ললিত ঝা। —ফাইল চিত্র।
লিখিত বার্তা আদানপ্রদান বা কথা বলার ক্ষেত্রে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও অন্যান্য ইন্টারনেট মেসেঞ্জারের চেয়ে সিগন্যাল অ্যাপকে বেশি সুরক্ষিত বলে মনে করেন অনেকেই। সংসদ হাঙ্গামায় মূল অভিযুক্ত ললিত ঝা ঘটনার দিন সেই সিগন্যাল অ্যাপ ব্যবহার করেই বাকি অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। কলকাতা পুলিশের এসটিএফ সূত্রের খবর, ঘটনার আগেও ললিত ওই অ্যাপ ব্যবহার করে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কী কথা হয়েছিল সিগন্যালে, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এ রাজ্যে থাকা ললিত-ঘনিষ্ঠ প্রায় সকলের সঙ্গেই এসটিএফ কথা বলেছে। ললিতের বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইল দেখে আর কেউ ঘনিষ্ঠ আছেন কি না, খোঁজ করা হচ্ছে।
তবে রবিবার ‘সাম্যবাদী সুভাষ সভা’র প্রাক্তন সংস্কৃতিসচিব অর্ণব শর্মা সরকারের দাবি, ললিতকে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন না। অর্ণবের দাবি, সংসদ-কাণ্ডের পরে ওই সংগঠনের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন তিনি। সংগঠনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকেও বেরিয়ে গিয়েছেন। যদিও এখনও অর্ণব, ললিত-সহ কয়েক জনের নাম ও ছবি-সহ পোস্টার ঘুরছে সমাজমাধ্যমে। অর্ণব বলেন, ‘‘ললিত সাম্যবাদী সুভাষ সভার সদস্য ছিলেন। আমরা কেউ কাউকে চিনি না। ললিতের সঙ্গে কোনও দিন যোগাযোগও হয়নি। দেখাও হয়নি। শুধু জানতাম, ললিত আমাদের সংগঠনের সদস্য। তাঁর নামটা সংগঠনের পোস্টারে থাকে।’’ কিন্তু সংগঠনের সদস্য হিসেবে ললিতের নাম-নম্বর তো সংগঠনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও থাকার কথা। অর্ণবের জবাব, ‘‘আমি জানি না। গ্রুপে নম্বর থাকলেও খেয়াল করিনি। ওই গ্রুপে তো অনেক সদস্য।’’
মালদহের ইংলিশ বাজারের বাসিন্দা অর্ণব প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রথম বর্ষের ছাত্র। থাকেন কলকাতায় (কোথায়, তা জানাতে চাননি)। অর্ণব জানান, তিনি সুভাষচন্দ্র বসুর ভক্ত। সুভাষকে নিয়ে করা একটি অনুষ্ঠানের ভিডিয়ো তিনি ইনস্টাগ্রামে দিয়েছিলেন। সেটা দেখে ২০২২ সালে নীলাক্ষ আইচ তাঁকে ফোন করে এই সংগঠনের সদস্য হতে বলেন। অর্ণব বলেন, ‘‘তখনই এই সংগঠনের সদস্য হই। কয়েক মাস আগে নীলাক্ষের কথায় সংগঠনের সংস্কৃতিসচিব হই। যদি জানতাম ললিতের মতো লোক এই সংগঠনের সদস্য, তা হলে কখনওই যুক্ত হতাম না।’’
চাপে রয়েছেন নীলাক্ষ আইচ এবং তাঁর পরিবারও। তাঁদের কাছে খবর, যে কোনও সময়ে দিল্লি পুলিশ আসতে পারে উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহরে তাঁদের বাড়ি। পুলিশ এসে যে যে নথি দেখতে চাইতে পারে, তা হাতের কাছে সাজিয়ে রেখেছেন নীলাক্ষের বাবা নিলয় আইচ। ঘটনার দিন নীলাক্ষের মোবাইলে ললিত সংসদের বাইরের একটি ভিডিয়ো পাঠিয়ে তা ছড়িয়ে দিতে বলেছিলেন। পরের দিন সকালেই নীলাক্ষের সঙ্গে ফোনে কথা বলে দিল্লি পুলিশ।
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই দিল্লি পুলিশের দল কলকাতায় এসেছে। বিহারে ললিতের বাবা-মায়ের কাছে যাওয়ার কথা তাদের। হালিশহরের নেহাতই ছাপোষা পাড়াটিতেও উৎসুক জনতার প্রশ্ন, এখানে কি দিল্লি পুলিশ আসছে? রবিবার পর্যন্ত দিল্লির তদন্তকারীদের পা পড়েনি সেখানে। পরিবারের তরফে মুখে কুলুপ। বৃহস্পতিবার সকালের পরে নীলাক্ষের সঙ্গে আর দেখা করা বা কথা বলার অনুমতি মেলেনি সংবাদমাধ্যমের। নিলয় বলেন, ‘‘বলেই তো ছিলাম, ললিত ধরা পড়লেই আমার ছেলের উপর থেকে নজর সরে যাবে।’’
রাজস্থানে উদ্ধার হওয়া পোড়া মোবাইলগুলি দেখে আজ দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইলগুলি ভারী কিছু দিয়ে মেরে নষ্ট করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের দাবি, মোবাইলগুলি থেকে তথ্য উদ্ধার হলে ঘটনার মূল মাথা কারা, কার নির্দেশে হামলা হয়েছিল, অর্থের জোগান, সব জানা যাবে। সূত্রের মতে, ধৃতদের মানসিক দৃঢ়তা সাধারণ অপরাধীদের থেকে অনেক বেশি। তাদের সঙ্গে অতি বাম কোনও সংগঠনের সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy