ফাইল চিত্র।
অতিরিক্ত অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্টের পথে এগোনোর ভাবনাটাই তাবড় তাবড় পর্বতারোহীকে কাঁপিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। সেখানে বাংলারই একটি মেয়ে যে তা ভাবতে পেরেছে এবং সেই পথে এগিয়েছে— এটাই একটা বিরাট প্রাপ্তি।
এরকম অভিযানে এত বেশি খরচের ব্যাপার থাকে যে, সহজে এই ঝুঁকিটা কেউ নিতে চায় না। অথচ পিয়ালি বসাক সেটাই করেছে। অক্সিজেন ব্যবহারের প্রশ্নে জোড়া-শৃঙ্গ অভিযান অনিশ্চিত হতে পারার চোখরাঙানিকে অগ্রাহ্য করে নিজ সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে। চূড়ান্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছে। শেষ পর্যন্ত খারাপ আবহাওয়ার কারণে ব্যালকনি থেকে সামিটে পৌঁছতে অতিরিক্ত অক্সিজেন নিতে হলেও তাতে পিয়ালির কৃতিত্ব এতটুকু খাটো হচ্ছে না। ওর এই সাফল্য তাই এক নাছোড় পর্বতারোহীর হার না মানা মানসিকতার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
২০১৫ সালে প্রথম এভারেস্টে গিয়েও ভূমিকম্পের কারণে অভিযান বাতিল হওয়ার পরে বুঝেছিলাম, স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পরে তাকে ফের নতুন করে ভাবতে কতটা দম লাগে। পিয়ালি সেটাও করে দেখাল। ওর প্রথম এভারেস্ট অভিযান অসফল হওয়ার পরেও যে ও হাল ছাড়েনি, বরং নতুন উদ্যমে সেই পথে ফিরেছে— এটা শিক্ষণীয়। তাই আজ এভারেস্টের শীর্ষ পৌঁছনো বাঙালি মহিলাদের নামের তালিকায় কুঙ্গা ভুটিয়া, শিপ্রা মজুমদার, ছন্দা গায়েন, টুসি দাসের পরে জুড়ে যাচ্ছে পিয়ালির নামও।
২০১৬ সালে এভারেস্টে ৮৮০০ মিটার উচ্চতায় আমার অক্সিজ়েন মাস্ক কাজ করেনি, প্রায় আধ ঘণ্টা অক্সিজ়েন ছাড়া কাটিয়েছিলাম। ডেথ জ়োনে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা এক তৃতীয়াংশ হয়ে যাওয়ায় তাতে এক এক জনের শরীর এক এক রকম ভাবে আচরণ করে থাকে। আমার যেমন ঘুম পাচ্ছিল, এক চোখে কিছুক্ষণ দেখতে পাইনি। তাই জানি, ব্যাপারটা কতটা কঠিন। বেঁচে ফিরে আসতে তাই শেষ পর্যন্ত পিয়ালির অতিরিক্ত অক্সিজেন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এক্কেবারে সঠিক। কারণ বড় পর্বতারোহীরা বলেন, ‘সামিটে পৌঁছনোটা ঐচ্ছিক, ফিরে আসাটা বাধ্যতামূলক।’
সাধারণত এভারেস্টে ক্যাম্প ৩ থেকেই অক্সিজ়েন মাস্কের ব্যবহার শুরু করেন আরোহীরা। আর একবার শুরু করলে উচ্চতার সঙ্গে শরীরের স্বাভাবিক ভাবে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বন্ধ হয়ে যায়। তাই পিয়ালির পক্ষে এ বার বিনা অক্সিজেন সিলিন্ডারে লোৎসে আরোহণ করা কিছুটা শক্ত। সাধারণত ক্যাম্প ৩ বা ৪ থেকেই সোজা লোৎসে পাড়ি দেওয়া যায়, তবে সেটা পিয়ালি করবে কি না, তা ওর শারীরিক অবস্থার উপরে নির্ভর করছে।
তবে পিয়ালির সাফল্য ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল, দক্ষতা থাকলেও কতটা আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় এ রাজ্যের পর্বতারোহীদের। বাংলার আরোহীরা কি আরও একটু সরকারি সাহায্যের আশা করতে পারি না? পিয়ালির মতো প্রতিভাকে চিনে নিয়ে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবা উচিত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy