Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

গান্ধীর ‘কুইট ইন্ডিয়া’ স্লোগান মোদীর মুখে! বিরোধী জোটের সঙ্গে তুলনা জঙ্গিগোষ্ঠী ‘সিমি’র

মোদী বলেন, ‘‘জালিয়াতির দায়ে বদনাম হয়ে যাওয়া কোম্পানি যেমন নাম বদলে ফেলে, তেমনই নানা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ইউপিএ নাম বদলেছে। দুর্নীতি আর প্রতারণার ইতিহাস আড়াল করতে চেয়েছে।’’

PM Narendra Modi coins Quit India slogan of Mahatma Gandhi to take on opposition alliance INDIA

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
জয়পুর শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩ ১৫:০৫
Share: Save:

‘ইন্ডিয়া’-চাপে কি কিছুটা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে তাঁর আকাশচুম্বী আত্মবিশ্বাস? মঙ্গলবার সকালে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতার পরেই প্রশ্নটা উঠেছিল রাজনৈতিক পর্যবেক্ষদের একাংশের মধ্যে। বৃহস্পতির দুপুরে রাজস্থানে দলীয় জনসভায় মোদী যে ভাবে বিরোধী জোটকে নিশানা করতে মহাত্মা গান্ধীর ‘কুইট ইন্ডিয়া’ (ভারত ছাড়ো) স্লোগানের শরণাপন্ন হলেন, তাতে সেই জল্পনাই আরও জোরালো হল।

শেখাবতী অঞ্চলের সীকরে আয়োজিত ওই জনসভায় নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী ‘সিমি’ (স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া)-র তুলনা টেনেছেন। মনে করিয়ে দিয়েছেন, ১০ মাস আগে তাঁর সরকার ‘বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন’ (ইউএপিএ)-এ যে ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’ (পিএফআই)-কে নিশানা করেছে, সিমি তারই পূর্বসুরি। দু’ক্ষেত্রেই ‘ইন্ডিয়া’ নাম রয়েছে জানিয়ে মোদীর মন্তব্য ‘‘বিরোধী জোটের নামের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে পাপ।’’ কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলে ভারতের উপর হামলা চালানোর জন্যই ওই সংগঠন তৈরি হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি!

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকালে সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়ান্স)-র সঙ্গে তুলনা করেছিলেন জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’ এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’-র সঙ্গে। তুলেছিলেন ভারত দখলকারী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রসঙ্গও। তিনটি ক্ষেত্রেই ‘ইন্ডিয়া’ নাম রয়েছে বলে জানিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করেন তিনি। মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ (ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস)-এ ‘ইন্ডিয়া’র উপস্থিতিও।

বিরোধী জোটের ধারাবাহিক দাবি সত্ত্বেও এখনও সংসদের বাদল অধিবেশনে মণিপুরের তিন মাসের হিংসাপর্ব এবং নারী নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দেননি তিনি। মণিপুরে গত ৩ মে থেকে শুরু হওয়া হিংসায় প্রায় দু’শো মানুষের মৃত্যু এবং ৬০ হাজার গৃহহীন হওয়ার ঘটনার পরেও সে রাজ্যে যাননি। এমনকি, ৭৭ দিন পরে গত বৃহস্পতিবার মণিপুর নিয়ে দীর্ঘ নীরবতা ভেঙেছেন তিনি। অধিবেশনের সূচনার আগে সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে মণিপুর নিয়ে দুঃখপ্রকাশের পাশাপাশি তুলেছিলেন রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, বাংলায় নারী নির্যাতনের অভিযোগ।

মণিপুরে হিংসাপর্ব শুরুর পরে এই নিয়ে দ্বিতীর বার রাজস্থান সফরে এলেন তিনি। চলতি বছরের শেষেই মরুরাজ্যে বিধানসভা ভোট। তাই সে রাজ্যের প্রতি মোদীর এই ‘উৎসাহ’ বলে অভিযোগ বিরোধীদের। বৃহস্পতিবার বিজেপির সভায় মণিপুর প্রসঙ্গে কিছু না বললেও কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে মহিলাদের উপর নির্যাতনের ঘটনা, গোষ্ঠীহিংসা, দুর্নীতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন মোদী। রাজস্থানের মা-বোনেদের সম্ভ্রম রক্ষায় রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন।

নয়া বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ সম্পর্কে মোদী বলেন, ‘‘জালিয়াতির দায়ে বদনাম হয়ে যাওয়া কোম্পানি যেমন নাম বদলে ফেলে, তেমনই নানা দুর্নীতি অভিযুক্ত ইউপিএ নাম বদলেছে। দুর্নীতি আর প্রতারণার ইতিহাস আড়াল করতেই বদলানো হয়েছে নাম।’’ দেশবিরোধী শক্তি যে কৌশলে ভারতকে দুর্বল করতে চায়, ‘ইন্ডিয়া’-ও সেই কৌশল নিচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে আবার ব্রিটিশ ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’র প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘ওঁরাই (বিরোধীরা) গালওয়ানে শহিদ ভারতীয় সেনার শৌর্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’-এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন।’’

সত্তরের দশকে কংগ্রেসের স্লোগান ‘ইন্দিরা (গান্ধী) ইজ ইন্ডিয়া’-কেও কটাক্ষ করেন তিনি। সেই সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধীর স্লোগানের প্রতিধ্বনী করে বলেন, ‘‘দুর্নীতি ‘কুইট ইন্ডিয়া’, পরিবারতন্ত্র ‘কুইট ইন্ডিয়া’, তোষণের রাজনীতি ‘কুইট ইন্ডিয়া’। মহাত্মা গান্ধীর ‘কুইট ইন্ডিয়া’ স্লোগানই ভারতকে বাঁচাতে পারে।’’ মোদীর বক্তব্যের সমালোচনা করে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শঙ্কায় ভুগছেন। মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে তাই সংসদকে এড়িয়ে যাচ্ছেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE