Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Puri Jagannath temple

ভক্তের ভাবাবেগ, না মন্দিরের স্থাপত্য রক্ষা

ভুবনেশ্বরের প্রবীণ জগন্নাথ গবেষক সুরেন্দ্রনাথ দাস জানাচ্ছেন, ১৯৭৮ সালে ৭১ দিন ধরে গোটা রত্নভান্ডারের সামগ্রীর হিসেব করা হলেও মণিমুক্তোর মান যাচাই করে দাম নির্ণয় করা হয়নি।

puri

পুরীর জগন্নাথ মন্দির। —ফাইল চিত্র।

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪ ০৭:৫৯
Share: Save:

পুরীর জগন্নাথদেবের গয়নাগাঁটির সঙ্গে শুধু ঐতিহ্য নয়, অগুনতি ভক্তের ভাবাবেগও জড়িয়ে। রত্নভান্ডারের বাহির ভান্ডারে রক্ষিত বিভিন্ন উৎসবের দিনে জগন্নাথের পরার বেশভূষা, গয়নাগাঁটি দেখলেই ভক্তের চোখ বিস্ফারিত, হৃদয় বিগলিত হয়। ঠাকুরের নিত্য ব্যবহার্য কিছু সামগ্রী, সোনার জিভছোলা, স্নানের রুপোর ঘড়া, সেবায়েত ভান্ডার মেকাপ তাঁর অফিসঘরে বার করে রাখেন। শ্রীমন্দিরের ভিতর ভান্ডারের সামগ্রী সাধারণত জগন্নাথদেবের আচার-অনুষ্ঠানের কাজে লাগে না। তা যেন ব্যাঙ্কের ‘লকার’! ওই বন্ধ কুঠুরি ঘিরেই অনন্ত রহস্যের পরত।

ভুবনেশ্বরের প্রবীণ জগন্নাথ গবেষক সুরেন্দ্রনাথ দাস জানাচ্ছেন, ১৯৭৮ সালে ৭১ দিন ধরে গোটা রত্নভান্ডারের সামগ্রীর হিসেব করা হলেও মণিমুক্তোর মান যাচাই করে দাম নির্ণয় করা হয়নি। কারণ, সে-বার অন্ধকার ভিতর ভান্ডার থেকে কোনও সামগ্রী বার করা হয়নি। ওড়িশার তৎকালীন রাজ্যপাল বিডি শর্মা নিজে উদ্যোগী হয়ে তামিলনাডু থেকে কয়েক জন ওস্তাদ জহুরিকে পুরীতে পাঠান। কিন্তু তাঁদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব হয়নি।

তিরুপতি বা দক্ষিণ ভারতের অনেক মন্দিরের তুলনায় জগন্নাথদেবের সম্পদের পরিমাণ মধ্যবিত্তও লাগতে পারে। কিন্তু পুরাণ, লোককথা মিলিয়ে পুরীর রত্নভান্ডারের অন্য মহিমা। শ্রীমন্দিরের জয় বিজয় দরজায় লেখা, দাক্ষিণাত্য জয় করে রাজা কপিলেন্দ্রদেব ১৬টি হাতির পিঠে বোঝাই ধনরত্ন মন্দিরে দান করেছিলেন। ভিতর ভান্ডারে নাকি তা-ও আছে। আবার ১৯৮২ এবং ১৯৮৫ সালে ভিতর ভান্ডারের কিছু সোনা ও রুপো বের করে গর্ভগৃহের দরজা এবং বলভদ্রের মুকুটের মেরামতি করা হয়েছিল— শ্রীমন্দিরের নথিতে তারও খুঁটিয়ে হিসেব লেখা।

ছ’বছর আগে সার্চলাইটের আলো ফেলে ভিতর ভান্ডার দেখার আগে পরিদর্শনকারীরা জগন্নাথের ভান্ডার রক্ষক রুপোর লোকনাথের (শিবের একটি রূপ) পা ছুঁয়ে শপথ নিয়েছিলেন, ‘যা দেখব, কাউকে বলব না!’ ভয়ানক রাগী ঠাকুর লোকনাথকে চটানোর ভয় বিলক্ষণ, তবু সাধাসাধি করলে তাঁরা এ টুকু বলেন, ‘‘আলো ফেলে চোখ ঝলসানো হিরে-জহরত কিছু চোখে পড়েনি। তবে গোটা দুয়েক সিন্দুক, খান চারেক লোহার ট্রাঙ্ক ভাঙাচোরা ঘরটিতে রয়েছে। আয়তনে বাহির ভান্ডারের থেকে সামান্য বড় ভিতর ভান্ডার, ২০ বাই ২০ ফুট হবে।’’

ওড়িশার নতুন বিজেপি সরকার নিযুক্ত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশে আজ, রবিবার ভিতর ভান্ডারের দরজা খোলা বা ভাঙা হলে কি সম্পদ জরিপের পরিকল্পনা? সে-ক্ষেত্রে সব সামগ্রী রত্নভান্ডারের বাইরে আনতে হবে। ইউনেস্কোর উপদেষ্টা সংস্থা আইকোমসের সদস্য পুরী বিষয়ক গবেষক সূর্যসারথি দাস বলছেন, ‘‘এক বার রত্নভান্ডার সারাই শুরু হলে কয়েক মাস লেগে যাবে। চট করে ধনরত্ন ফেরানো যাবে না।’’

তা হলে রত্নভান্ডার সারাই শুরু হলে কোথায় থাকবে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার ধনসম্পদ? রীতি অনুযায়ী, ঠাকুরের সম্পত্তি শ্রীমন্দিরের বাইরে বের করা যাবে না। সেবায়েতরা বলেন, শ্রীমন্দিরে মা বিমলার মন্দির বা সাক্ষীগোপালের মন্দিরের পিছনে কিছুটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে। গর্ভগৃহের কাছে জগন্নাথের পালঙ্কের নীচে কিংবা ভান্ডার মেকাপের অফিস ঘর বা গর্ভগৃহ ও জগমোহনের মাঝে ভিতরকাঠের কোথাও ভিতর ও বাহির ভান্ডারের রত্নরাজির স্ট্রংরুম হওয়াও সম্ভব। সে-ক্ষেত্রে দর্শনের সময়ে ভক্তদের ভিতরকাঠের সীমানা পার হওয়া নিষেধ হতে পারে।

আবার এমনও হতে পারে এ বার রত্নভান্ডার খুলে দেখেই তা আপাতত বন্ধ রাখা হল। বিষয়টি এখনও খোলসা করছে না ওড়িশা প্রশাসন। জগন্নাথের মণিমুক্তো ঘাঁটাঘাঁটি স্পর্শকাতর বিষয়। তবে স্থাপত্যবিদদের মতে, মন্দিরের স্বাস্থ্য রক্ষায় শেষ পর্যন্ত রত্নভান্ডারে হাত দেওয়া ছাড়া গতি নেই।

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Puri Jagannath temple puri Odisha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE