শত্রুপক্ষের আক্রমণকে প্রতিহত করতে বারেবারেই নানা ধরনের অস্ত্র আবিষ্কার করেছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। কিন্তু শত্রুপক্ষের মিসাইল ধ্বংস করতে এখন তাঁদের ভরসা ‘কালি’।
ঘাবড়ে যাওয়ারই কথা। ভারতীয় সেনাবাহিনী কি না শেষ পর্যন্ত ঠাকুর দেবতার দ্বারস্থ!
না না, এ ‘কালি’ সে ‘কালী’ নয়।
এক উন্নতমানের মিসাইল ধ্বংসকারী অস্ত্র তৈরিতে মনোনিবেশ করেছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা৷ যাতে প্রাথমিকভাবে এসেছে সাফল্যও৷ মিসাইল বিধ্বংসী এই অস্ত্রের নাম ‘কিলো অ্যাম্পিয়ার লিনিয়র ইনজেক্টর৷’ যাকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে ‘কালি’৷
কী ভাবে তার লীলা দেখাবে কালি?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনও শত্রুদেশ যদি ভারতের দিকে তাক করে মিসাইল হামলা চালায় তবে তা দেশের সীমান্তে প্রবেশের আগে মাঝপথেই ধ্বংস করে দেবে কালি৷ এক নয় একাধিক মিসাইল একইসঙ্গে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই অস্ত্র৷ এই মিসাইল বিধ্বংসী অস্ত্রের মধ্যে ‘রিলেটিভিস্টিক ইলেক্ট্রনস বিমস’ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ যা যে কোনও মিসাইলের গতিপথকে মুহূর্তের মধ্যে ধরে ফেলতে পারবে এবং মিসাইল চিহ্ণিত হওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তা ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হবে৷
জনশ্রুতি আছে, বিখ্যাত গ্রিক বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস সূর্যের আলোকে ব্যবহার করে একটি রোমান যুদ্ধজাহাজে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন৷ সেই কথাই ফের মনে করিয়ে দিচ্ছে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত এই প্রযুক্তি৷ পার্থক্য একটাই এক্ষেত্রে সূর্যের আলো নয় কাজে লাগানো হবে ইলেক্ট্রনস বিমকে৷
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ইলেক্ট্রিক্যাল মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে মিসাইল ধ্বংস করবে কালি৷ শুধুমাত্র মিসাইল নয় শত্রুপক্ষের যে কোনও ধরনের যুদ্ধবিমানকে মাঝ আকাশে ধ্বংস করে দিতে পারবে কালি থেকে নির্গত মাইক্রোওয়েভ৷ এ ছাড়াও শত্রুপক্ষের স্যাটেলাইটও ধ্বংস করতে পারবে কালি। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, যে কোনও লেজার অস্ত্রের থেকেও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্রযুক্তি৷ সূত্রের খবর, এই মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে মাইক্রোওয়েভ বন্দুক তৈরি করার কথাও ভাবা হচ্ছে৷
১৯৮৫ সালে প্রথমবার এমন একটি মিসাইল ধ্বংসকারী অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন বার্কের (ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার) তৎকালীন ডিরেক্টর আর চিদম্বরম৷ পরিকল্পনার ঠিক চার বছর পরে ১৯৮৯ সালে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় এই অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা৷ এতদিনে এই প্রকল্পে সাফল্য আসতে চলেছে৷ প্রথমে এর শক্তি ছিল ০.৪ গিগাওয়াট। পরবর্তীকালে এটিকে যত উন্নত করা হয়েছে এর শক্তিও ব়ৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এই অস্ত্রটির শক্তি ২০০ গিগাওয়াট।
ইতিমধ্যেই প্রাথমিক পরীক্ষায় কালি সফল হয়েছে বলে সূত্রের খবর৷ ২০১২ সালে সিয়াচেনে প্রাথমিক ভাবে এটি পরীক্ষা করা হয়েছিল৷ পাক সংবাদ মাধ্যম দাবি করে এর জেরে সিয়াচেন সংলগ্ন পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় একটি ব্যাপক তুষার ধসের সৃষ্টি হয়৷ যে ধসকে হিন্দু দেবী কালীর তাণ্ডবের সঙ্গেই তুলনা করেছিল পাক সংবাদ মাধ্যম।
তবে গবেষকদের দাবি, এখনও তাণ্ডব চালানোর জন্য পুরোপুরি তৈরি নয় কালি। এই যন্ত্রের ওজন কমবেশি ৩০ টন ফলে এটিকে বহন করা বেশ সমস্যার। তাছাড়া এটি চালাতে প্রচুর এনার্জি খরচ হয়। একবার ব্যবহার করার পর দ্বিতীয়বার ব্যবহার করার জন্য রিচার্জ করতেও প্রচুর সময় লাগে। এই সমস্যাগুলি সমাধানে জোর গবেষণা চলছে।
বিজ্ঞানীদের আশা খুব তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করবে কালি। তবে ভারতের ওপর বিদেশি শক্তির আগ্রাসন কতটা রুখতে তা কতটা কার্যকর হবে সেটা সময়ই বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy