হারজিত নয়! সহাবস্থান বলাই ভাল!
আমের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রদেশের আম ঠাঁই পেয়েছে দেশের জিআই-তালিকায়। মালদহের হিমসাগর-ফজলির পরে অন্ধ্রপ্রদেশের বেগমফুলি, উত্তরপ্রদেশের মালিহাবাদী-দসেরি। ডোকরা-শিল্পেও বস্তারের পরে নিজের নাম জুড়েছে বাংলা।
আম বা ডোকরা-শিল্প যদি নানা জায়গায় হতে পারে, তবে রসগোল্লাই বা হবে না কেন? খানিকটা সেই যুক্তিতেই সায় দিয়ে বাংলার পরে ওড়িশাকেও রসগোল্লার কৃতিত্বের ভাগিদার করলেন জিআই-কর্তৃপক্ষ। ২০১৭-র ১৪ নভেম্বর জিয়োগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন-তকমা আদায় করেছিল ‘বাংলার রসগোল্লা’। আর সোমবার শিকে ছিঁড়েছে ওড়িশার বরাতে। এ দেশের জিআই তালিকাভুক্ত পণ্যের তালিকায় নবতম সংযোজন ‘ওড়িশার রসগোলা’।
‘‘খেয়াল করুন, একটা ল’য়ের অভাব আছে, ওড়িশা কিন্তু রসগোলা-র জন্য এই কৃতিত্ব পেয়েছে,’’ বলছেন, রাজ্যের বিজ্ঞান-প্রযুক্তির পেটেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট মহুয়া হোমচৌধুরী। শুধু ল’য়ে নয়, সৃষ্টির প্রকরণ, ইতিহাস-ভূগোলেও বাংলা ও ওড়িশার রসগোল্লায় ফারাক থাকছে। ‘বাংলার রসগোল্লা’র মধ্যে কেসি দাশ-ঘরানার আদিপুরুষ নবীনচন্দ্র দাশের স্পঞ্জ রসগোল্লা বা নদিয়ার ফুলিয়ার হারাধন ময়রার সৃষ্টির ইতিহাসই কার্যত স্বীকৃতি পায়। মোটামুটি ১৫০ বছরের সৃষ্টি রসগোলকের বিভিন্ন ঘরানায় উপাদান বা কসরতের মাপকাঠি মেলে ধরে বাংলা। এর পাশে পুরীর জগন্নাথধামে উল্টোরথের পরে নীলাদ্রী বিজে-র পরম্পরার কথা মেলে ধরেছে ওড়িশা। রথে চড়ে বেড়িয়ে ফেরার সময়ে ক্ষুব্ধ স্ত্রী লক্ষ্মীকে তুষ্ট করে মন্দিরে ঢুকতে জগন্নাথদেব রসগোল্লার উপহারই অর্পণ করেন। এই রসগোল্লার স্বীকৃতির জন্য বাংলার আগেই প্যানেল গঠন করেছিল ওড়িশা। কিন্তু বিষয়টি চাউর হতে নড়ে বসে বাংলা। ওড়িশার প্রায় দু’বছর আগে ‘বাংলার রসগোল্লা’র স্বীকৃতি লাভ আমলাদের তৎপরতারই ফসল। ওড়িশার রসগোল্লাবিদ অসীম মোহান্তি অবশ্য দুই পড়শি রাজ্যের আঁতের লড়াইয়ে ঢুকতে চাইছেন না। ‘‘বাংলা স্পঞ্জ রসগোল্লার জন্য স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের রাজ্যের রসগোলা তুলতুলে নরম,’’ বলছেন অসিতবাবু।
আরও পডু়ন: উন্নাও: বিজেপি বিধায়কের নামে খুনের মামলা দায়ের
তবে জিআই-স্বীকৃতি মানেই মোক্ষলাভ নয়, তা এত দিনে বুঝেছে বাংলা। রসগোল্লার বিপণন বা ব্র্যান্ডিংয়ের প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে জিআই-লাভ। কিন্তু রসগোল্লা-স্রষ্টাদের মধ্যে জিআই লোগো এত দিনে বিলিই করে উঠতে পারেনি বাংলা। জনৈক সরকারি কর্তার কথায়, ‘‘খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ দফতর কাজটা করছে। রসগোল্লার জিআই-দৌড়ের সুফলটা তার পরেই বোঝা যাবে।’’
বাংলা বা ওড়িশা, রসগোল্লা আছে রসগোল্লাতেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy