Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ফের ঐতিহাসিক রায়: ব্যক্তিগত গোপনতা এখন মৌলিক অধিকার

মঙ্গলবার তিন তালাককে অসাংবিধানিক ঘোষণা করার পর বৃহস্পতিবার নাগরিকের গোপনতাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিল সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ে কেন্দ্র বড়সড় ধাক্কা খেল বলেই মনে করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নয় সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ঐকমত্যে পৌঁছে জানিয়ে দিল, ব্যক্তিগত গোপনতা সংবিধানের মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৭ ১৪:১৮
Share: Save:

পর পর দু’টি ঐতিহাসিক রায়। এবং তা আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই!

মঙ্গলবার তিন তালাককে অসাংবিধানিক ঘোষণা করার পর বৃহস্পতিবার নাগরিকের গোপনতাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিল সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ে কেন্দ্র বড়সড় ধাক্কা খেল বলেই মনে করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নয় সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ঐকমত্যে পৌঁছে জানিয়ে দিল, ব্যক্তিগত গোপনতা সংবিধানের মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে।

এ দিনের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেছেন, “সংবিধানের ২১তম অনুচ্ছেদ আরও তাৎপর্য পেল। ১৯৪৭-এ আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছিলাম তা আরও সমৃদ্ধ হল।” কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ বলেছেন, “ব্যক্তির গোপনতা মৌলিক অধিকার— আমাদের গণতন্ত্রে এর সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য রয়েছে। যে শক্তিগুলি আমাদের জীবনে অনধিকার প্রবেশ করতে চাইছে তার পরাজয় উদ্‌যাপন করুন।” সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, “যাঁরা সরকারের এই অশুভ প্রচেষ্টাকে রুখতে লড়াই করেছেন তাঁদের অভিনন্দন। এই লড়াইয়ের জন্যই গোপনতার মৌলিক অধিকারকে অস্বীকার করা হয়েছে।”

গ্রামে ঘুরে দুর্নীতি রুখছেন দেশের কনিষ্ঠতম আইএএস

প্রশ্নটা অনেক দিন ধরেই উঠছিল। মূলত, আধারকে প্রায় সব ক্ষেত্রে বাধ্যতা মূলক করার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের পরেই ফের গোপনতার অধিকারের প্রশ্ন সামনে আসে। ওই বিষয়ে একাধিক মামলা করা হয় শীর্ষ আদালতে। তা নিয়েই শুনানি চলছিল। কিন্তু একটা সময়ে এসে আদালত গোপনতা আদৌ মৌলিক অধিকার কি না সেই প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা শুরু করে। সেই উদ্দেশ্যে নয় সদস্যের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চও গঠিত হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর। এ দিন সেই বেঞ্চই জানিয়ে দেয়, নাগরিকের গোপনতা আসলে তাঁর মৌলিক অধিকার।

এ দিনের রায়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, জীবন এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকারের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে নাগরিকের গোপনতার অধিকারও। সংবিধানের ২১ নম্বর ধারায় ওই দু’টি মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আদালতের মতে তাই গোপনতা মৌলিক অধিকারের পর্যায়েই পড়ে।

ব্যক্তিগত গোপনতা মৌলিক অধিকার কি না, তা নিয়ে এর আগেও সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্ন উঠেছে। ১৯৫৪ সালে সুপ্রিম কোর্টে আট সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ এম পি শর্মা মামলায় রায় দিয়েছিল, ব্যক্তিগত গোপনতা মৌলিক অধিকার নয়। পরে ’৬২ সালেও খরক সিংহ মামলাতে একই রায় দিয়েছিল শীর্ষ আদালতের ছয় সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। এ দিন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে পুরনো ওই দুই রায়ই বাতিল হয়ে গেল।

আরও পডুন

লড়াই শেষ হয়নি, বলছেন জাকিয়া-নুরজাহান

সুপ্রিম কোর্টে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে আধার সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি চলাকালীন প্রশ্ন ওঠে, ব্যক্তিগত গোপনতা মৌলিক অধিকার কি না? সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই গত ১৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে নয় সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠিত হয়। বিচারপতি খেহর ছাড়াও ওই সাংবিধানিক বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি জে চেলমেশ্বর, এস এ বোবদে, আর কে অগ্রবাল, আর এফ নরিম্যান, এ এম সাপ্রে, ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, এস কে কল এবং এস আব্দুল নাজির।

এত দিন পর্যন্ত আধারের স্বপক্ষে সওয়াল করে এসেছে কেন্দ্র। আধার কার্ডের জন্য নাগরিকের ব্যক্তি জীবন প্রকাশ্যে আসবে না বা তার অধিকার খর্ব হবে না বলেই দাবি ছিল কেন্দ্রের। কেন্দ্র আরও দাবি করে, ব্যক্তিগত গোপনতা নাগরিকের মৌলিক অধিকার নয়। কেন্দ্রের বিপক্ষে আদালতে সওয়াল করে কর্নাটক, পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব ও পুদুচেরির মতো চারটি অ-বিজেপি সরকার। তবে বৃহস্পতিবারের এই রায়ের ফলে কেন্দ্রের ওই সওয়ালের ভীত নড়ে গেল।

আরও পডুন

মন্ত্রিসভায় বদলের জল্পনা, পদ ছাড়তে চান প্রভু

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার আধার কার্ডকে প্রায় সর্ব ক্ষেত্রেই বাধ্যতামূলক করে তুলেছিল। এ দিনের রায়ে আধার আইনের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন উঠে গেল। এই রায়ের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে আধার সংক্রান্ত নিয়মকানুনও নতুন করে বিচার্য হবে। অন্য দিকে, সংবিধানের ৩৭৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, সমকামিতা ফৌজদারি অপরাধ। এ দিনের রায়ের পর সেই ৩৭৭ ধারার ব্যাখ্যা নিয়েও প্রশ্ন উঠল। তবে গোপনীয়তার সংজ্ঞা কী অথবা তার পরিধিই বা কতটা তা এ দিন ঠিক করে দেয়নি শীর্ষ আদালত।

কার্টুন: অর্ঘ্য মান্না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE