Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

টিকিটে নয়, ছাড়ের টাকা ব্যাঙ্কে দিতে চায় রেলও

রান্নার গ্যাসের পরে, এ বার রেলের টিকিটে দেওয়া ভর্তুকির টাকাও সরাসরি যাত্রীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করল কেন্দ্র। দূরপাল্লারই হোক বা শহরতলির ট্রেন, যাত্রী পিছু প্রতি টিকিটেই ভর্তুকি দিয়ে থাকে রেল।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৩
Share: Save:

রান্নার গ্যাসের পরে, এ বার রেলের টিকিটে দেওয়া ভর্তুকির টাকাও সরাসরি যাত্রীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করল কেন্দ্র।

দূরপাল্লারই হোক বা শহরতলির ট্রেন, যাত্রী পিছু প্রতি টিকিটেই ভর্তুকি দিয়ে থাকে রেল। কিন্তু প্রবীণ নাগরিকরা, পদ্ম বা অর্জুন পুরস্কার বিজয়ী, সাংবাদিক, ক্যানসার বা থ্যালাসেমিয়া রোগীর মতো যাত্রী ও তাঁদের সঙ্গীরা টিকিটে বাড়তি কিছুটা ছাড় পান। সেই ছাড়ের টাকা সরাসরি যাত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর কথা ভাবছে রেল মন্ত্রক। প্রস্তাবটা দিয়েছে নীতি আয়োগ। প্রাথমিক পর্যায়ে এই পরিকল্পনা সফল হলে, দ্বিতীয় পর্যায়ে আধার নম্বরের ভিত্তিতে ওই যাত্রীর আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখা হবে। এবং তার পরেই স্থির হবে ওই যাত্রী ভর্তুকি পাওয়ার যোগ্য কি না।

রেলকে যাত্রী ভাড়ায় ফি বছর ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। রেল মনে করছে, যাত্রীর আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে ভর্তুকি দেওয়া শুরু করলে ছাড়প্রাপ্তের সংখ্যাটা এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যাবে। ভর্তুকিও কমবে তাতে। লোকসানে চলা রেল কিছুটা হলেও সাশ্রয়ের মুখ দেখবে।

নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসে ইস্তক সরকারি সুবিধার সরাসরি হস্তান্তর (ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার) চালু করতে চাইছেন সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে। রান্নার গ্যাসে ইতিমধ্যেই তা চালু হয়েছে। এতে গ্যাস কিনতে হচ্ছে পুরো দামে। আর ভর্তুকির টাকা জমা পড়ছে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে। রেলেও সেই ব্যবস্থা চালু করার পরামর্শ দিয়েছে নীতি আয়োগ। রেল তাদের প্রস্তাব মেনে নয়া ব্যবস্থা চালু করলে সব যাত্রীকেই পুরো টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হবে। ছাড়ের টাকা পরে সংশ্লিষ্ট যাত্রীর অ্যাকাউন্টে জমা করবে রেল। এটা প্রথম পর্যায়ের পরিকল্পনা।

দ্বিতীয় পর্যায়ে নীতি আয়োগের প্রস্তাব, ছাড়ের জন্য আবেদন করলেই আধার নম্বর জানানো বাধ্যতামূলক করা হোক। সেই আধার নম্বরের ভিত্তিতে ওই যাত্রীর আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তিনি ভর্তুকি পাওয়ার যোগ্য কি না। যদি দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট যাত্রী আর্থিক ভাবে দুর্বল, একমাত্র সে ক্ষেত্রেই তিনি ভর্তুকি পাবেন। গ্রাহকের আয় নির্দিষ্ট সীমার উপরে হলে এখন আর রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি মেলে না। রেলও আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার যাত্রার পরে ছাড় বন্ধ করার বিষয়ে ভাবছে। এতে সাশ্রয় হবে রেলের।

নীতি আয়োগ মনে করছে, সরাসরি অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো শুরু হলে দুর্নীতিও কমতে বাধ্য। সাশ্রয় হবে তাতেও। রান্নার গ্যাসের মতো রেশন ব্যবস্থাতেও পরীক্ষামূলক ভাবে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে চণ্ডীগড় ও পুদচেরিতে। সরকারি সূত্রের দাবি, পাইলট প্রকল্পে ইতিমধ্যেই সাফল্য মিলেছে। কমেছে ভুয়ো ব্যক্তিদের উৎপাত। এমনও বলা হচ্ছে যে, সরকারি সুবিধা প্রাপ্য কি না আধার নম্বরের ভিত্তিতে যাচাই করে নিয়ে ভর্তুকির টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হলে, দুর্নীতির কারণে অপচয় ৩৫-৪০ শতাংশ কমে আসতে পারে।

রেলেরও দাবি, প্রায়ই টিকিট পরীক্ষার সময়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ভুয়ো পাশ উদ্ধার হয়। তদন্তে দেখা গিয়েছে, কম ভাড়ায় যাত্রা করতে অন্যের নামে থাকা পাশ ব্যবহার করে থাকেন অনেকে। এই চক্রের সঙ্গে এক শ্রেণির রেলকর্মীর যোগ রয়েছে। রেলের এক কর্তার কথায়, ‘‘নতুন ব্যবস্থা চালু হলে ভর্তুকির টাকা যাবে প্রকৃত ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে। যাঁরা অন্যের নামে থাকা পাশ ব্যবহার করছেন তাদের আর লাভ হবে না।’’

তবে আশঙ্কার দিকও থাকছে। এই ব্যবস্থা চালু হলে অনেক গরিব ব্যক্তিই অসুবিধার মুখে পড়তে পারেন। এখনও দেশের একটি বড় অংশের, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার মানুষের একাংশের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। অ্যাকাউন্টই না থাকলে ভর্তুকির টাকা পাবেন কী করে? রেলের কাছ থেকে ভর্তুকির টাকা দাবি করার নিয়ম চালু হলে নিরক্ষর যাত্রীরা সমস্যায় পড়বেন। যাঁদের আধার কার্ড নেই, তাদেরও ভর্তুকি পেতে সমস্যা হবে। রেলের অবশ্য আশ্বাস, নয়া ব্যবস্থা চালু করার আগে এই ধরনের সমস্যাগুলি মিটিয়ে ফেলা হবে। যাতে প্রকৃত যাত্রীরা ভর্তুকির সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন।

অন্য বিষয়গুলি:

subsidy money rail Ticket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE