নরেন্দ্র মোদী সরকারের তৃতীয় রেল বাজেট পেশ করতে গিয়ে সম্ভবত জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় বসতে চলেছেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু।
রেল মন্ত্রকের ক্ষয়িষ্ণু চাকায় মসৃণতা ফেরাতে প্রভুর হাতেই দায়িত্ব হাতে তুলে দিয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু প্রায় দেড় বছর অতিক্রান্ত। প্রভুর দাওয়াইতে মুমূর্ষু রেলের শরীরে প্রাণসঞ্চার হলেও, কাঙ্খিত গতি আসেনি বলেই মনে করছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। একাধিক বার সেই বার্তাও দেওয়া হয়েছে রেল মন্ত্রককেও। আসলে প্রায় এক দশকের নীতিপঙ্গুত্বার গ্রাস এড়িয়ে প্রায় কোমায় চলে যাওয়া রেলে গতি আনতে যে মহৌষধি অর্থাৎ বিপুল অর্থের প্রয়োজন, সেই জোগান নেই প্রভুর ট্যাঁকে।
অর্থনীতিতে মন্দা
যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক পণ্য পরিবহণে, বেসরকারি বিনিয়োগের চিত্র হতাশাজনক। কোষাগারের হাল সঙ্গিন। অথচ, দেশ স্বপ্ন দেখছে বুলেট ও হাই স্পিড ট্রেনের। এই অবস্থায় সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সামঞ্জস্য আনাটাই বড় চ্যালেঞ্জ প্রভুর সামনে।
নতুন ট্রেন
গত বাজেটে বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও নতুন ট্রেন ঘোষণা করেননি রেলমন্ত্রী। পরে যখন দরকার হয়েছে তখন সেই এলাকার জন্য ট্রেন চালিয়েছেন তিনি। চলতি বাজেটেও তাই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে উত্তর-পূর্ব ভারত কিছু নতুন ট্রেন পেতে পারে।
যাত্রী ভাড়া
আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা তেলের দাম কমে যাওয়ায় রেলের ভাড়া কমানোর জন্য দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু অন্যান্য খরচ বেড়ে গিয়েছে, এই যুক্তি দেখিয়ে ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়নি মন্ত্রক। রেলের বক্তব্য, যাত্রী ভাড়ায় এখনও ভর্তুকি দিতে হয় রেলকে। যার পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই ভর্তুকির অর্থ পণ্য পরিবহণ থেকে সংগ্রহ করে রেল। এ যাবৎ যাত্রী ভাড়া না বাড়িয়ে কেবল পণ্য ভাড়া বাড়ানোয়, ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহণ করতে রেলের পরিবর্তে সড়ক পথকে বেছে নিচ্ছেন। তাই রেলের একাংশ পণ্য পরিবহণের ভাড়া কমিয়ে যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর পক্ষে। বিশেষ করে অ্যাসোচেমের মতো বণিক সংগঠনগুলি।
যদিও অন্য অংশের মতে, গত দেড় বছরে যাত্রী ভাড়া অনেকাংশেই বেড়েছে। বিশেষ করে বাতানুকূল শ্রেনিতে। এর পর ওই শ্রেনিতে ভাড়া বাড়লে যাত্রীদের বড় অংশ সামান্য বেশি কিছু অর্থ দিয়ে সস্তার বিমান পরিষেবার সুবিধে নেবেন। তাই এ ক্ষেত্রে যাত্রী ভাড়া বাড়ানো হলে স্লিপার শ্রেনিতে তা বৃদ্ধির পক্ষে সওয়াল করেছেন অনেকেই। কিন্তু সামনেই পাঁচ রাজ্যে ভোট। ফলে আম আদমির স্বার্থের কথা না ভেবে সংস্কারের রাস্তায় হাঁটার সাহস প্রভু দেখাতে পারেন কি না তাই এখন দেখার।
পরিকাঠামো
আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া সম্ভব না হলেও, চলতি বছরে পরিকল্পনা খাতে খরচ প্রায় ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা ধার্য করতে চাইছে রেল। যে টাকার একটি বড় অংশ খরচ হবে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে। মোদী সরকার পাঁচ বছরে সাড়ে আট লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মূলত রেলের কারখানা, নতুন লাইন, গেজ পরিবর্তন, ডাবলিং-র মতো কাজ এ ছাড়া হাইস্পিড ও বুলেট ট্রেনের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে ব্যবহার হবে ওই অর্থ। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ওই অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছে রেল।
কেন্দ্রীয় অনুদান
যাত্রী হোক বা পণ্য পরিবহণ— লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া যায়নি কোনও ক্ষেত্রেই। তার মধ্যে বাজেটে ৪০ হাজার কোটি টাকার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি এলেও, সময়ে কাজ না হওয়ায় আট হাজার কোটি টাকার কেন্দ্রীয় অনুদান কেটে নেয় অর্থ মন্ত্রক। ফলে এ বাজেটে পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হলেও, শেষ পর্যন্ত কত টাকা পাওয়া যাবে তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে।
রাজ্যের সাহায্য
হাতে টাকা না থাকায়, রেলের প্রকল্প দ্রুত রূপায়ণে রাজ্যগুলিকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেছিলেন সুরেশ প্রভু। সাড়া দেয় একাধিক রাজ্য। এই পরিকল্পনায় আগামী দিনে উৎসাহী রাজ্যগুলির জন্য বিশেষ ছাড় বা নতুন প্রকল্প ইনসেনটিভ হিসাবে দিতে পারেন তিনি।
সুরক্ষা
গোটা ভারতের রেলের জন্য একটি সুসংহত, সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন দীর্ঘদিনের। এ বিষয়ে জাপান সরকারের সঙ্গে একপ্রস্থ কথাবার্তা হয়েছে রেল। আগামিকাল এ বিষয়ে ঘোষণা হতে পারে। প্রয়োজনে এর জন্য টাকা তুলতে নিরাপত্তা খাতে সেস বসানোর চিন্তাভাবনা।
পরিষেবা
বড় প্রকল্প রূপায়ণে অর্থের অভাব। তাই কম খরচে রেলের পরিষেবা সংক্রান্ত ক্ষেত্রটিকে আরও আধুনিক ও যাত্রী-বান্ধব করে তুলতে চান প্রভু। যাত্রীদের সঙ্গে জনসংযোগ বা সরাসরি অভিযোগ জানাতে টুইটার ও ফেসবুকের ব্যবহার। বড় স্টেশন ও চলন্ত ট্রেনে ওয়াই ফাই পরিষেবা। স্টেশনে জলের এটিএম। আধুনিক মানের রিটিয়ারিং রুম এবং তা ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তা ভাড়া নেওয়ার সুবিধে।
স্বচ্ছ্বতা
বিশেষ করে ট্রেনে জৈব শৌচাগার। এ ছাড়া আধুনিক কামরাযুক্ত সেমি-হাইস্পিড ট্রেন চালানো। রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, এ বারও প্রভু সবথেকে বেশি জোর দিচ্ছেন পরিষেবা ক্ষেত্রে উন্নতির দিকেই।
বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার ছায়া ভারতে। যার প্রভাব পড়েছে রেলের পণ্য পরিবহণে। বিদেশি বিনিয়োগের ঘরও ফাঁকা। হু হু করে বেড়ে গিয়েছে অপারেটিং রেশিও।
কোষাগার খালি, তা-ও চলতি আর্থিক বছরে এসে জুড়বে সপ্তম বেতন কমিশনের বাড়তি ধাক্কা। এ রকম একটি নেতিবাচক পরিস্থিতিতে এক দিকে পুরনো প্রকল্প শেষ করার তাগিদ ও অন্য দিকে মোদী সরকারের কাছে মানুষের গগনচুম্বি প্রত্যাশা— এই অঙ্ক সুরেশ প্রভু কী ভাবে মেলাবেন তাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy