Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

নেতাজি ভবনে গিয়ে ভোটের আগে সূক্ষ্ম রাজনীতির চাল চেলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রথমে শনিবারের কলকাতা সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরে নেতাজি ভবন ছিল না।

নেতাজি ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। -নিজস্ব চিত্র।

নেতাজি ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। -নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:৩৫
Share: Save:

রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে কলকাতা সফরে এসে নেতাজি ভবনের সংক্ষিপ্ত সফরে সূক্ষ্ম রাজনৈতিক চাল চাললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রথমে শনিবারের কলকাতা সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরে নেতাজি ভবন ছিল না। কিন্তু সেটা কোনও ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ ছিল না বলেই সূত্রের খবর। সেটা ছিল একেবারেই সংশ্লিষ্ট দফতরের এক আমলার অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত। পরে কলকাতা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, নেতাজির জন্মদিনে কলকাতা সফরে এসে নেতাজি ভবনে গেলে সেটাই হবে নেতাজিকে প্রধানমন্ত্রীর উপযুক্ত সম্মান জানানোর উচিত উপায়। প্রধানমন্ত্রী তা মেনে নেন। তার পরেই তাঁর সফরসূচিতে প্রায় অন্তিম মুহূর্তে নেতাজি ভবনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, নেতাজি ভবনে ১৫ মিনিটের সফরে মোদী কয়েকটি সূক্ষ্ম ‘রাজনৈতিক চাল’ চেলে দিয়েছেন। প্রথমত, সামনে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। নেতাজি বাংলার ‘হিরো’। ফলে তাঁর বাসভবনে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে মোদী বাঙালি ভাবাবেগ উস্কে দিতে চেয়েছেন। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসের রাজনীতিতে নেতাজি সুভাষ এবং তাঁর ভ্রাতা শরৎচন্দ্র বসু বরাবরই জওহরলাল নেহরুর বিরোধী গোষ্ঠীভুক্ত ছিলেন। বিজেপি-ও সাধারণ ভাবে ‘নেহরু-বিরোধী’। ফলে নেতাজির বাড়িতে গিয়ে মোদী বসু পরিবারের সেই ‘নেহরু-বিরোধী’ মনোভাবকেও পরোক্ষে মান্যতা দিয়েছেন। বস্তুত, প্রধানমন্ত্রীকে নেতাজি ভবন ঘুরিয়ে দেখানোর সময় তিনি নেতাজি পরিবারের সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদ সুগত বসুর সঙ্গে কুশল বিনিময় ছাড়াও সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় মোদী তাঁর রাজ্য গুজরাতের হরিপুরা কংগ্রেসের প্রসঙ্গও তুলে এনেছেন। যেখানে সুভাষচন্দ্র সর্বসম্মত ভাবে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, পরে ভিক্টোরিয়ায় বক্তৃতা দিতে গিয়েও প্রধানমন্ত্রী সুগতর প্রয়াত পিতা শিশিরকুমার বসুর নাম উল্লেখ করেন।

বিজেপি সূত্রের দাবি, এতদ্বারা তিনি একদিকে যেমন নেতাজির নেহরু-বিরোধিতাকে ‘মান্যতা’ দিয়েছেন, তেমনই তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ তথা নেতাজি পরিবারের সদস্য সুগতকেও একটি সূক্ষ্ম রাজনৈতিক বার্তা দিতে চেয়েছেন। বিশেষত, এমন একটি সময়ে, যখন তৃণমূল থেকে পরপর নেতা-মন্ত্রী বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের একবারের সাংসদ সুগত ২০১৯ সালে ভোটে দাঁড়াতে চাননি। তবে তখনই অসমর্থিত সূত্রে শোনা গিয়েছিল, তাঁকে যাদবপুরে প্রার্থী না-ও করতে পারে তৃণমূল। দলের অন্দরে তেমন একটা জল্পনা শুরু হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, তৃণমূলের সেই প্রাক্তন সাংসদ সুগত এবং তাঁর ভাই সুমন্ত্রই প্রধানমন্ত্রীকে নেতাজি ভবনের বাইরে অভ্যর্থনা জানিয়ে তাঁকে ভিতরে নিয়ে যান। পাশাপাশিই, সুগতর আবেদন মেনে বিজেপি-র কোনও নেতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নেতাজি ভবনের ভিতরে ঢোকেননি। তাঁরা বাইরেই দাঁড়িয়েছিলেন। সুগত পরে বলেছেন, ‘‘উনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নেতাজি ভবনে এসেছিলেন। কোনও রাজনৈতিক নেতা হিসাবে আসেননি। যেমন সকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে নয়। তাঁর সঙ্গেও দলের কেউ আসেননি।’’ ঘটনাচক্রে, নেতাজির জন্মদিন পালন করা নিয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটা অলিখিত টেনশন রয়েছে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেমন তাদের মতো করে নেতাজির জন্মজয়ন্তী পালন করে, তেমনই বসু পরিবারও তাদের মতো করে নেতাজির জন্মদিন পালন করে।দু’টিই আলাদা আলাদা কর্মসূচি। বস্তুত, নেতাজি ভবনের সমান্তরালে আলাদা সরকারি নেতাজি জন্মজয়ন্তী পালন নিয়ে বসু পরিবারের একটা অনুযোগের জায়গাও রয়েছে। যদিও কোনওপক্ষই সৌজন্যের খাতিরে তা প্রকাশ্যে স্বীকার করে না। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে ঘনিষ্ঠদের কাছে সেই চোরা টেনশনের বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে। যদিও তা সীমাবদ্ধ থেকেছে ঘনিষ্ঠদের বৃত্তেই।

কিন্তু কেন প্রথম থেকে প্রধানমন্ত্রীর কলকাতার সফরসূচিতে নেতাজি ভবন ছিল না?

সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক আমলা মোদীর কলকাতা সফরের সূচি তৈরি করেছিলেন নেতাজি পরিবারের সদস্য় চন্দ্র বসুর সঙ্গে কথা বলে। তাঁর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই ওই আমলা প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচিতে নেতাজি ভবনকে রাখেননি। ঘটনাচক্রে, অধুনা চন্দ্র রাজ্য বিজেপি-তে কার্যত ব্রাত্য। তাঁকে কেউ যে খুব একটা পছন্দ করেন, তা-ও নয়। ফলে তাঁর কথা শুনে আমলা স্তরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচিতে নেতাজি ভবনকে না রাখাটা রাজ্য বিজেপি-র নেতারাও ভাল ভাবে নেননি। তাঁরা মনে করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ বা ইতিহাস এবং তার অভিঘাত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বাঙালি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের থেকে। তখন থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক মহল থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলা হতে থাকে, তাঁর নেতাজি ভবনে যাওয়াটা জরুরি। বিশেষত, যখন বাংলায় বিধানসভা ভোটের আর বেশি দেরি নেই এবং বিজেপি সেই ভোটে রাজ্য দখলের আশা করছে।

সূত্রের খবর, দিল্লিতে ‘ঠিকঠাক’ প্রেক্ষিত জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি মেনে নেন। তার পরেই তাঁর সফরসূচিতে নেতাজি ভবনকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। রাজ্য বিজেপি নেতারা ওই সফরে স্বভাবতই খুশি। তাঁরা খানিকটা নিশ্চিন্তও বটে। তাঁদের বক্তব্য, নেতাজি ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সফর যতই সংক্ষিপ্ত হোক, যথেষ্ট ‘বার্তাবাহী’। দলের এক শীর্ষনেতার কথায়, ‘‘নেতাজি ভবনের ১৫ মিনিটের সফরে মোদী’জি একই আধারে মৃদু হলেও অনেকগুলো সূক্ষ্ম রাজনৈতিক চাল দিয়ে গিয়েছেন। আমরা খুশি যে, শেষ মুহূর্তে হলেও ওঁর সফরসূচিতে নেতাজি ভবনকে ঢোকানো হয়েছিল। নইলে বাংলার জনমানসে ভুল বার্তা যেতে পারত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy