প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
লক্ষ্য স্থির করলেও নরেন্দ্র মোদী লোকসভায় চারশো পার করতে পারেননি। ব্রিটেনের পার্লামেন্টে চারশো পার করে ক্ষমতায় আসা লেবার পার্টির সরকারকে নিয়ে মোদী সরকার আশাবাদী, এ বার ভারতের সঙ্গে ব্রিটেনের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বল ফের গড়াতে শুরু করবে। ব্রিটেনে কাজের প্রয়োজনে বা উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া ভারতীয়দের উপরে
বিধিনিষেধ কমবে।
ঋষি সুনক প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভুত হিসেবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে নয়াদিল্লি খুবই আশাবাদী ছিল। উল্টো দিকে লেবার পার্টিকে নিয়ে বরাবরই আশঙ্কা ছিল। কারণ, লেবার পার্টি জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকে নিজের ভাগ্য স্থির করার অধিকার দেওয়ার পক্ষে রাজনৈতিক প্রস্তাব পাশ করিয়েছে। লেবার পার্টির সাংসদেরা প্রায়ই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে কাশ্মীরের মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলেন। শিখ বংশোদ্ভূত লেবার পার্টির এমপিরা কৃষকদের আন্দোলন নিয়েও সরব হন।
শুক্রবার সকাল থেকেই স্পষ্ট হতে থাকে, কনজ়ারভেটিভ পার্টিকে হারিয়ে কিয়ের স্টার্মারের নেতৃত্বে লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসতে চলেছে। সেই সঙ্গে নয়াদিল্লির আকাশেও দুশ্চিন্তার মেঘ জমতে শুরু করে। কারণ, নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের নিজেদের ভাগ্য স্থির করার অধিকার এবং সেখানকার মানবাধিকার সঙ্কট নিয়ে সরব হলে তা মোদীর জন্য স্বস্তিদায়ক হবে না।
দিনের শেষে অবশ্য সাউথ ব্লক নিরাশাবাদী নয়। বিদেশ মন্ত্রকের কূটনীতিকেরা বলছেন, ২০১৯ সালে জেরেমি করবিন লেবার পার্টির নেতা থাকাকালীন কাশ্মীরে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর দাবি তুলে জরুরি প্রস্তাব পাশ করিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু সেখান থেকে স্টার্মার অনেকটাই সরে এসেছেন। নির্বাচনী জনসভায় স্টার্মার বলেছিলেন, ভারতের যে কোনও সাংবিধানিক বিষয় ভারতীয় সংসদের এক্তিয়ারের মধ্যেই পড়ে।
আজ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেই স্টার্মারকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মোদী বার্তা দেন, ‘‘ভারত-ব্রিটেন সামগ্রিক কৌশলগত অংশীদারি আরও মজবুত করার লক্ষ্যে ইতিবাচক ও গঠনমূলক সহযোগিতার অপেক্ষায় রইলাম।’’ বিদায়ী ঋষি সুনককেও ধন্যবাদ জানান। যদিও বিদেশ মন্ত্রকের কূটনীতিকেরা বলছেন, সুনক তাঁর জমানায় ব্রিটেনে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী রোখার সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে ব্রিটেনে পরিষেবা ক্ষেত্রে কাজ করতে যাওয়া পেশাদার, পড়ুয়াদের জন্যও কঠিন নীতি নিয়েছিলেন। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রূপায়ণের ক্ষেত্রেও তা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অথচ ২০২২-এ দীপাবলির সময় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই হয়ে যেতে পারে, এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
একটা সময় পর্যন্ত ব্রিটেনে বসবাসকারী ভারতীয়দের বড় অংশ লেবার পার্টিরই সমর্থক ছিলেন। ডেভিড ক্যামেরন তাঁদের কনজ়ারভেটিভ পার্টিতে টানতে শুরু করেন। ব্রিটেনের গুজরাতিরা কনজ়ারভেটিভ পার্টির দিকে ঝোঁকেন। সুনককে প্রায়ই মন্দিরে দেখা যেত। সেই তুলনায় করবিন মোদী সরকারের প্রতি ইতিবাচক ছিলেন না। স্টার্মারও কোনও দিন ভারতে আসেননি।
সাউথ ব্লক অবশ্য আশাবাদী, স্টার্মারের অবস্থান বদলেছে। তাঁর ইস্তাহারে ভারতের সঙ্গে ‘নতুন কৌশলগত সম্পর্ক’-র কথা বলা হয়েছে। বাণিজ্য চুক্তির উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। ভোটের প্রচারে তাঁকে লন্ডনের স্বামীনারায়ণ মন্দিরে দেখা গিয়েছে। ভারতীয়দের তিনি হাত জোড় করে ‘নমস্তে’ জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসতে পারে ইঙ্গিত পেয়ে লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনও লেবার পার্টির নেতানেত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছিল। নতুন জমানায় যিনি বিদেশমন্ত্রী হবেন, সেই ডেভিড ল্যামি গত বছর ভারতে এসে বার্তা দিয়েছেন, তিনি ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করে ফেলতে আগ্রহী।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, মোদী সরকারের তরফে ব্রিটেনে খলিস্তান-সমর্থকদের প্রতি কড়া অবস্থান নেওয়া জন্য লেবার পার্টির সরকারের কাছে দাবি তোলা হবে। কারণ, সম্প্রতি ভারতের দূতাবাসকে খলিস্তানিরা নিশানা করেছে। কূটনীতিকরা বলছেন, লেবার পার্টি ক্ষমতায় এসে অর্থনীতি সামলাতেই ব্যস্ত থাকবে। তার মধ্যেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে যে দুই দেশেরই লাভ, তা ভারতের দিক থেকে বোঝানোর চেষ্টা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy