নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। ভারতের ফ্যাশন-দুরস্ত প্রধানমন্ত্রী। যাঁকে দেখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, ‘‘ফ্যাশনে মিশেল ওবামাকেও পিছনে ফেলে দিয়েছেন প্রাইম মিনিস্টার মোদী!’’ সেই মোদী আজ, শিক্ষক দিবসের প্রাক্ সকালে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে খোলামেলা আলাপচারিতায় জানিয়ে দিলেন, ‘‘আমার কোনও ফ্যাশন ডিজাইনারই নেই!’’
নয়াদিল্লির মানেকশ অডিটোরিয়ামে আজ পড়ুয়াদের মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দিব্যাংশ নামে এক ছাত্র প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ‘‘ভারতীয় পোশাককে নতুন করে আন্তর্জাতিক আঙিনায় পৌঁছে দিয়েছেন আপনি। যে ধরনের কুর্তা আপনি পরেন, তার কেতা দেশ দুনিয়ায় খ্যাত হয়েছে। কিন্তু আপনার ফ্যাশন ডিজাইনার কে?’’
শুনে স্মিত হাসেন প্রধানমন্ত্রী। তার পর বলেন, ‘‘কে আবার! আমার কোনও ফ্যাশন ডিজাইনার নেই। তবে হ্যাঁ, কিছু লোক দাবি করেন ঠিকই। আমি গায়ে মাখি না। ক’জনকে বলব আর কী-ই বা বলব!’’
আমদাবাদের ‘জেড ব্লু’ ফ্যাশন স্টোরের মালিক বিপিন চৌহান অ্যাদ্দিন দাবি করে এসেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পোশাক তিনিই ডিজাইন করেন! বিপণির ওয়েবসাইটেও লেখা রয়েছে, ‘আমরাই মোদী-কোটের জনক’। আজ মোদীর উক্তির পরে বিপণিটির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তারা অবশ্য ফোন ধরেনি, এসএমএসের উত্তরও দেয়নি।
মোদী-কুর্তার ‘জন্ম-কাহিনি’ও আজ জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘‘তখন আমি আরএসএসের এক প্রচারক মাত্র। সম্বল বলতে কয়েকটি ফুল হাতা কুর্তা আর কয়েকটি বই। একটা ছোট্ট ব্যাগে সে সব গুছিয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। নিজের জামাকাপড় নিজেই কাচতাম। একদিন হঠাৎ মনে হল, গুজরাতে এমনিই শীত বিশেষ পড়ে না। তা ছাড়া, ফুল হাতা কুর্তা ব্যাগে অনেকটা জায়গাও নিয়ে নেয়। সেগুলোর হাতা কেটে ‘হাফ স্লিভ’ করে নিলে কেমন হয়? যেমন ভাবা তেমন কাজ! সেই থেকে বেশির ভাগ সময় হাফ হাতা কুর্তা পরে বেড়াই আমি।’’
পোশাক-আশাকের জন্য অবশ্য হামেশাই বিতর্কে এসেছেন মোদী। ওবামার সফর কালেই মোদীর ‘পিন স্ট্রাইপ উলেন স্যুট’ নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। গাঢ় নীল রঙের সেই স্যুটের সারা গায়ে পিন স্ট্রাইপে লেখা ছিল, ‘নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী’। স্যুটের দাম নাকি দশ লক্ষ টাকা!
সে বিতর্ক পাশে সরিয়ে রাখলেও মোদীর পোশাক-পছন্দ গত দেড় বছরে বারবার সংবাদপত্রের শিরোনাম ছিনিয়ে নিয়েছে। তা সে স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তাঁর মাথায় পরা জয়পুরী সাফা (পাগড়ি) হোক বা, সর্দার বল্লভভাই পটেলের জন্মদিনে তাঁর মূর্তিতে মালা দেওয়ার সময় পরা লাল পশমিনা শাল!
মোদী আজ এ-ও বলেন, সাধ্য না থাকলেও তিনি বরাবরই জামাকাপড় কেতার সঙ্গে পরায় বিশ্বাসী। স্কুলে পড়ার সময় ক্যানভাসের জুতো সাদা রঙ করার জন্য ভাঙা চক কুড়িয়ে আনতেন। স্কুলে যাওয়ার আগে ঘটির মধ্যে কাঠকয়লা রেখে ইস্ত্রি করতেন ইউনিফর্ম! গোলাপি রঙের শাড়ি পরে মঞ্চে মোদীর পাশে বসে ছিলেন মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। গরম ঘটি দিয়ে ইউনিফর্ম ইস্ত্রি করার কথা শুনে তাঁরও মুখাবয়বে বিস্ময়ের ভাব ফুটে ওঠে।
তাঁর যে কোনও ফ্যাশন ডিজাইনার নেই, তা এর আগে লান্স প্রাইস নামে এক ব্রিটিশ লেখককে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের উপদেষ্টা ছিলেন প্রাইস। মোদীকে নিয়ে একটি বইও লিখেছেন তিনি। প্রাইস লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী কিন্তু বিদেশি ডিজাইনার পোশাক বা ‘অ্যাক্সেসারি’ পছন্দ করেন। প্রাইস লিখেছেন, ‘‘টনি ব্লেয়ার যখন প্রথম বুঝতে পারলেন যে তাঁকে এ বার চশমা ব্যবহার করতে হবে, তখন কেলভিন ক্লাইনের একটি চশমা পছন্দ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর উপদেষ্টারা তাঁকে পরামর্শ দেন যে পরিবর্তে যেন তিনি তুলনায় কম দামের এন এইচ এসের চশমা পরেন, যাতে বৈভব প্রকাশ না পায়। কিন্তু মোদীর সে রকম বাছবিচার নেই। তিনি বুলগেরি-র চশমা পরেন, মোভিডো-র ঘড়ি পরেন। পকেটে গুঁজে রাখেন মঁ ব্লঁ পেন। প্রধানমন্ত্রী পদে মোদী দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রাইস মোদীর একটি সাক্ষাৎকারও নিয়েছিলেন। সেখানে মোদী বলেছিলেন, ‘‘হ্যাঁ আমি ভাল ভাল পোশাক পরি এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করি। জামাকাপড়ের রঙ মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে পরার বোধ ভগবান উপহার দিয়েছেন। তাই নিজেই ঠিক করি কী পরব, কী পরব না। ভগবানের আশীর্বাদে সব কিছু আমাকে মানিয়েও যায়।’’ প্রাইসকে মোদী এ-ও বলেছিলেন, ‘‘আমার কোনও ফ্যাশন ডিজাইনার নেই ঠিকই, কিন্তু সবাই যে বলেন আমি মানানসই পোশাক পরি সেটা শুনতে ভালই লাগে।’’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে আজ এত সহজ-সরল জবাব দেওয়ার পরেও বিতর্ক রয়েই গেল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মোদী আরএসএসের প্রচারক পদ থেকে ধাপে ধাপে রাজনীতিতে উঠে এসেছেন। সঙ্ঘের প্রচারক শুনলেই মানুষের ধারণা হয়, তাঁর পোশাক সাধারণ হবে। মোদী সে পথে না হেঁটে কেতাদুরস্ত পরিচ্ছদ পরেন বলেই এত বিতর্ক। অথচ জওহরলাল নেহরুকে নিয়ে কখনও বিতর্ক হয়নি। আজও ফ্যাশন দুনিয়ায় হিট জওহর কোট!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy