(বাঁ দিক থেকে ডান দিক) কমল নাথ, অশোক গহলৌত, এবং ভূপেশ বঘেল। ছবি: পিটিআই।
তিন বছর আগে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া যখন কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপির দিকে পা বাড়াচ্ছেন, সে সময় কংগ্রেস হাইকমান্ডকে কমল নাথ বলেছিলেন, সিন্ধিয়া গেলে যান। তাতে মধ্যপ্রদেশে তাঁর সরকার টলে যেতে পারে। কিন্তু আখেরে কংগ্রেসের ক্ষতি হবে না। কমল নাথের সব কথায় সায় দিয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের আর এক বর্ষীয়ান নেতা দিগ্বিজয় সিংহ।
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার কংগ্রেস ত্যাগের পরে সচিন পাইলট রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি তুলেছিলেন। অশোক গহলৌত তরুণ প্রজন্মকে গদি ছাড়তে চাননি। উল্টে সচিনকে কার্যত কোণঠাসা করে নিজের হাতেই দল ও সরকারের পুরো রাশ তুলে নিয়েছিলেন। কংগ্রেস হাইকমান্ড শেষ বেলায় দু’জনকে অন্তত এক মঞ্চে আনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু গহলৌত মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চেয়েছিলেন।
একই ভাবে ছত্তীসগঢ়ে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেলের হাতেই ছিল রাজ্যের সরকার ও কংগ্রেসের সংগঠনের রাশ। সেখানেও টি এস সিংহ দেও-র মতো বাকি নেতাদের কার্যত কোণঠাসা করে রেখেছিলেন বঘেল। শেষ বেলায় সিংহ দেও-কে উপমুখ্যমন্ত্রী করে কংগ্রেস হাইকমান্ড বঘেলকে সবাইকে নিয়ে চলার বার্তা দিয়েছিলেন।
কমল নাথ। অশোক গহলৌত। ভূপেশ বঘেল।
হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র ‘তিনে তিন’ জয়ের পরে কংগ্রেসের কাঠগড়ায় এই তিন জন নেতা। রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ে গহলৌত ও বঘেল মুখ্যমন্ত্রীর গদি হারিয়েছেন। মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ বিজেপির থেকে মুখ্যমন্ত্রীর গদি ছিনিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিন রাজ্যের ভোটে কংগ্রেস হাইকমান্ড এই তিন নেতার উপরেই পুরোপুরি রাশ ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিন জনের কেউই এআইসিসি-র নেতাদের রাজ্যে বিশেষ নাক গলাতে দেননি। তা সে রণকৌশল তৈরি হোক বা প্রার্থী বাছাই। তা সত্ত্বেও তিন রাজ্যে কংগ্রেসের হার এই তিন নেতার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিশেষত প্রবীণ নেতা কমল নাথ, অশোক গহলৌতের রাজ্য রাজনীতির ইনিংস এখানেই শেষ কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেস হাইকমান্ড এ বার লোকসভা ভোটের আগেই কমল নাথ-দিগ্বিজয় সিংহের বদলে অরুণ সিংহ, জিতু পাটোয়ারি, মীনাক্ষী নটরাজনের মতো তরুণ প্রজন্মের হাতে মধ্যপ্রদেশের ভার তুলে দিতে চাইছেন। রাজস্থানেও লোকসভা ভোটের আগে সচিন পাইলটের হাতে পুরো দায়িত্ব তুলে দেওয়ার চেষ্টা হবে। যাতে তিনি রাজস্থানে পাঁচ বছর পরে বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে পারেন। ছত্তীসগঢ়ে অবশ্য এখনও কংগ্রেসের হাতে ভূপেশ বঘেলের বিকল্প নেতা নেই।
কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের অপ্রত্যাশিত হারের জন্য কমল নাথ একাই দায়ী। তিনি অন্য কারও কথা শুনতে চাননি। কারও সঙ্গে আলোচনা করেননি। বিজেপি শিবরাজ সিংহ চৌহানকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী না করলেও তিনি যে ভাবে গোটা রাজ্যে প্রচার করেছেন, কমল নাথ তার অর্ধেক পরিশ্রমও করেননি। পুরোটাই ‘ভোট ম্যানেজমেন্ট’-এ ভরসা রেখেছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে কমল নাথের চাপে রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক জে পি আগরওয়ালকে সরিয়ে রণদীপ সুরজেওয়ালাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সুরজেওয়ালার দায়িত্বে কর্নাটকে কংগ্রেস জিতলেও তিনি মধ্যপ্রদেশে কমল নাথের কাছে পাত্তা পাননি।
ইন্ডিয়া-র শরিক সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা চাইলেও কমল নাথ ‘আরে ছোড়ো অখিলেশ-ভখিলেশ’ বলে নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন। কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল বিরোধী জোটের ইন্ডিয়া-র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করেছিলেন, ইন্ডিয়া-র প্রথম জনসভা হবে মধ্যপ্রদেশের ভোপালে। কমল নাথ হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনা না করেই তা পত্রপাঠ নাকচ করে দেন। সনাতন ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ানো ডিএমকে নেতারা তাঁর রাজ্যে এসে প্রচার করুন, তা কমল নাথ চাননি। উল্টে হিন্দু ভোটের আশায় ‘নরম হিন্দুত্ব’-এর পথে হেঁটেছিলেন। লাভ হয়নি। মানুষের হিন্দুত্বের আদত ধ্বজাধারীদেরই ভোট দিয়েছে। বিজেপির ‘কমল’-এ কাছে হারের পরে কংগ্রেসের কমল বলেছেন, ‘‘কোথায় খামতি থেকে গেল, খুঁজতে হবে।’’
রাজস্থানেও অশোক গহলৌত কংগ্রেস হাইকমান্ডকে রাজ্যে বিশেষ নাক গলাতে দেননি। মুখ্যমন্ত্রীর গদি আঁকড়ে থাকবেন বলে কংগ্রেস সভাপতির পদও নিতে চাননি। ভোটের আগে প্রার্থী বাছাইয়ের সময় তিনি পছন্দের লোকেদের প্রার্থী করা নিয়ে জেদ ধরেছিলেন। তা নিয়ে রাহুল গান্ধী-মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য হয়। সচিন পাইলটের দাবি ছিল, তরুণ প্রজন্মের নেতাদের প্রার্থী করা হোক। তা পুরোপুরি মানেননি গহলৌত। তাঁর সরকারের জনমুখী প্রকল্পে ভরসা করে গহলৌত ভেবেছিলেন, পাঁচ বছর অন্তর রাজস্থানে সরকার বদলের প্রথা বদলে দেবেন। ভোটের ফলের পরে গহলৌতের বক্তব্য, ‘‘সকলের কাছেই এই পরিণাম অপ্রত্যাশিত।’’
কংগ্রেসের কাছে সবথেকে বড় ধাক্কা ছত্তীসগঢ়ে ভূপেশ বঘেলের হার। ওবিসি নেতা বঘেলের ভূমিপুত্র হিসেবে পরিচিতি এবং তাঁর জনমুখী প্রকল্পে ভরসা করে ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেস সহজেই জিতে যাবে বলে আশা করেছিল। উত্তরপ্রদেশ, অসমের মতো রাজ্যে বিধানসভা ভোটে বঘেলকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, শেষ বেলায় মহাদেব অ্যাপ-এ তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং তা নিয়ে বিজেপির প্রচারের মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছেন বঘেল। গত পাঁচ বছর বিজেপি ছত্তীসগঢ়ে সে ভাবে লড়াইয়ে ছিল না বলে বঘেল অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy