Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Droupadi Murmu

রাষ্ট্রপতির মুখে রামমন্দির, ‘সেঙ্গল’ দক্ষিণের জন্য

মাত্র ৯ দিন আগে অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হয়েছে। আজ সরকারের সাফল্যের যে তালিকা রাষ্ট্রপতি বক্তৃতায় তুলে ধরেছেন, তাতে দু’বার স্থান পেয়েছে রাম মন্দির।

Droupadi Murmu

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:২৭
Share: Save:

এক দিকে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের মাধ্যমে রামমন্দির নিয়ে আবেগ জাগানো, অন্য দিকে তামিলনাড়ু থেকে আসা ‘সেঙ্গল’ বা রাজদণ্ড নিয়ে সংসদ চত্বর প্রদক্ষিণ। লোকসভা ভোটের আগে। আজ সপ্তদশ লোকসভার শেষ অধিবেশন শুরুর দিনেই উত্তর ও দক্ষিণ ভারতকে জোড়ার চেষ্টা করল নরেন্দ্র মোদী সরকার।

আজ ছিল লোকসভার অন্তর্বর্তী বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিন। প্রথামাফিক রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বক্তব্য দিয়েই যা শুরু হয়। নতুন সংসদভবন উদ্বোধনের সময়ে তাঁকে আমন্ত্রণ না জানানো নিয়ে বির্তকে জড়িয়েছিল মোদী সরকার। আজই প্রথম নতুন সংসদভবনে আসেন দ্রৌপদী। তিনি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ লোকসভা কক্ষে পা দেওয়া মাত্রই বিজেপি সাংসদেরা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে তাঁদের স্বাগত জানান। এমনকি অধিবেশন শুরুর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার শেষেও তাঁদের ‘রাম রাম’
বলেন প্রধানমন্ত্রী।

মাত্র ৯ দিন আগে অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হয়েছে। আজ সরকারের সাফল্যের যে তালিকা রাষ্ট্রপতি বক্তৃতায় তুলে ধরেছেন, তাতে দু’বার স্থান পেয়েছে রাম মন্দির। প্রথমে সরকারের একাধিক সাফল্যের কাহিনির মধ্যে রামমন্দিরের নির্মাণের উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। পরে তিনি বলেন, ‘‘ভারতের ইতিহাসে একাধিক নির্ণায়ক মুহূর্ত এসেছে। এ বছরের ২২ জানুয়ারি এই দেশ এমন একটি মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছে। শতাব্দীর অপেক্ষার পরে রামলালা অযোধ্যার মন্দিরে স্থান পেয়েছেন।’’

আজ যে দু’বার রামমন্দিরের উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রপতি, সেই দু’বারই ‘জয় শ্রীরাম’ বলে টেবিল চাপড়াতে দেখা যায় বিজেপি সাংসদদের। বার্তা স্পষ্ট, মন্দির নির্মাণের ফলে দেশ জুড়ে যে ভাবাবেগ তৈরি হয়েছে, তা হিন্দু ভোটের মেরুকরণে কাজে লাগাতে চাইছে গেরুয়া শিবির। বিশেষ করে উত্তর ও মধ্য ভারতে গো-বলয়ের রাজ্যগুলিতে রামের নামে ঝড় তোলার পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

খাতায়-কলমে রামমন্দির নির্মাণ বেসরকারি উদ্যোগ। কিন্তু হিন্দু ভাবাবেগকে উস্কে দিতে সেই অসম্পূর্ণ মন্দির নির্মাণকেও সরকারের সাফল্য হিসেবে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় তুলে ধরতে পিছপা হয়নি শাসক দল।

তবে নরম হিন্দুত্বের নীতি মেনে পিছিয়ে থাকেনি কংগ্রেসও। আজ রাষ্ট্রপতি প্রথম বার যখন রামমন্দিরের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন, তখন টেবিল চাপড়াতে দেখা যায় কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীকে। পরে তার ব্যাখ্যায় কংগ্রেস নেতা রাজীব শুক্ল বলেন, ‘‘কংগ্রেস তো রামমন্দিরের পক্ষে। সনিয়া গান্ধী-সহ গোটা দল আজ রামমন্দির নির্মাণকে স্বাগত জানিয়েছে। ২২ জানুয়ারি মন্দির উদ্বোধন যে ভাবে একটি রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল, আমরা কেবল তার বিরোধিতা করেছি।’’ বিজেপি তাঁদের রামমন্দির-বিরোধী বলে দাগিয়ে দিতে চাইলেও, কংগ্রেস তা ভুল প্রমাণ করতে মরিয়া এবং সে কারণেই তাদের নরম হিন্দুত্বের নৌকায় সওয়ারি হতে দেখা গিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতিকরা।

উত্তরের ভোটারদের জন্য রামমন্দির হলে, আর ভোটের আগে দক্ষিণ ভারতকে বার্তা দিতে আজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় রাজদণ্ড। ভারতের স্বাধীনতার সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক ওই ‘সেঙ্গল’-এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণ ভারত। নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের সময়ে ওই ‘সেঙ্গল’ লোকসভায় স্পিকারের চেয়ারের একপাশে স্থাপন করা হয়েছিল।

আজ রাষ্ট্রপতির লোকসভা আগমন উপলক্ষে ওই ‘সেঙ্গল’ নীচে নামিয়ে আনেন এক মার্শাল। তিনি জুতো খুলে রেখে, ওই সেঙ্গল হাতে রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানান এবং রাষ্ট্রপতিকে তাঁর নির্দিষ্ট আসনে পৌঁছে দেন। রাষ্ট্রপতি ফিরে যাওয়ার সময়েও হাতে ‘সেঙ্গল’ নিয়ে মার্শাল তাঁকে জুড়িগাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে আসেন। রাষ্ট্রপতি চলে যাওয়ার পরে ফের ওই ‘সেঙ্গল’ স্পিকারের চেয়ারের পাশে রেখে দেন মার্শাল। রাখার পরে ওই ‘সেঙ্গল’কে প্রণাম করতে দেখা যায় স্পিকার ওম বিড়লাকে। সংসদীয় সচিবালয় জানিয়েছে, আগামী দিনে রাষ্ট্রপতি যখনই সংসদে আসবেন, তখনই ‘সেঙ্গল’ নিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো হবে।

আজ ‘সেঙ্গল’কে ওই বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার পিছনে দক্ষিণ ভারতের ভোটারদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনীতিকরা। আসন্ন লোকসভা ভোটে সেখানে বেশি আসন জেতার লক্ষ্যে ধারাবাহিক ভাবে পদক্ষেপ করে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। ‘কাশী তামিল সঙ্গম’ জাতীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি গত কয়েক মাসে দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। এমনকি রামমন্দির উদ্বোধনের আগের দু’দিন দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন মন্দিরে ঘুরতে দেখা যায় মোদীকে। লক্ষ্য উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণের যোগসূত্র বাঁধা। জল্পনা রয়েছে, বারাণসীর পাশাপাশি তামিলনাড়ুর রামনাথপুরম থেকে লোকসভা নির্বাচনে লড়বেন প্রধানমন্ত্রী। যাতে তাঁর উপস্থিতিতে দক্ষিণের ওই রাজ্যে ইনিংস শুরু করতে পারে বিজেপি।

অন্য বিষয়গুলি:

Droupadi Murmu Ayodhya Ram Mandir BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy