নতুন ট্রেনের ঘোষণা না করে এ বারেও যাত্রী সুরক্ষা বাড়াতে পরিকাঠামো উন্নয়নেই জোর দেবে রেল মন্ত্রক।
এ বারের বাজেটেও নতুন কোনও চমক নেই, বরং রেলের পরিকাঠামো ঢেলে সাজার উপরেই জোর দিলেন অরুণ জেটলি।
গত দুর্গাপুজোর মরসুমে উত্তরপ্রদেশে পর পর চারটি রেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন বহু যাত্রী। ওই সময় রেলের বিভাগীয় তদন্তে উঠে আসে পরিকাঠামোর বেহাল দশার কথা। বিশেষ করে পুরনো লাইনের ভগ্নদশার কথা। রেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়, দেশের বেশির ভাগ পুরনো লাইনই বদলে ফেলা হবে। এই কারণে নতুন লাইন পাতার কাজও কিছুটা ধাক্কা খায়। নতুন লাইন তুলে এনে পুরনো লাইনের জায়গায় পাতা শুরু হয়। এই কাজটিই চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।
আভাস ছিলই। শোনা যাচ্ছিল, নতুন ট্রেনের ঘোষণা না করে এ বারেও যাত্রী সুরক্ষা বাড়াতে পরিকাঠামো উন্নয়নেই জোর দেবে রেল মন্ত্রক। জেটলির বৃহস্পতিবারের বাজেট বক্তৃতায় তারই প্রমাণ মিলল। তিনি ঘোষণা করলেন, আগামী আর্থিক বছরে ৩৬ হাজার কিলোমিটার লাইনের সংস্কার করা হবে। জানালেন, মোট পাঁচ হাজার কিলোমিটার লাইনের গেজ পরিবর্তন করা হবে। তবে, রেলের বেহাল আর্থিক অবস্থা সত্ত্বেও যাত্রীভাড়া বাড়িয়ে জনপ্রিয়তা খোয়াতে চাইল না মোদী সরকার। তার একটা বড় কারণ সম্ভবত এ বছরেই বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। তবে, রেলের কর্তাব্যাক্তিদের একাংশের ধারণা, গত বেশ কিছু দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে, বাজেটের সময় রেলের ভাড়া বৃদ্ধির কথা ঘোষণা না করলেও পরে ঘুরপথে ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
ভোট-বাজেট: গ্রাম, কৃষিতে দেদার বরাদ্দ
অর্থমন্ত্রী জানান, এ বারের রেল বাজেটের অভিমুখ যাত্রী সুরক্ষা। এ দিকে তাকিয়েই বিভিন্ন কার্যকরী ব্যবস্থা রূপায়ণের উপরেই জোর দিয়েছেন তিনি। এর প্রথম ধাপ হল রেললাইন সংস্কার। দ্বিতীয় হল, কুয়াশার সময়ে যাত্রী সুরক্ষা এবং দুর্ঘটনারোধে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া। বোর্ড সূত্রের খবর, উত্তর থেকে উত্তর-পূর্বের জোনগুলি, যেখানে কুয়াশার প্রকোপ অত্যন্ত বেশি, সেখানে ট্রেনের ইঞ্জিনে ‘ফগপাস’ নামে নতুন এক যন্ত্র বসানোর কাজ শুরু করেছে রেল। ইতিমধ্যেই ৭০০টি ইঞ্জিনে তা বসানোও হয়েছে। এখন তা পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো হচ্ছে। রেললাইনে আরও বেশি করে বসানো হবে ‘অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস’ (এসিডি), যা দুর্ঘটনারোধে চালকদের সাহায্য করবে। এ বারের বাজেটে যাত্রী নিরাপত্তার উপরেও কিছুটা জোর দিয়েছেন জেটলি। তিনি জানিয়েছেন, ট্রেনের কামরায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে।
তবে, ওয়াইফাই ছাড়া যাত্রী পরিষেবা নিয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও ঘোষণা করেননি জেটলি। সময়ে ট্রেন চালানো বা ট্রেনের খাওয়াদাওয়ার মানোন্নয়নের মতো অত্যন্ত জরুরি যাত্রী পরিষেবা নিয়ে একটি শব্দও ব্যয় করেননি তিনি। অবশ্য নতুন রেক আনার কথা বাজেট বক্তৃতায় ঘোষণা করেছেন তিনি। চেন্নাইয়ের আইসিএফ (ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি) নতুন ধরনের (টি-১৮) রেক তৈরি করেছে, লোকাল ট্রেনের মতো যার দু’দিকেই ইঞ্জিন। কামরাগুলিও অত্যন্ত আধুনিক। চলতে পারে সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগে। বোর্ড সূত্রে খবর, আগামী জুনে এই রেক দিয়েই শতাব্দী এক্সপ্রেস চালানো হবে।
রেলের পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া শুরু করেছিলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। পীযূষ গয়ালও সে পথেই হাঁটছেন। কারণ, পরিকাঠামোর এ হেন নিদারুণ অবস্থায় রেল দুর্ঘটনা এড়াতে এ ছাড়া অন্য কোনও রাস্তাও নেই মন্ত্রকের হাতে। তবে, শেষমেশ তা কতটা কার্যকরী হবে সেটা সময়ই বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy