ফাইল ছবি
নিজস্ব সংবাদদাতা
সোনা-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের ইস্তফার দাবিকে ঘিরে তুলকালাম বাধল কেরলের রাজনীতিতে। বিমানের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে গ্রেফতার হলেন যুব কংগ্রেসের তিন কর্মী। তার প্রতিবাদে আবার যুব সিপিএমের বিক্ষোভে ভাঙচুর হল কংগ্রেসের একাধিক কার্যালয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চালাল পুলিশ, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফের শরিক আরএসপি-র নেতা, সাংসদেরাও আক্রান্ত হলেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে দিল্লিতে যখন বিরোধী ঐক্যের বাতাবরণ গড়ার চেষ্টা হচ্ছে, সেই সময়ে কেরলের ঘটনায় টানাপড়েন তৈরি হল কংগ্রেস ও সিপিএমের সম্পর্কে।
সোনা পাচার কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত স্বপ্না সুরেশ সম্প্রতি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়ে এবং প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন ও তাঁর পরিবার ওই পাচার চক্রের কাছ থেকে লাভবান হয়েছেন। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও টাকা ও সোনা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। বিজয়ন পত্রপাঠ অভিযোগ অস্বীকার করে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে’র পাল্টা অভিযোগ করলেও কেরলের রাজনীতি তখন থেকেই নতুন করে উত্তপ্ত। সেই উত্তাপই আরও চরমে পৌঁছেছে সোমবার ও মঙ্গলবারের ঘটনাপ্রবাহে। সিপিএমের তরফে বিবৃতি দিয়ে কেরলে কংগ্রেসের আচরণ সম্পর্কে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছে। বামেদের ফ্রন্ট এলডিএফ অবশ্য এ দিন সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকের পরে রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছে।
কান্নুরে একটি অনুষ্ঠান সেরে সোমবার সন্ধ্যায় বিমানে তিরুঅনন্তপুরম ফিরছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন। সঙ্গে ছিলেন এলডিএফের আহ্বায়ক ই পি জয়রাজন। উড়ান তিরুঅনন্তপুরমেপর মাটি ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিন যুবক নিজেদের আসন থেকে উঠে এসে মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোর চেষ্টা করেন। জয়রাজন এবং মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি বাধে। জয়রাজনের ধাক্কায় দুই যুবক পড়ে যান বলে অভিযোগ। বিমান থেকে নামিয়ে তিন যুবককে গ্রেফতার করা হয়। আপাতত তাঁরা হাসপাতালে, তাঁদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা-সহ গুরুতর কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে। উড়ানের নিয়ম ভাঙার অভিযোগেও তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। এই ঘটনার পরেই সিপিএমের তরফে বলা হয়েছে, ‘বিমানের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নকে যুব কংগ্রেস কর্মীদের আক্রমণ দেখিয়ে দিচ্ছে, কংগ্রেসের কী অবনতি হয়েছে! যারা এমন কাণ্ড ঘটাল, তাদের মাথায় কি কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃত্বের হাত রয়েছে’?
কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের জবাবের অপেক্ষা না করে সেই রাতেই তিরুঅনন্তপুরমে কেরল প্রদেশ কংগ্রেসের দফতর ইন্দিরা ভবনে ভাঙচুর চালায় ডিওয়াইএফআই, ভাঙা হয় একটি গাড়িও। কংগ্রেস দফতরে তখন ছিলেন প্রবীণ নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি। আরও কয়েকটি জেলায় কংগ্রেসের কার্যালয়ে সিপিএম ও তাদের যুব সংগঠন হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। বিরোধী দলনেতা ভি ডি সতীশনের সরকারি আবাসেও ঢুকে পড়েন ডিওয়াইএফআই কর্মী-সমর্থকেরা। মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা চেয়ে এবং সনিয়া-রাহুল গান্ধীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থা লাগিয়ে ‘প্রতিহিংসা’ চরিতার্থ করার প্রতিবাদে এ দিন কোল্লমে বিক্ষোভের সময়ে আরএসপি সাংসদ এন কে প্রেমচন্দ্রনও পুলিশের মারে আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ। যার তীব্র নিন্দা করে আরএসপি-র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘বিজেপির স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সব বাম দল মিলিত ভাবে লড়াই করছি। কেরলে পুলিশের এই নৃশংসতা আমাদের সেই প্রয়াসে দুর্ভাগ্যজনক ধাক্কা দিল!’’
এলডিএফের বৈঠকের পরে আহ্বায়ক জয়রাজনের অবশ্য বক্তব্য ‘‘কোথাও কোনও অশান্তি, প্ররোচনা চাই না। অপ্রীতিকর সব ধরনের ঘটনা বন্ধ করার আবেদন জানাচ্ছি।’’ মুখ্যমন্ত্রীকে জড়িয়ে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগে’র পাল্টা ২১ জুন থেকে জেলায় জেলায় প্রচার চালানোর কর্মসূচি নিয়েছে এলডিএফ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy