বাংলাদেশে ক্ষমতা পরিবর্তনের পর থেকে সে দেশে হিন্দুদের উপরে নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে আগেই সরব হয়েছিল আরএসএস। এ বার অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভার তিন দিনের (২১-২৩ মার্চ) বৈঠকে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার নিয়ে আলাদা প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নিল তারা। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বেঙ্গালুরুতে দলের বাৎসরিক সভায় ওই প্রস্তাব নেওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
আরএসএসের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সভা হল অখিল ভারতীয় প্রতিনিধিসভা। মূলত আগামী এক বছর সংগঠনের রণকৌশল কী হবে, তা ওই বৈঠকেই স্থির হয়ে থাকে। আজ আরএসএস মুখপাত্র সুনীল অম্বেকর জানান, আসন্ন বৈঠকে মূলত দু’টি প্রস্তাব নেওয়া হবে। প্রথম প্রস্তাবে বাংলাদেশে হিন্দু ও সংখ্যালঘু সমাজের উপরে হয়ে চলা নির্যাতন নিয়ে প্রস্তাব নেওয়া হবে। আরএসএসের এ বছর একশো বছর পূর্ণ হচ্ছে। কী ভাবে তা পালন করা হবে সে বিষয়ে দ্বিতীয় প্রস্তাব আনা হচ্ছে।
গত কয়েক দিন ধরেই ঔরঙ্গজ়েবকে নিয়ে উত্তাল সঙ্ঘের সদর দফতর নাগপুর। সম্প্রতি খুলদাবাদ থেকে ঔরঙ্গজ়েবের সমাধি সরানোর দাবিতে পথে নামে বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। ছড়িয়ে পড়ে হিংসা। অথচ ঔরঙ্গজ়েবের সমাধি বিতর্ক আজকের দিনে প্রাসঙ্গিক বলে মানতে প্রকাশ্যে অন্তত অস্বীকার করেছেন সুনীল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আজকের দিনে ঔরঙ্গজ়েবের কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। যে কোনও ধরনের হিংসা সমাজের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।’’ একই সঙ্গে সংঘর্ষের পিছনে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের হাত রয়েছে বলেও মানতে চাননি তিনি।
তবে বাংলাদেশের হিংসা প্রসঙ্গে আরএসএস নেতৃত্বের মত হল, প্রতিবেশী দেশে হিন্দু ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসলামি মৌলবাদীরা। খুন, অগ্নিসংযোগ, মহিলাদের সম্ভ্রম নষ্ট, লুটপাট যে ভাবে নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে গিয়েছে, তা উদ্বেগজনক। অতীতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে কেন্দ্রের কাছে দরবার করেছিল আরএসএস। আগামী এক বছর বাংলাদেশ প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতে ব্যাপক প্রচারে নামতে চলেছে তারা। পশ্চিমবঙ্গে ভোটের দিকে তাকিয়েই বাংলাদেশে ‘হিন্দু নিপীড়ন’ প্রসঙ্গে প্রস্তাব ও তার পরে বৈঠকে দিনভর আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে আরএসএস নেতৃত্বের। সুনীল বলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, হিন্দুদের উপর অত্যাচার, ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং আরএসএসের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির সামনে বিশদে আলোচনার পরে প্রস্তাব অনুমোদিত হলে তা কোর কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)