Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জাতীয়তাবাদ নিয়ে কট্টর পথ এড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

বিহার ভোটের আগে সংরক্ষণ নীতি পর্যালোচনার দাবি তুলেছিলেন মোহন ভাগবত। আর পাঁচ রাজ্যে ভোটের আগে আজ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়ে বললেন, ‘‘আমি যখন আছি, তখন সংরক্ষণ নীতিতে কোনও বদল হবে না।’’

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৫
Share: Save:

বিহার ভোটের আগে সংরক্ষণ নীতি পর্যালোচনার দাবি তুলেছিলেন মোহন ভাগবত। আর পাঁচ রাজ্যে ভোটের আগে আজ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়ে বললেন, ‘‘আমি যখন আছি, তখন সংরক্ষণ নীতিতে কোনও বদল হবে না।’’ আজ অম্বেডকর-স্মারক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে নিজেকে ‘অম্বেডকরের ভক্ত’ বলেও দাবি করেছেন মোদী।

গত কাল দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে অরুণ জেটলি জাতীয়তাবাদ এবং দেশভক্তির কথা বললেও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, তাঁর অগ্রাধিকার উন্নয়ন, উন্নয়ন এবং উন্নয়ন।

জেএনইউ-কাণ্ডে কানহাইয়া বিরোধী অভিযান, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার ঘটনায় স্মৃতি ইরানির পাল্টা উগ্র জাতীয়তাবাদ আর আজ প্রধানমন্ত্রী? মেলাবেন তিনি মেলাবেন!

বিজেপি সূত্র বলছে, কানহাইয়া কাণ্ডে মোদী, অমিত শাহ তথা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করেছিলেন, আরও উগ্র জাতীয়তাবাদী লাইন নিয়ে এগোনো প্রয়োজন। তাতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে মেরুকরণ হলেও তার ফায়দা তুলতে পারবে বিজেপি। তখনই অবশ্য লালকৃষ্ণ আডবাণী শুধু নন, বেশ কিছু মোদী ঘনিষ্ঠ নেতাও আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন, বিহার নির্বাচনে যে মেরুকরণ ব্যর্থ হয়েছে, তা এখন সফল হবে কী করে? অমিত শাহের পাল্টা যুক্তি ছিল, বিহারে হিন্দুত্ব যে কাজ করেনি, তা নয়। কিন্তু তার চেয়েও বেশি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল লালু-নীতীশের জাতপাতের সমীকরণ। ফলে অঙ্কের সুবাদে ওদের জয় হয়েছে। তাই মেরুকরণের রাজনীতিকে বর্জন করা অনুচিত।

সংসদের বাজেট অধিবেশনে স্মৃতি ইরানি সরব হয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। তাই দেখে দলের বহু নেতা স্মৃতিকে অনুসরণ করে একই ভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে মোদী-অমিত শাহের ‘অনুগত সৈনিক’ সাজার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, স্মৃতি সংসদে দাঁড়িয়ে যা বলেছেন, সেটিই যথেষ্ট। এই নিয়ে প্রচারের প্রয়োজন নেই। বিশেষত ২৫ এপ্রিল থেকে ফের সংসদের অধিবেশন বসবে। সেখানে মোদী চাইছেন অন্তত কিছু বিল পাশ হোক। অতএব উগ্র জাতীয়তাবাদী কৌশলে এ বারে এসেছে ‘ধীরে চলো’ নীতি।

মোদী লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন উন্নয়নের স্লোগান তুলে। আর এখন সঙ্ঘ পরিবার যে ভাবে উগ্র জাতীয়তাবাদকে মূলধন করতে চাইছে, তাতে প্রশ্ন উঠেছে, এটি কী তবে দ্বৈত রণকৌশল? এক দিকে দল জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবে জাতীয়তাবাদের জয়ধ্বনি দিচ্ছে। অন্য দিকে মোদী বলছেন, উন্নয়নই তাঁর প্রধান আলোচ্যসূচি। তবে কি ভোটের জন্য দল জাতীয়তাবাদকে অস্ত্র করবে আর মোদী নিজেকে ভাল প্রশাসক হিসেবে তুলে ধরার জন্য উন্নয়নের স্লোগান দেবেন? মোদী-ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, বিজেপি সর্বদাই মেকি ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদকে তুলে ধরে শক্তিশালী হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র গঠনের কথা বলেছে। কিন্তু কানহাইয়া কাণ্ডের পর এটি স্পষ্ট, ভারতের মতো বহুত্ববাদী সমাজে রাষ্ট্রের পাশাপাশি নাগরিক সমাজেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সরকার সঙ্কীর্ণতাবাদী, এই ছবিটা মোদী শুধু নন, সামগ্রিক ভাবে বিজেপির জন্যও ভাল নয়।

অবশ্য এ ব্যাপারে হুট করে লাইন বদলে রাজনৈতিক ডিগবাজিতে রাজি নন মোদী। কারণ তাতে প্রতিপক্ষের সমালোচনার মুখোমুখি হতে হবে তাঁকেই। তাই এক দিকে অমিত শাহ বলছেন, বাক্‌স্বাধীনতার নামে জাতীয়তাবাদ বিরোধিতাকে সহ্য করা হবে না। অন্য দিকে মোদী ক্রমশ উন্নয়নের স্লোগানকেই সামনে আনছেন। বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়েও আডবাণীর নেতৃত্বে রামমন্দির আন্দোলন চলেছে। কিন্তু বাজপেয়ী তা থেকে নিজেকে দূরে রেখে ‘দ্বিতীয় নেহরু’ ভাবমূর্তি তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। গোধরা কণ্টকিত মোদীর প্রথম থেকে সে সুযোগ ছিল কম। কিন্তু তিনিও ধীরে ধীরে সেই পথেই চলতে চাইছেন। তা সে পাকিস্তানের সঙ্গে মৈত্রী হোক বা দলিত সংরক্ষণ, বা উন্নয়ন।

বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘নভেম্বর বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক, এ কথা এখনও সিপিএমের প্রস্তাবে লেখা হয়। বাবরি মসজিদ ভাঙার পর থেকে রামমন্দির আন্দোলন কার্যত মৃত। কিন্তু এখনও রামমন্দির নির্মাণের কথা বিজেপির লিখিত কর্মসূচি। তাই জাতীয়তাবাদ নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব এবং কিছু হইচই হলেও ধীরে ধীরে উন্নয়নের স্লোগানেই ফিরতে চান মোদী।’’

অন্য বিষয়গুলি:

conservative nationalism PM Modi avoid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE