মুখোমুখি তিন প্রতিবেশী
দাম্পত্য কলহ, বন্ধুত্বের বিবাদ, কূটকন্টক সংকটের। ঝঞ্ঝাট টানলে ইলাস্টিকের মত বাড়ে, ছেঁড়ে। একবার কাটাকুটি হলে জোড়া লাগান দায়। হায় হায় করা ছাড়া উপায় থাকে না। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ত্রিভুজ সম্পর্ক কখনই মসৃণ না। অস্থির টানাপোড়েন। সমস্যা পাকিস্তানকে নিয়ে। ১৯৪৭-এর ১৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনটি দেশই একটি দেশ ছিল। প্রথমে আলাদা হল পাকিস্তান দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে। সেটা মিথ্যে প্রমাণ করে একাত্তরের ২৬ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশের আবির্ভাব। সেটা মানতে পারল না পাকিস্তান। দেশ ভাঙায় ভারতকে দুষল। চলল বিরোধ বিতর্ক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় নিজেদের প্রতিনিধি বসাল। সামরিক শাসন আর সন্ত্রাসে বেঁধে ফেলল দেশটাকে। কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিরোধ বাড়াল। ভারত জুড়ে নাশকতার ছক কষল।
দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ দেখল, পাকিস্তানকে ঠান্ডা করতে না পারলে শান্তি অসম্ভব। সার্ক গঠন করে জোট বাঁধল। অষ্টম সদস্য হিসেবে যোগ দিল আফগানিস্তান। পাকিস্তান সন্ত্রাস বন্ধ করল না। জঙ্গি জমানায় বিধ্বস্ত তারা নিজেরাই। প্রতি দিন কোথাও না কোথাও রক্তপাত। অসহায় প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তিনি বারণ করলে শুনছে কে। গণতন্ত্রের শিকড় আলগা। রাজনীতি, অতিরিক্ত জল মেশানো ডালের মতো পাতলা। আইএসআই, সেনাবাহিনী, জঙ্গিবাদের আধিপত্য। সন্ত্রাসের প্রতিবাদে গত বছর নভেম্বরে ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলন বাতিল। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভারতের যৌথ কূটনৈতিক আক্রমণ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা নিয়ে সংশয়।
আরও পড়ুন- তিস্তা নিয়ে ‘কথা’ রাখবেন মোদী, আশাবাদী বাংলাদেশ
সংকটে সংযমী হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান আশরাফ ঘানি। আফগান চিফ এক্সিকিউটিভ আবদুল্লা আবদুল্লা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেখলেন, দেশ ব্যক্তির মতো নয়। ঝগড়াঝাঁটি করে অন্য কোথাও চলে যেতে পারে না। যেখানে আছে সেখানেই থাকে। পাকিস্তান বাংলাদেশের থেকে দেড় হাজার কিলোমিটার হলেও, ভারত-আফগানিস্তানের গায়ে লেগে আছে। বৈধ সম্পর্ক আটকালেও অবৈধ সংযোগ বন্ধ করা যাবে না। তাতে হিতে বিপরীত। তার চেয়ে সম্পর্ক চলুক। নদীর মতো বাঁকে বাঁকে রং বদলাক। হাসিনা স্যুইৎজারল্যান্ডে ঘোষণা করলেন- সার্ক আছে, থাকবে। দিল্লির সংসদে ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানালেন, পাকিস্তানের সঙ্গে কথাবার্তা থেমে নেই। আফগানিস্তান বলল, সার্ককে সক্রিয় রাখতেই হবে।
আরও পড়ুন- মংলা-চট্টগ্রাম-কলকাতা জুড়েছে যাত্রীবাহী জাহাজ
বাংলা নববর্ষের গোড়াতেই বৈশাখে, ইংরেজির এপ্রিলে, হাসিনা-মোদী বৈঠকের উদ্যোগ চলছে দিল্লিতে। কথা হবে পাকিস্তান নিয়েও। দ্বিপাক্ষিক প্রসঙ্গ তো থাকছেই। তিস্তা চুক্তি, বাংলাদেশে পদ্মা ব্যারেজ নির্মাণ নিয়েও আলোচনা। রফতানি বাণিজ্যে ঘাটতি পূরণ। বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ভারতের সদর্থক ভূমিকা আশা করে বাংলাদেশ। হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পর মোদী মুখোমুখি হতে পারেন নওয়াজ শরিফের, কাজাখাস্তানের আস্তানা শহরে। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলনে যোগ দিতে জুনে, বা আষাঢ়ে, মোদী-শরিফ ওখানেই থাকবেন। সংগঠনের স্থায়ী সদস্য হবে ভারত-পাকিস্তান। পাকিস্তানকে বাগে আনতে সিন্ধুর জল বন্টনের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকতে পারে ভারত। জঙ্গি নেতা হাফিজ সইদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ব্যবস্থা নেওয়ায় ভারতের সন্তোষ। এ বার জঙ্গি সংগঠন জামাত-উদ-দাওয়াকে নিষিদ্ধ করার দাবি। পাকিস্তান চাইছে জল। ভারত আদায় করতে চায় সন্ত্রাসী হামলায় রক্ত বন্ধের গ্যারান্টি। কথা না বললে এ সব হবে কী করে। একবার নয় বারবার মুখোমুখি হতে হবে দুটি দেশকে। সার্কের সব দেশই চায়, আষাঢ়ে মোদী-শরিফ বৈঠকে বৃষ্টি নামুক। জমা সব বরফও গলে জল হয়ে যাক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy