Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
National News

আঁধার ঘনালেই হোমের সামনে দাঁড়াত সাদা-কালো গাড়ি, তার পর…

পুলিশ সুপার রোহন পি কনয় জানিয়েছেন, হোম থেকে দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রেও বহু গরমিল পাওয়া গিয়েছে। কারা দত্তক নিতেন, দত্তক নেওয়া মেয়েদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হত, এর সঙ্গে নারীপাচারের যোগ আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

‘মা বিন্দাবাসিনী মহিলা এবং বালিকা সংরক্ষণ গৃহ’ নামের দেওরিয়ার সেই হোম।— ফাইল চিত্র।

‘মা বিন্দাবাসিনী মহিলা এবং বালিকা সংরক্ষণ গৃহ’ নামের দেওরিয়ার সেই হোম।— ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
দেওরিয়া শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ১৭:৫৬
Share: Save:

সন্ধ্যা নামলেই সাদা-কালো রঙের গাড়িতে বিভিন্ন লোকের আনাগোনা শুরু হতো হোমে। তারা ‘ম্যাডাম’ বলে ডাকত হোমের মালকিন গিরিজা ত্রিপাঠীকে। তাঁর সঙ্গে কথাবার্তার পরই মেয়েদের গাড়ি করে নিয়ে চলে যেত ওই লোকগুলো। গভীর রাতে আবার ফিরিয়ে দিয়ে যেত। গত তিন বছর ধরে এটাই ছিল উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়ার হোমের নিত্য দিনের রুটিন।

হোম থেকে পালিয়ে এসে পুলিশকে এ কথাই জানিয়েছিল বছর দশের মেয়েটি। শুধু তাই নয়, অভিযোগ, আবাসিকদের জোর করে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হত। কেউ মুখ খুললে তার উপর চলত নির্মম অত্যাচার। রবিবার তল্লাশি অভিযান চালিয়ে দেওরিয়ার ওই হোম থেকেই ২৪ জন নাবালিকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে হোমের ১৮ আবাসিক নিখোঁজ বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ জানিয়েছে, দেওরিয়ার ওই হোমে মোট ৪২ জন আবাসিক ছিল। মূলত ১৫-১৮ বছরের মেয়েরাই থাকত সেখানে। সরকারি সহযোগিতায় হোমটি চালাতেন গিরিজা ত্রিপাঠী এবং মোহন ত্রিপাঠী। ২০১৭-তে দেশ জুড়ে বিভিন্ন হোমে যখন তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছিল সিবিআই, সে সময় দেওরিয়ার এই হোমেরবেশ কিছু অনিয়ম সামনে আসে। তার পরই সরকারি স্বীকৃতি বাতিল করে দেওয়া হয় হোমটির। কিন্তু তার পরেও ত্রিপাঠি দম্পতি হোমটি চালিয়ে যাচ্ছিলেন।গত সপ্তাহেই রাজ্য পুলিশের একটি দল হোমে তল্লাশি অভিযানে গিয়েছিল। অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন ওই দম্পতি। তাঁদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়েরও করে পুলিশ।

আরও পড়ুন: ধর্ষণের আগে ৬৭ রকমের মাদক খাওয়াতেন ‘হান্টারওয়ালে আঙ্কল’

দেওরিয়ার ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে উত্তরপ্রদেশের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।

বিহারের মুজফফরপুরের হোমের ঘটনা নিয়ে দেশ জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। সেই বিতর্কের মধ্যেই রবিবার দেওরিয়ার হোমের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। মুজফফরপুরের ঘটনায় বিহার সরকারের বিরুদ্ধে আঙুল উঠেছে। হোমের নাবালিকদের ধর্ষণের ঘটনায় সরকারি আধিকারিকদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়েছে নীতীশ সরকারকে। দেওরিয়ার হোমের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই কালবিলম্ব না করে খোদ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ময়দানে নেমে পড়েছেন। তড়িঘড়ি নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী রীতা বহুগুণা জোশীকে ডেকে পাঠান তিনি। সরিয়ে দেওয়া হয় জেলাশাসক এবংএক শীর্ষ আধিকারিককে। গ্রেফতার করা হয় ত্রিপাঠী দম্পতি ও তাঁদের মেয়েকে। সিল করে দেওয়া হয় হোমটি।

পুলিশ সুপার রোহন পি কনয় জানিয়েছেন, হোম থেকে দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রেও বহু গরমিল পাওয়া গিয়েছে। কারা দত্তক নিতেন, দত্তক নেওয়া মেয়েদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হত, এর সঙ্গে নারীপাচারের যোগ আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী রীতা বহুগুণা জোশী বলেন, “হোমটি সম্পূর্ণ বেআইনি। সিবিআইয়ের তদন্তের পর আইনি নোটিস পাঠানো হয় হোমে। এর স্বীকৃতিও বাতিল করে দেওয়া হয়। হাইকোর্টে মামলাটি ঝুলছে।” পাশাপাশি তিনি আরও জানান, সপ্তাহ দুয়েক আগে হোমের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর করা হয়েছিল। হোমের আবাসিকদের সরকারি হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনকে। ত্রিপাঠী দম্পতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবেও বলে জানিয়েছেন রীতা।

আরও পড়ুন: সুকমার জঙ্গলে ধুন্ধুমার, নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে হত ১৪ মাওবাদী, ছত্তীসগঢ়ে সতর্কতা

প্রশ্ন উঠছে, সরকারি স্বীকৃতি বাতিল হয়ে গেলেও প্রশাসনের নাকের ডগায় হোমটি এত দিন ধরে কী ভাবে চালাচ্ছিলেন ত্রিপাঠী দম্পতি। এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিরোধী দলগুলি ময়দানে নেমে পড়েছে। তারা সিবিআই তদন্তের দাবি করেছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE