মোদী ওই চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় শিল্পপতি অনিল অম্বানীকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করে কংগ্রেস। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
রাফাল চুক্তির পর ক্রেতাকে ‘উপহার’ দিয়েছিল যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারী ফরাসি সংস্থা দাসো। সেই ‘উপহার’ ১০ লক্ষ ইউরো। ভারতীয় মুদ্রায় ৯ কোটি টাকার কিছু কম। ভারতীয় মধ্যস্থতাকারীকে দেওয়া দাসোর এই ‘উপহার’-ই আপাতত চর্চায়। ফ্রান্সের এক অনলাইন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কেন এই ‘উপহার’, তার কোনও সন্তোষজনক জবাব আর্থিক তদন্তকারীদের দিতে পারেনি দাসো।
তিন দফায় এ সংক্রান্ত একটি তদন্তমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফ্রান্সের ওই সংবাদমাধ্যম। তারা জানিয়েছে, উপহারের কথা ২০১৮ সালের অক্টোবরেই জেনেছিল ফ্রান্সের দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ। যদিও এ ব্যাপারে দাসো-র কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা জানায়, ওই অর্থ তাদের ভারতীয় সাব কন্ট্রাক্টরকে দেওয়া হয়েছে রাফাল বিমানের ৫০টি নমুনা তৈরি করার জন্য।
ফরাসি যুদ্ধ বিমানের নমুনা বা ‘রেপ্লিকা’ তৈরির জন্য ভারতীয় সংস্থার প্রয়োজন কেন পড়ল, প্রশ্ন করা হলে দাসো অবশ্য কোনও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। এমনকি ওই ৫০টি নমুনা তৈরি হয়েছে কি না, তার প্রমাণও দিতে পারেনি দাসো।
গত দু’দশকে ভারতের দেওয়া প্রথম যুদ্ধবিমানের বরাত ছিল এটি। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার আসার চার বছরের মাথায় ফ্রান্সের সংস্থা দাসো-র সঙ্গে ৩৬টি যুদ্ধবিমানের চুক্তি হয় ভারতের। যা নিয়ে কেন্দ্রে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল বিরোধীরা। এমনকি মোদী ওই চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় শিল্পপতি অনিল অম্বানীকে ‘বিশেষ সুবিধা’ পাইয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করে কংগ্রেস। কেন না, রাফাল চুক্তির অব্যবহিত পরেই যুদ্ধবিমানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরির বরাত পায় অনিলের সংস্থা রিলায়্যান্স।
ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, দাসো-র হিসাব পরীক্ষা করেই ফরাসি দুর্নীতি দমন শাখা জানতে পারে ভারতীয় সংস্থাকে দেওয়া ওই বিশেষ ‘উপহারের’ কথা। ‘উপহার’ হিসেবে ৫ লক্ষ ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৪.৩৯ কোটি টাকা) ‘ক্রেতাকে দেওয়া উপহার’ উল্লেখ করেছিল দাসো। তদন্তের পরে অবশ্য জানা যায়, অর্থের অঙ্ক যা দেখানো হয়েছে, আসলে ব্যায় করা হয়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ যুদ্ধবিমানের ছোট নমুনা বা রেপ্লিকা তৈরির জন্য মডেল পিছু ২০ হাজার ইউরো খরচ করেছে দাসো। এ দিকে সেই নমুনা আদৌ তৈরি হয়েছে কি না, তার খবরই নেই সংস্থার কাছে।
যে ভারতীয় সংস্থা ডেফসিস সলিউশনকে নিজেদের সাব কন্ট্রাক্টর বলে দাবি করেছে দাসো, তার প্রধান সুসেন গুপ্তা। ফরাসি সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ২০১৯ সালে অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ড কাণ্ডে অর্থ তছরুপের ঘটনায় সুসেনকে গ্রেফতার করে ইডি। পরে জামিনে মুক্তি পান। ফরাসি সংবাদমাধ্যমটি তাদের তদন্তমূলক রিপোর্টে জানিয়েছে, ২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাফালচুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পরই ওই টাকা দিতে রাজি হয়েছিল দাসো।
প্রসঙ্গত, রাফাল চুক্তি অনুযায়ী দাসোর সঙ্গে ৩৬টি যুদ্ধবিমানের চুক্তি হয় ভারতের। ২০২২ সালের মধ্যে ওই বিমান সরবরাহ করার কথা দাসো-র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy