(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং নীতীশ কুমার (ডান দিকে) । —ফাইল চিত্র।
সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলাকালীনই সোমবার বিহারে জাতসমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করে দিল নীতীশ কুমার সরকার। আর তার পরেই নাম না করে বিহারের ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকারের উদ্দেশে তোপ দাগলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীরা জাতের নামে দেশকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিতে চাইছে।’’ সেই সঙ্গে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে বিজেপির সভায় তাঁর মন্তব্য, ‘‘বর্ণের মাধ্যমে বিভাজনের চেষ্টা চালানো পাপ।’’
সোমবার প্রকাশিত বিহারের জাতসমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, সে রাজ্যে বর্তমান অন্যান্য অনগ্রসর গোষ্ঠী (ওবিসি)-র সংখ্যা ৬৩ শতাংশ। কেন্দ্র এবং বিহার-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে সরকারি চাকরি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ওবিসিদের জন্য এখন ২৭ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু ওবিসিদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ পেরিয়ে যাওয়ায় এ বার আরও বেশি সংরক্ষণের দাবি উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। বস্তুত, সোমবার দুপুরে রিপোর্ট প্রকাশের পরেই নীতীশ মঙ্গলবার এ নিয়ে আলোচনার জন্য সর্বদল বৈঠকের ডাক দিয়েছেন। সেখানেই ওবিসি সংরক্ষণ বাড়ানোর বিষয়ে প্রস্তাব নেওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
লোকসভা ভোটে বিষয়টি বিহারের জেডিইউ-আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের মহাগঠন্ধনের প্রচারের অন্যতম বিষয় হয়ে উঠতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা। সোমবার প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে ৬৩ শতাংশ ওবিসির মধ্যে ৩৬ শতাংশ অতি অনগ্রসর (ইবিসি) এবং ২৭ শতাংশের সামান্য বেশি সাধারণ অনগ্রসর গোষ্ঠীর। এ ছাড়া বিহারে প্রায়ে সাড়ে ১৯ শতাংশ তফসিলি জাতি এবং ১.৬৮ শতাংশ তফসিলি জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষ রয়েছেন বলে ওই রিপোর্ট জানাচ্ছে। অসংরক্ষিত (জেনারেল) শ্রেণির বাসিন্দা সাড়ে ১৫ শতাংশের সামান্য বেশি।
গত নভেম্বরে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য সরকারি চাকরি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট সিলমোহর দেওয়ার পরেই দেশ জুড়ে জাতভিত্তিক জনগণনার দাবি তুলেছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ। বিহারে জেডি(ইউ)-আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার দ্রুত শুরু করে জাতগণনা। গত ৬ জুন নীতীশ সরকার জাতগণনার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। এর পর বিহার সরকারের সেই পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল পটনা হাই কোর্টে।
আবেদনকারী পক্ষের দাবি ছিল, নীতীশ সরকারের এই পদক্ষেপ ‘বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক’। এই পদক্ষেপ সংবিধানের মৌলিক অধিকার এবং ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের (সমতা এবং সাম্যের অধিকার) পরিপন্থী বলে অভিযোগ ছিল আবেদনকারীদের। তাঁদের দাবি ছিল, জাতগণনার রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং চাকরিতে ওবিসির জন্য আসন বাড়লে অসংরক্ষিত (জেনারেল) আসন আরও কমার সম্ভাবনা। সে ক্ষেত্রে মেধার উপর আঘাত আসবে বলে অভিযোগ জাতগণনার বিরোধী জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারীদের। কিন্তু পটনা হাই কোর্ট শেষ পর্যন্ত ওই যুক্তি মানেনি। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে বিবেচনাধীন।
প্রসঙ্গত, বিহারে জাতগণনার প্রথম পর্ব ৭ থেকে ২১ জানুয়ারি হয়েছিল। ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় পর্ব ১৫ মে পর্যন্ত চলার কথা ছিল৷ কিন্তু তার আগেই গত ৪ মে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল পটনা হাই কোর্ট। কিন্তু গত ১ অগস্ট জাতসমীক্ষার বিরুদ্ধে পটনা হাই কোর্টে যে জনস্বার্থ মামলাগুলি দায়ের হয়েছিল, তা খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রন এবং বিচারপতি পার্থসারথির বেঞ্চ। এর পরেই শুরু হয় জাতগণনার দ্বিতীয় পর্ব। সেই রিপোর্টই সোমবার প্রকাশ্যে এসেছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে রিপোর্ট প্রকাশে আসার পর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কার্যত ওবিসি সংরক্ষণ বাড়ানোর দাবি সমর্থন করে বলেন, “যাঁর যত সংখ্যা তাঁর ততটাই অধিকার পাওয়া উচিত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy