যের জোরে বিরোধী মতকে কেবল অগ্রাহ্য করাই নয়, গুঁড়িয়ে দেওয়ার মনোভাব দেখা গিয়েছে। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘যে ভাবে বিগত সরকারের শেষের দিকে লোকসভা থেকে বিরোধীদের নির্বিচারে সাসপেন্ড করে বিনা আলোচনায় বিল পাশ করানো হয়েছে, তা ভাল ভাবে নেননি দলের অনেক নেতাই। কিন্তু তা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাননি।’’ এ বারে প্রতিপক্ষকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলে ভাগবত বুঝিয়ে দিলেন এ ভাবে বিরোধীদের উপরে বুলডোজ়ার চালানো সঙ্ঘ সমর্থন করে না।
কিন্তু তাতেও মোদীর মানসিক পরিবর্তন হবে বলে আশা করেন না কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। তিনি বলেন, ‘‘মনে হয় না প্রধানমন্ত্রী এর পরেও মোহন ভাগবতের বক্তব্যকে কোনও গুরুত্ব দেবেন বলে।’’ আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের বক্তব্য, ‘‘মোহন ভাগবত মুখ খুললেন বটে, কিন্তু অনেক দেরিতে।’’
এ বারের নির্বাচনে মোদীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার বিরোধীদের লক্ষ্য করে কু-কথা বলার অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে অভিযোগ গিয়েছিল নির্বাচন কমিশনের কাছে। গত কাল কু-কথার প্রসঙ্গও তুলেছিলেন সঙ্ঘ প্রধান। তাঁর কথায়, ‘‘ভোটে লড়ার সময়ে একটা মর্যাদা থাকা উচিত। সেই মর্যাদার পালন করা হয়নি।’’ একই সঙ্গে, এক বছর ধরে অশান্ত থাকা মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়েও সরব হয়েছেন ভাগবত। যা এক প্রস্থ সমস্যায় ফেলেছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে। বিরোধী নেতা কপিল সিব্বল আজ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমাদের কথা শোনা আপনার ডিএনএ-তে নেই। কিন্তু অন্তত মোহন ভাগবতের কথা তো শুনুন।’’
মোদীর নেতৃত্বে গত ১০ বছরে সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে ধীরে ধীরে দূরত্ব বাড়ছিল বিজেপির। এ বারে ভোটের ফলেই সেই দূরত্ব আরও স্পষ্ট হয়। বিজেপি যে থিমের ভিত্তিতে প্রচার চালায় তা নিয়ে গোড়া থেকেই আপত্তি ছিল আরএসএসের। উপরন্তু সঙ্ঘ কর্মীদের কোণঠাসা করে একলা বিজেপি কর্মীদের শক্তিতে ভোটে জেতার চেষ্টা বুমেরাং হয় নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের জন্য। উপেক্ষার কারণে প্রথম দফা ভোটের আগে থেকেই কার্যত বসে যান ক্ষুব্ধ সঙ্ঘ কর্মীরা। ফলে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র বা রাজস্থানের মতো রাজ্যে খারাপ ফল হয়েছে বিজেপির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy