আসানসোল জেলে ফেরত যাওয়ার আর্জি খারিজ অনুব্রতর। — ফাইল চিত্র।
তিহাড় জেল থেকে অনুব্রত মণ্ডল (কেষ্ট) আসানসোল জেলে ফেরত যাওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছিলেন। তাতে জোর আপত্তি তুলে আজ ইডি দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে জানাল, এক বার অনুব্রত আসানসোল জেলে চলে গেলে, ফের তাঁকে গরু পাচারের মামলার প্রয়োজনে দিল্লিতে আনতে ছ’মাস লেগে যাবে। কোর্টে আজ ইডি-র আইনজীবী নীতেশ রানা বলেন, “এখন আগামী তিন-চার বছর তিহাড় জেলকেই নিজের বাড়ি ভেবে ফেলুন।” কেন অনুব্রত তিহাড় ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীন আসানসোল জেলে যেতে চাইছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন ইডি-র।
অনুব্রতের পরে ইডি গরু পাচারের তদন্তে তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলকেও গ্রেফতার করেছে। আজ রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে এ নিয়ে প্রথম মুখ খুলেছেন অনুব্রত। তাঁর বক্তব্য, “মেয়েকে গ্রেফতার করা অন্যায় হয়েছে। ওটা খুব বাহাদুরির কাজ হয়নি।” অনুব্রত ও সুকন্যা, দু’জনেই এখন তিহাড় জেলে। সূত্রের খবর, কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সুকন্যা অনুব্রতের সঙ্গে জেলের মধ্যেই ফোনে কথা বলেছেন। অনুব্রতের দেহরক্ষী, গরু পাচার মামলায় তিহাড়ে বন্দি সেহগল হোসেনের সঙ্গেও সুকন্যার কথা হয়েছে।
এ দিন অনুব্রতের জেল হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাঁকে আদালতে তোলা হয়েছিল। জেল থেকে সাদা টি-শার্ট পরা অনুব্রতকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে আদালতে নিয়ে আসা হয়। রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট তাঁর জেল হেফাজতের মেয়াদ ৪মে পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে, অনুব্রতের তিহাড় থেকে আসানসোলের জেলে ফেরত পাঠানোর আর্জির ফয়সালাও সে দিন হবে বলে জানিয়েছে।
গরু পাচারের তদন্তে নেমে প্রথমে সিবিআই অনুব্রতকে গ্রেফতার করেছিল। তার পরে ইডি অনুব্রতকে আসানসোল জেলের মধ্যেই গ্রেফতার করে। ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট অনুব্রতকে দিল্লিতে হাজির করানোর পরোয়ানা জারি করলেও, অনুব্রত তার বিরুদ্ধে মামলা-মকদ্দমা করে দিল্লিযাত্রা ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাজ্য পুলিশও সেই সময়ে পুরনো মামলায় অনুব্রতকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল।
আজ অনুব্রতকে ফের আসানসোল জেলে ফেরত পাঠানোর আর্জিতে আপত্তি তুলে ইডি সেই প্রসঙ্গও তুলেছে। ইডি-র আইনজীবী রানা বলেন, রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট পরোয়ানা জারি করার পরে অনুব্রত তা ঠেকাতে হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে জেল কর্তৃপক্ষও এর মধ্যে জড়িত ছিলেন বলে তাঁর অভিযোগ। শেষে কলকাতা হাই কোর্ট কড়া নির্দেশ জারি করে। দিল্লিযাত্রায় বাধা তৈরি করতে দুবরাজপুরের একটি পুরনো মামলায় রাজ্য পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নেয় কেষ্টকে। রানা বলেন, “অনুব্রত মনে করছেন, আসানসোল জেলটা যেন তাঁর বাড়ি। সেখানে ফেরত যেতে চাইছেন। শেষে সেই তিহাড়েই ফিরে আসতে হবে। তিহাড়ই এখন ওঁর ঘরবাড়ি।”
দিল্লিতে ইডি নিজেদের হেফাজতে রেখে অনুব্রতকে দু’সপ্তাহ জিজ্ঞাসাবাদের পর থেকে তিনি তিহাড়েই রয়েছেন। অনুব্রতের আইনজীবী মুদিত জৈন আদালতে যুক্তি দিয়েছিলেন, দিল্লিতে অনুব্রতের বিরুদ্ধে ইডি-র কোনও মামলা নেই। বরং আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে অনুব্রতের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। তাই তাঁকে সেখানে ফেরত পাঠানো হোক। ইডি-র হেফাজত শেষের পরে তদন্তকারীরা নতুন করে তিহাড়ে গিয়ে অনুব্রতের বয়ান নথিবদ্ধ করেননি। ৬০ দিন হতে চললেও ইডি চার্জশিট দায়ের করেনি। যদি ইডি-র ফের প্রয়োজন হয়, বা দিল্লিতে বিচার শুরু হয়, তা হলে তাঁকে আবার তিহাড় জেলে নিয়ে আসা যাবে।
রানা বলেন, ইডি যদি দিল্লির আদালতে চার্জশিট দায়ের করে, তার পরে অনুব্রতকে আসানসোল থেকে ফিরিয়ে আনতে ৬ থেকে ৮ মাস লেগে যাবে। তাঁর প্রশ্ন, অভিযুক্ত কী ভাবে ঠিক করবে, সে কোন জেলে থাকবে? অনুব্রত এখন রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টের অধীনে। আসানসোল কোর্ট তাঁকে চাইলে, তবে তাঁকে আসানসোলে পাঠানো যেতে পারে।
অনুব্রত বলছেন, আসানসোল কোর্টে তাঁকে প্রয়োজন। আসানসোল কোর্টের বিচারক এমন কিছু বলেননি। বিচারক রঘুবীর সিংহ বলেন, ৪মে রায় ঘোষণা হবে। সে দিন অনুব্রতকে ফের আদালতে পেশ করা হবে। অনুব্রতের হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারির জেল হেফাজতের মেয়াদ ১২মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy