Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

‘বহুত বড়ি গলতি’, পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষার হুঁশিয়ারি মোদীর, সেনাবাহিনীকে ‘স্বাধীনতা’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, দেশের মানুষ ‘পাল্টা জবাব’ চান। সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেওয়া হয়েছে।

পুলওয়ামায় নিহত জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রধানমন্ত্রীর। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

পুলওয়ামায় নিহত জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রধানমন্ত্রীর। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪০
Share: Save:

রণহুঙ্কার!

আক্ষরিক অর্থেই। পুলওয়ামায় সিআরপি কনভয়ে জঙ্গি-হামলাকে ‘বহুত বড়ি গলতি’ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাকিস্তান ও পাক মদতে পুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, ‘‘এর জন্য ওদের ‘বহুত বড়ি কিমত’ চোকাতে হবে।’’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, দেশের মানুষ ‘পাল্টা জবাব’ চান। সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পিছনে গোয়েন্দা-ব্যর্থতার পাশাপাশি মোদী সরকারের সার্বিক কাশ্মীর নীতি এবং উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদ দমনে ব্যর্থতার দিকেও আঙুল তুলেছে। একই সঙ্গে পুলওয়ামায় ৪৯ জন জওয়ানের হত্যার পরে দেশের নানা প্রান্তে দাবি উঠেছে, এর বদলা চাই। লোকসভা ভোট দোরগোড়ায়। অনেকেই বলছেন, পাঁচ বছর ধরে ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতির বড়াই করা মোদীর পক্ষে এই সময় কোনও ভাবেই সুর নরম করে কথা বলা সম্ভব নয়। তাই পাকিস্তানকে চোখ রাঙানো ছাড়া তাঁর সামনে আর কোনও উপায়ও ছিল না।

আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকের পরে নয়াদিল্লি স্টেশনে নতুন ট্রেন-১৮-এর যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠানে চোখ রাঙানোর সেই কাজটিই করেছেন মোদী। গোটা দেশে তৈরি আবেগকে পুঁজি করতে তিনি বলেন, ‘‘এই হামলার ফলে দেশে যে-আক্রোশ তৈরি হয়েছে, মানুষের রক্ত যে গরম হয়ে উঠছে, তা বুঝতে পারছি। এর কিছু জবাব দেওয়ার প্রত্যাশাও স্বাভাবিক। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে তাই পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে একঘরে করতে কূটনীতির অস্ত্রে জবাব শুরু ভারতের!

মোদী আজ সরাসরি নাম না করলেও তাঁর হুঁশিয়ারি যে ইমরান খানের পাকিস্তানের দিকেই, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়া আমাদের প্রতিবেশী দেশ যদি এ কথা ভেবে থাকে, ষড়যন্ত্র করে ভারতে অস্থিরতা তৈরি করতে পারবে, তা হলে পাকাপাকি ভাবে সেই স্বপ্ন দেখা তারা ছেড়ে দিক।’’ আর্থিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলা পাকিস্তান নাশকতা চালিয়ে ভারতের হাল খারাপ করতে চাইছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন মোদী।

আরও পড়ুন: উরি-পঠানকোট-ডোকলাম-মায়ানমারের পরে পুলওয়ামা, ফের প্রশ্নের মুখে ডোভাল নীতি

পাকিস্তানের তরফে অবশ্য গত কাল জঙ্গি হামলার প্রায় ১০ ঘণ্টা পরে একটি নিয়মমাফিক বিবৃতি এবং নিজেদের দায় অস্বীকার করা ছাড়া আজ সরকারি ভাবে মন্তব্য করা হয়নি। তাদের এই ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নানা মহলে।
মোদী সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ হল, কী ভাবে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। ‘রণং দেহি’ বলে মাঠে নামলেও তার পাল্টা ফল কী হতে পারে, সেই অঙ্কও কষতে হচ্ছে। সে কারণেই সার্জিকাল স্ট্রাইক-২, নাকি সীমিত যুদ্ধ, নাকি অন্য কোনও বিকল্প পথ নেওয়া হবে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। তবে সেখানেও রয়েছে চিনের কাঁটা। পাশাপাশি কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক পদক্ষেপের কথাও ভাবা হচ্ছে। মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকের পর অরুণ জেটলি যে সব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন, তা মূলত পাকিস্তানকে একঘরে করার কূটনৈতিক নীতি। যেমন, পাকিস্তানকে ‘সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ’ তালিকায় বাইরে করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ভারতে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সোহেল মাহমুদকে ডেকে পাঠিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছে দিল্লি। সরকারি সূত্রের খবর, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবে সব বিরোধী দলকে পাশে নেওয়ার সিদ্ধান্তও হয় ওই বৈঠকে।
প্রধানমন্ত্রী যে ‘উচিত শিক্ষা’র হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। উরি হামলার বদলা নিতে পাক অধিকৃত এলাকায় ঢুকে ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছিল সেনা। উত্তরপ্রদেশের ভোটে তাকে হাতিয়ারও করে বিজেপি। কিন্তু বাস্তব হল, সেই সার্জিকাল স্ট্রাইকের পরেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি, পাকিস্তানের গুলি চালানোও কমেনি, বেড়েছে। সরকারি হিসেবই বলছে, ২০১৬-র ৪৪৯টি সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৮-য় তা বেড়ে হয়েছে ১,৪৩২। সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে যতই বলিউডে সিনেমা তৈরি হোক, প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি বাহিনী যতই ‘হাউ ইজ দ্য জোশ’ বলে সার্জিকাল স্ট্রাইকের কথা স্মরণ করিয়ে দিন, তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তাই থাকছেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE