রাষ্ট্রীয় একতা দিবসের অনুষ্ঠানে মোদী। সোমবার। পিটিআই।
আজ সকাল থেকে মচ্ছু নদীতে যখন একের পর এক মৃতদেহ ভেসে উঠেছে, তখন রাজ্যের কেবাড়িয়া থেকে বনসকণ্ঠা, সেখান থেকে আমদাবাদ— একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা ও উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গুজরাতের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে দৌড়ে বেড়ালেও, তাঁর পা পড়েনি মোরবী জেলায়। যা নিয়ে দিনভর সরব ছিলেন বিরোধীরা। রাতে জানানো হয় আগামিকাল, প্রধানমন্ত্রী মোরবী হাসপাতালে যাবেন আহতদের দেখতে। ফলে ওই হাসপাতালের ভোলবদল করতে এখন সেখানে সাজো সাজো রব! যদিও মোদীর দাবি, কর্তব্যের তাগিদেই তাঁকে প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করতে হয়েছে। এমন যন্ত্রণা তিনি জীবনে কমই পেয়েছেন।
বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘ফোটোজীবী’ মোদীর জন্যই হাসপাতাল সাজানো হচ্ছে। আহতদের চিকিৎসায় মাথাব্যথা নেই সরকারের। তাঁদের মতে, সেতু-বিপর্যয় নিয়ে মোদীর যে বিশেষ হেলদোল নেই তা তো বোঝা যাচ্ছে তাঁর কর্মসূচি দেখেই। তা না হলে রাতে আমদাবাদে রেল প্রকল্পের উদ্বোধনের পরে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে মোরবীর ঘটনার বিপর্যয় ও উদ্ধারকার্য নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী! সব প্রচার সেরে অবশেষে রাতে প্রধানমন্ত্রীর সময় হয় মোরবী নিয়ে আলোচনায় বসার। প্রধানমন্ত্রী যাবেন জানার পরেই হাসপাতালে রং করা শুরু হয়েছে। সরানো হচ্ছে আবর্জনা, ভাঙা জিনিসপত্রের স্তূপ। জোরকদমে চলছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা।
গত কাল সন্ধ্যার ওই দুর্ঘটনা কতটা ব্যাপক তা আজ দিনের আলো ফোটার পরেই বোঝা যায়। বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যা। তাতে অবশ্য পাল্টায়নি প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানসূচি। পূর্বনির্ধারিত ভাবে সকালে তিনি পৌঁছন কেবাড়িয়াতে। জন্মদিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানান সর্দার বল্লভভাই পটেলের মূর্তিতে। বিরোধীদের অভিযোগ, গোটা দিন জুড়ে মচ্ছু নদী থেকে একের পর এক মৃতদেহ উদ্ধার হলেও, প্রধানমন্ত্রী তাতে ভ্রুক্ষেপ করেননি। সকালে কেবাড়িয়ার পরে বিকালে পোশাক পাল্টে বনসকণ্ঠায় ভোট চাইতে পৌঁছে যান। ঘোষণা করেন একাধিক প্রকল্পের। করেন শিলান্যাসও। রাতে আমদাবাদে ২৯০০ কোটি টাকার কয়েকটি রেল প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। শোকের আবহে এ ভাবে পরোক্ষে ভোটপ্রচার চালানোয় আজ প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি কাঠগড়ায় তুলেছেন কংগ্রেস নেতা পবন খেড়া। তাঁর কথায়, ‘‘যে গুজরাত তাঁকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে, যে রাজ্য তাঁর কর্মভূমি, সেই গুজরাতে মচ্ছু নদীর বিপর্যয়ের পরেও মোদী দুর্ঘটনাস্থলে তো গেলেনই না, উল্টে জনসভার মাঝে সুযোগ পেতেই পোশাক বদল করে মাথায় টুপি পরে ভোট ভিক্ষায় ব্যস্ত থাকলেন।’’
বিজেপি শিবিরের পাল্টা যুক্তি, দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজ চলছে। তাই আজ প্রধানমন্ত্রী ঘটনাস্থলে গেলে তাঁর নিরাপত্তার জন্য সেই কাজ ব্যহত হত। তাই এক দিন পরে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বিরোধীদের পাল্টা, মোদী বনসকণ্ঠা যেতে পারেন, আর ২৭৫ কিলোমিটার দূরে মোরবী যেতে পারেন না! আসলে দুর্ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেয়ে ভোট প্রচারের লক্ষ্যে প্রকল্পের শিলান্যাস করা অনেক বেশি জরুরি ছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কারণ তিনি জানেন, শীঘ্রই নির্বাচন ঘোষণা হতে চলেছে রাজ্যে। তাই তিনি প্রকল্প ঘোষণার আর সময় পাবেন না। সেই কারণে উপেক্ষিত হয়েছে মোরবী। প্রধানমন্ত্রীর মোরবী না যাওয়া দুর্ঘটনায় মৃতদের প্রতি চরম অসংবেদনশীল মনোভাবের পরিচয় বলেই মনে করছেন বিরোধীরা।
তবে আজ সকালে কেবাড়িয়া ও বনসকণ্ঠায় দু’টি অনুষ্ঠানেই মৃত ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। কেবাড়িয়ার মতো বনসকণ্ঠায় মোরবীর দুর্ঘটনার উল্লেখ করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। ছলছল চোখে মোদী বলেন, ‘‘খুবই যন্ত্রণাদায়ক ঘটনা।’’ তিনি তাঁর সারা জীবনে এমন দুঃখ কম পেয়েছেন বলেও তাঁর মন্তব্য। অনভিপ্রেত দুর্ঘটনা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সব কিছু সামলেছেন বলে দাবি করে গুজরাত প্রশাসনের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। যে ভাবে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে তাতে তিনি বনসকণ্ঠায় সরকারি প্রকল্পে আসবেন কি না তা নিয়ে দোলাচলে ছিলেন বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘বহু মানুষ তাঁদের স্বজন হারিয়েছেন। তাই দ্বিধায় ছিলাম এই সভায় আসব কিনা!’’ কিন্তু জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার কারণেই বনসকণ্ঠায় আসতে বাধ্য হয়েছেন বলে তাঁর দাবি। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘সরকার মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। তাই ওই উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধনে এসেছি।’’ যদিও পবন খেড়ার কটাক্ষ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী প্রচারের আলো থেকে সরে আসতে পারেননি। তাই ছ’টা ক্যামেরা নিয়ে সারাদিন দৌড়ে বেরিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy