(বাঁ দিকে) শান্তনু সেন এবং আরাবুল ইসলাম (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
অবশেষে দলের দুই পরিচিত মুখ শান্তনু সেন এবং আরাবুল ইসলামকে নিলম্বিত ( সাসপেন্ড) করল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে তাঁদের অপরাধ বা শাস্তির মেয়াদ সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি দলের তরফে!
রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু ও প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুলকে নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে দীর্ঘ দিন ধরেই টানাপোড়েন চলছিল। তাঁদের কাজকর্ম নিয়ে ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দু’জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এবং তা ঘোষণার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মন্ত্রী তথা দলের এক বর্ষীয়ান নেতাকে। কিন্তু তিনি সেই দায়িত্ব নিতে না-চাওয়ায় শেষ পর্যন্ত দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নির্দেশে শুক্রবার নিলম্বনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। সংক্ষিপ্ত ভিডিয়ো-বার্তায় তিনি এই সিদ্ধান্ত জানানোর পরেই শাস্তির কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শান্তনু। তাঁর মন্তব্য, ‘‘জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলের সঙ্গে থেকে এ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করেছি। তাতে কোনটা দল-বিরোধী কাজ সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না!’’ শাসক দলের এই পদক্ষেপ ঘোষণা ঘিরে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। আরাবুল অবশ্য বলেছেন, ‘‘দল যেটা ভাল মনে করেছে, সেটাই করেছে। দলের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিলাম। এই নিয়ে আমি কোনও কথা বলব না।’’
আর জি কর-কাণ্ডের পরে প্রকাশ্যে মুখ খুলে বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ, চিকিৎসক শান্তনু। তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার খুন ও ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন। ওই মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছিলেন তিনি। এমনকি, ওই অধ্যক্ষের দুর্নীতির বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও কোনও ফল না-হওয়ার অভিযোগও করেছিলেন ওই তৃণমূল নেতা। শান্তনুর ভূমিকায় স্বাস্থ্য প্রশাসনে চূড়ান্ত অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল সেই সময়ে। অন্য দিকে, শাসক দলের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে শান্তনুর পাল্টা গোষ্ঠীর অভিযোগ ছিল, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষমতা দখলের জন্য আর জি করের শুরু হওয়া আন্দোলনে মদত দিয়েছেন ওই প্রাক্তন সাংসদ।
এর পরে সম্প্রতি ডায়মন্ড হারবারে ‘সেবাশ্রয়’ প্রকল্পের সূচনার সময়ে চিকিৎসকদের নিয়ে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আয়োজিত সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির মধ্যে ছিলেন শান্তনু। এমনিতেই অভিষেকের প্রকল্পের প্রেক্ষিতে সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো সর্বত্র পর্যাপ্ত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। স্বাস্থ্য মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, আর জি কর থেকে ‘সেবাশ্রয়’, সব কিছুই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নজরে ছিল। তা থেকেই এই সিদ্ধান্ত।
ভাঙড়ে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠা আরাবুলকে শাস্তি দিয়েছে তৃণমূল। দলের তরফে ভারপ্রাপ্ত বিধায়ক সওকাত মোল্লার সঙ্গে প্রায় প্রতিনিয়ত সংঘাতের কারণে অশান্তি ছড়িয়েছে এলাকায়। এক সময়ে মমতার অনুগত হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। দলের এই সিদ্ধান্তের পরে এ দিন আরাবুল-বিরোধীরা ভাঙড়ে বাজি পুড়িয়ে মিষ্টি বিলি করে উচ্ছ্বাস দেখান! এই দিয়ে দলে পঞ্চম বার শাস্তির মুখে পড়লেন আরাবুল!
তৃণমূলের সিদ্ধান্ত ঘিরে নানা প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘প্রথম থেকে তৃণমূলে থাকা আরাবুলদের শাস্তি ঘোষণা করছেন কংগ্রেস, বিজেপি ঘুরে তৃণমূলে আসা নেতা। যখন তাঁর ক্ষমতা ছিল, শান্তনু সেন হাতে মাথা কাটতেন। এ বার তৃণমূল তাঁদের মাথা হাতে কাটছে! ‘সেবাশ্রয়’ করে স্বাস্থ্য পরিষেবার দুরবস্থা দেখানো হচ্ছে বলে যখন কথা হচ্ছে, তখন শান্তনুকে শাস্তি দিয়ে ভাইপোকে বার্তা দেওয়া হল। আবার আরাবুলকে শাস্তি দিয়ে ভাইপোর পছন্দের সওকাতকে খুশি রাখা হল। সবই পিসি-ভাইপোর খেলা!’’ রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পালেরও বক্তব্য, ‘‘এটা তো গোষ্ঠী-দ্বন্দের ফল। ভাইপো শিবিরের এক জন আর পিসির শিবিরের এক জন সাসপেন্ড হয়েছেন। আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে চক্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন শান্তনু। মুখ্যমন্ত্রী সেটা কী করে মেনে নিতেন? আর আরাবুল-সওকাতের তো দীর্ঘ দিনের দ্বন্দ্ব।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়েরও দাবি, ‘‘অপরাধীদের সঙ্গে থাকলে তার ফল ভুগতে হবেই! তবে সন্দীপ ঘোষেরা তৃণমূলের কাছে অনেক বেশি মূল্যবান, শান্তনুরা যায় যাক!’’ তৃণমূলের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই নিয়ে কেউ মুখ খোলেননি। তবে তৃণমূলের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘এটা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলনেত্রীর। অন্য কারও মাথা ঘামানোর দরকার নেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy