ফাইল চিত্র।
কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে গান্ধী পরিবার নিজেদের ‘হাতের পুতুল’ হিসেবে কাউকে খাড়া করলে, দলের বিক্ষুব্ধ নেতারা তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করলেন।
আজ দিল্লিতে কংগ্রেস থেকে সদ্য ইস্তফা দেওয়া গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা, আনন্দ শর্মা ও পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ বৈঠক করেছেন। গুলাম নবি আজাদের মতো বাকি তিন জনও বিক্ষুব্ধ নেতাদের ‘জি-২৩’ গোষ্ঠীর নেতা। সাউথ অ্যাভিনিউ লেনে গুলাম নবির সরকারি বাংলোয় এই বৈঠকে সভাপতি নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
গান্ধী পরিবারের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতারা শশী তারুরকে প্রার্থী করতে পারেন বলে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। তারুর নিজেও ‘জি-২৩’-র সদস্য। তিনি আজ এক নিবন্ধে যুক্তি দিয়েছেন, আগামী ১৭ অক্টোবর কংগ্রেসের শীর্ষ পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়া দলের জন্য ভাল। তা হলে কংগ্রেসের কাজকর্ম, আদর্শ, দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গোটা দেশে ফের আলোচনা হবে। তারুর নিজের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে অবশ্য কিছুই খোলসা করতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ বিষয়ে নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হলেই স্পষ্ট করে বলতে পারব। আপাতত শুধু বলেছি, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়া উচিত। তা দলের জন্য ভাল।’’ পরে আবার তারুর স্বামী বিবেকানন্দকে উদ্ধৃত করে ইঙ্গিতপূর্ণ টুইটে লিখেছেন, ‘‘আমি শুধু সমাজ সংস্কারে নই, তার উন্নতিতে বিশ্বাস করি। আমি সমাজকে হুকুম করতে পারি না যে তোমাকে এ ভাবে এগোতে হবে। আমি শুধু রামের সেতু নির্মাণে যোগ দেওয়া কাঠবিড়ালি হতে চাই, যে বড় কাজে অল্প যোগদানেই সন্তুষ্ট।’’
বিক্ষুব্ধ শিবিরের সূত্রের খবর, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের মতো কেউ সভাপতি নির্বাচনে প্রার্থী হলে সমস্যা নেই। কিন্তু হরিয়ানার দলিত নেত্রী কুমারী শৈলজার মতো গান্ধী পরিবারের অনুগত কাউকে প্রার্থী করা হলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়া হতে পারে। জি-২৩-র সদস্যদের মধ্যে কংগ্রেস হাইকমান্ডের এক মাত্র হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডাকে নিয়ে চিন্তা ছিল। কারণ তাঁর পিছনে জনগণ ও কর্মীদের সমর্থন রয়েছে। হুডাকে সন্তুষ্ট করতে তাঁকে বিধানসভার পরিষদীয় দলনেতা করা হয়েছে। তাঁর আস্থাভাজনকে প্রদেশ সভাপতি করা হয়েছে। ছেলে দীপেন্দ্রকে রাজ্যসভার সাংসদ করা হয়েছে। কিন্তু হরিয়ানায় তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর শৈলজাকে দলের সভাপতি করা হলে হুডা বিদ্রোহ করবেন।
গান্ধী পরিবারের অনুগত নেতারা এখনও বলছেন, তাঁরা ফের রাহুলকে সভাপতি হওয়ার জন্য বোঝাবেন। কিন্তু তারুরের মত, ‘‘কেন কংগ্রেস সভাপতি পদে অন্য কেউ আসতে পারবেন না?’’ আজ পৃথ্বীরাজও সভাপতি নির্বাচন ও তাতে গান্ধী পরিবারের কারও প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নির্বাচন অবাধ হওয়া উচিত।’’ গান্ধীদের ঘনিষ্ঠদের আবার দাবি, সনিয়া-রাহুল দু’জনেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চান। সত্যিই কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে ২২ বছর পরে ফের কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ২০০০ সালে সনিয়া গান্ধীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জিতেন্দ্র প্রসাদ হেরে যান। তার আগে ১৯৯৭-এ সীতারাম কেশরী সভাপতি নির্বাচনে শরদ পওয়ার, রাজেশ পাইলটকে হারিয়ে দিয়েছিলেন। বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের জয়ের নজিরও রয়েছে। ১৯৩৯-এ সুভাষচন্দ্র বসু মহাত্মা গান্ধীর সমর্থনপ্রাপ্ত পট্টভি সীতারামাইয়াকে হারিয়েছিলেন। ১৯৫০-এ নেহরু সমর্থিত জে বি কৃপালনীকে পুরুষোত্তম দাস টন্ডন হারিয়ে দেন।
কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দিয়ে গুলাম নবি বলেছিলেন, সভাপতি নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে। রাহুল গান্ধী সভাপতি না হলেও কোনও ‘প্রক্সি’ বসিয়ে তাঁকে হাতের পুতুল করে রাখা হবে। সভাপতি নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মধুসূদন মিস্ত্রি আজ দাবি করেছেন, সব নিয়ম মেনেই হচ্ছে। কংগ্রেস মুখপাত্র গৌরব বল্লভ দলের মঞ্চ থেকে গুলাম নবিকে প্রশ্ন করেছেন, ‘‘২০২১-এর আগে আজাদের রাজ্যসভার আসন, দিল্লিতে সরকারি বাংলো সুরক্ষিত ছিল। সে সব চলে যাওয়ার পরে তাঁর দিব্যজ্ঞান হয়েছে।’’
আনন্দ শর্মা, পৃথ্বীরাজরাও আজ গুলাম নবিকে প্রশ্ন করছেন, তিনি দলের মধ্যে থেকে লড়াই না করে ইস্তফা দিলেন কেন! গুলাম নবি জানান, জম্মু-কাশ্মীরের সংগঠন নিয়ে কংগ্রেস হাইকমান্ড তাঁর কথা না শোনায় আর থাকা সম্ভব ছিল না। তাই তিনি নিজের দল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী তারা চাঁদ-সহ ৬৪ জন নেতা কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এর আগে গুলাম নবির ঘনিষ্ঠ ছ’জন বিধায়ক ইস্তফা দিয়েছিলেন। নিজের ঘর সামলাতে আজ কংগ্রেস নেতৃত্ব জম্মু-কাশ্মীরের ভারপ্রাপ্ত রজনী পাটিলকে শ্রীনগরে পাঠিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy