সংসদে প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
ধর্মের ভিত্তিতে দেশে কোনও সংরক্ষণ ব্যবস্থা থাকবে না বলে জানিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সংবিধান সংক্রান্ত বিতর্কে আজ লোকসভায় জবাবি বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘‘ধর্মের ভিত্তিতে যেমন সংরক্ষণ ব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে হবে, তেমনই যাঁরা এত দিন সংরক্ষণের সুবিধা পেয়ে এসেছেন, তাঁরা যাতে সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে।’’ পাশাপাশি বিভিন্ন শিবিরের আপত্তি থাকলেও তাঁর সরকার যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার পক্ষে কাজ করছে, তা আজ জানান মোদী। গান্ধী পরিবার গত ৭৫ বছরের কী ভাবে সংবিধানকে আঘাত করেছে, এ দিন তা নিয়েও সরবহন প্রধানমন্ত্রী।
মাস কয়েক আগে লোকসভা ভোটের প্রচারে জাতগণনা করে তার ভিত্তিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর দাবি তুলে সরব হয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। আজও রাহুল সংবিধান-বিতর্কে লোকসভায় জাতগণনার পক্ষে সওয়াল করে বলেন, ‘‘জাতগণনা হবেই। তার ভিত্তিতে বর্তমান সংরক্ষণব্যবস্থার যে কাঠামো রয়েছে, তা ভেঙে নতুন কাঠামো গড়া হবে।’’ বিরোধীরা দাবি তুললেও নীতিগত ভাবে জাতগণনার বিপক্ষে বিজেপি নেতৃত্ব। কারণ জাতগণনা হলে উচ্চবর্ণের সংরক্ষণে হাত পড়বে। যা আদৌ চায় না আরএসএস। যা রুখতে গেরুয়া শিবিরের যুক্তি ছিল, মুসলিমদের সংরক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যেই কংগ্রেস জাতগণনা করতে চাইছে। আজ ধর্মের সঙ্গে সংরক্ষণের সম্পর্ক নিয়ে সরব হয়ে মোদী বলেন, ‘‘স্বাধীনতার আগে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু তা খারিজ হয়ে গিয়েছিল।’’ পরে নিজের বক্তব্যের একেবারে শেষে বিকশিত ভারত গঠনের লক্ষ্যে যে এগারোটি বিষয় তিনি উল্লেখ করেন, তাতে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার উপরে জোর দেন তিনি। পাশাপাশি এ-ও জানান, যাঁরা এত দিন সংরক্ষণের সুবিধা পেয়ে আসছেন, তাঁরা যাতে সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে।
কেন্দ্র যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আনার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে তা-ও আজ লোকসভায় স্পষ্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সংবিধান পরিষদও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিল। বি আর অম্বেডকর নিজে সব ধর্মের জন্য অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর পক্ষে ছিলেন। কিন্তু সংবিধান পরিষদ দেশের দায়িত্ব যে সরকার নেবে, তার হাতে ওই আইন প্রণয়ন করার দায় ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু নেহরু অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চাননি।...সুপ্রিম কোর্টও একাধিক বার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার প্রশ্নে সওয়াল করেছে। তাই সংবিধানকে মাথায় রেখে বর্তমান সরকার দেওয়ানি বিধি চালু করার প্রশ্নে কাজ করছে।’’ যদিও কবে সেই দেওয়ানি বিধি আনা হবে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি মোদী।
সংবিধান সংক্রান্ত বিতর্কে আজ প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা ধরে বক্তব্য রাখেন মোদী। কী ভাবে গান্ধী পরিবার বিভিন্ন সময়ে সংবিধানকে বদলের চেষ্টা করেছে, নিজের বক্তব্যে তার একাধিক উদাহরণ তুলে ধরে মোদী বলেন, ‘‘আমি কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে চাই না। কিন্তু কংগ্রেস দলের একটি পরিবার সংবিধানকে সব রকম ভাবে আঘাত করার চেষ্টা করেছে। আমি একটি পরিবারের কথা বলছি, কারণ ওই পরিবার ৫৫ বছর দেশশাসন করেছে।’’ নিজের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন নেহরুর বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের লেখা চিঠিতে প্রয়োজনে সংবিধানে পরিবর্তন করার দাবি তোলার বিষয়টি নিয়ে সরব হন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘(সংবিধান পরিবর্তনের) যে বীজ নেহরু পুঁতেছিলেন, তাঁর মেয়ে ইন্দিরা গান্ধীও সেই পথে এগোন। তিনি সংবিধানে পরিবর্তন এনে বিচারব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করতে চেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে রাজীব গান্ধীও সংবিধানকে আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছেন। তিনি ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া শাহ বানো মামলার রায় মানতে অস্বীকার করেছিলেন।’’
বক্তব্যের একেবারে শেষে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এগারো দফা পরামর্শ দেন মোদী। যাতে সরকার ও নাগরিককে নিজ দায়িত্ব পালন, সকলের জন্য উন্নয়ন, পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে দেশকে মুক্ত করা, নারীকেন্দ্রিক উন্নয়ন, রাজ্যের উন্নয়নে কেন্দ্রের উন্নয়ননীতি, দুর্নীতি প্রশ্নে আপস না করার মতো বিষয়গুলির উপর জোর দেন মোদী। যা নিয়ে প্রিয়ঙ্কার কটাক্ষ, ‘‘দুর্নীতি রোখার কথা যখন বলা হচ্ছে, তখন আদানি নিয়ে কেন বিতর্ক হচ্ছে না সংসদে?’’ সামগ্রিক ভাবে মোদীর বক্তব্য প্রসঙ্গে সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বলেন, ‘‘দীর্ঘ বক্তব্য। ১১ দফা জুমলা শুনলাম! আসলে তফসিলি জাতি, জনজাতি, ওবিসি সমাজের সংরক্ষণ কেড়ে নিচ্ছে এই সরকার। দ্রুত দিন আসছে, যখন জাতগণনা হবে এবং সব শ্রেণির মানুষ জনসংখ্যার ভিত্তিতে সংরক্ষণের অধিকার পাবেন।’’ মোদীর বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রিয়ঙ্কার মন্তব্য, ‘‘একঘেয়ে। মনে হল স্কুলে দু’টো অঙ্কের ক্লাস একসঙ্গে করলাম!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy